মেঘন আপাতত চার দিনের জন্য গোয়ায়।
ছোট পর্দা থেকে সিরিজ। এ বার বড় পর্দার অভিনেত্রী মেঘন চক্রবর্তী। ছোট্ট মেয়েটা কি এক লাফে বড় হয়ে গেল? সব ঠিক থাকলে এপ্রিলে শ্যুট শুরু তমাল দাশগুপ্তের বড় ছবি ‘দয়াময়ীর কথা’র। তাতেই ‘দয়াময়ী’ হয়েছে সে। সুনন্দা শিকদারের আত্মজীবনী ‘দয়াময়ীর কথা’ অবলম্বনে ছবিটি তৈরি হচ্ছে। পাঁচের দশকের অবিভক্ত বাংলাদেশ গল্পের পটভূমিকায়। মেঘন ছাড়াও রয়েছেন গৌতম হালদার, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋ সেন, অলকানন্দা রায় বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমিত সমাদ্দার প্রমুখ। প্রযোজনায় শিবপ্রসাদ প্রামাণিক।
মেঘন আপাতত চার দিনের জন্য মা-বাবার সঙ্গে গোয়ায়। বাবার অফিসের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পৌঁছে গিয়েছে সমুদ্রে ঘেরা ছোট্ট রাজ্যে। খুশি গলায় আনন্দবাজার অনলাইকে জানিয়েছে, হঠাৎ বেড়ানোর সুযোগ পেয়েই মনটা খুব ভাল হয়ে গিয়েছে তার। সারা ক্ষণ অতিমারি আর ঘরবন্দি থাকতে কার ভাল লাগে? আবার ভিড়ে যেতেও ভয় করে। যদি তার বাবা করোনা সংক্রমণে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন! তাই সমুদ্রের পাশে আসতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। এখন পর্যটকদের ভিড় নেই। অনেক ক্ষণ সমুদ্র তটে বসে বালি দিয়ে বাড়ি বানাতে পারছে সে।
অভিনয় করতে পারছে না বলেও মাঝেমধ্যে মনখারাপ করছে তার। তার পরেই ঠিক বড়দের মতো জবাব দিয়েছে, ‘‘ধারাবাহিকের পরে সিরিজ ‘সেই যে হলুদ পাখি’ করে ফেললাম। বেশ রহস্য-রোমাঞ্চ ছিল তাতে। তার পরেই শুনলাম বড় পর্দায় অভিনয় করব। বাঙাল ভাষা বলতে হবে। আমি ছোট-বড় পর্দা, সিরিজ এত তফাৎ বুঝি না। বাঙাল ভাষা বলতে হবে শুনে ভেবেছিলাম, আবার বেশ রোজ কাজে যাব। কাজের ফাঁকে খেলাধুলো করব সবার সঙ্গে। পরে শুনলাম এপ্রিল মাস থেকে কাজ শুরু হবে। তত ক্ষণ হা-পিত্যেশ অপেক্ষা।’’ কী ভাবে নিজেকে বড় পর্দার জন্য প্রস্তুত করছে ধারাবাহিক ‘প্রথমা কাদম্বিনী’র ছোট্ট ‘বিনি’? মেঘনের বাবা জানিয়েছেন, ‘বসে থাকছি’ বললেও আদতে বসে নেই তাঁর ছোট মেয়ে। মন দিয়ে বাঙাল ভাষা শিখছে। আর সুযোগ পেলেই কখনও ফোনে পরিচালক কাকুর থেকে কখনও মা-বাবার মুখ থেকে চিত্রনাট্য, ছবির গল্প শুনে নিজের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করছে।
আনন্দবাদার অনলাইন কথা বলেছিল ছবির পরিচালক তমালের সঙ্গেও। কী দেখে মেঘনকে মুখ্য চরিত্রের জন্য বাছলেন তিনি? তমালের দাবি, ভাসা ভাসা চোখ আর এক ঢাল চুল। যেটা তাঁর ছবির জন্য অতি জরুরি। জানিয়েছেন, ১৫ জন শিশু শিল্পীর পরীক্ষা নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মেঘনকেই সেরা মনে হয়েছে। ‘‘ওর মধ্যে একটা সহজাত ব্যাপার আছে। এর আগের ধারাবাহিকে বাঙাল ভাষায় কথা বলেছে। ফলে, ওটাও ও দ্রুত ধরে নিতে পারবে। সব মিলিয়ে তাই মেঘন’’, বলেছেন তমাল। তবে ছবিতে ‘বিনি’র মতো কাপড় পরতে হবে না মেঘনকে। লেখক সুনন্দা পরিচালককে জানিয়েছেন, ওই সময়ে তাঁরা কাপড় কেটে বানানো ঢোলা ফ্রক আর ইজের পরতেন। সেই পোশাক পরবে শিশুশিল্পী।
দয়াময়ীর বাড়িতে থাকতেন মুসলিম যুবক মাজম। তিনি ওই শিশুর ‘মাজম দাদা’। তাঁর চরিত্রে দেখা যাবে রাহুলকে। ঋ হবেন ‘মোতি ভাবী’। ছবিতে ময়মনসিংহ গীতিকা, বাংলাদেশের ভাটিয়ালি, লোকগান, ছড়ার গান শোনা যাবে। গানের দায়িত্বে থাকবেন কল্যাণ সেন বরাট।
প্রথমে ঠিক ছিল, গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে ছবির শ্যুট। ইয়াসের তাণ্ডব বাধা দেয় সেই পরিকল্পনায়। তমালের কথায়, ‘‘পুরোটাই বাইরে শ্যুট হবে। ২৪ পরগণার টাকি, বসিরহাট, মিনাখাঁ, দে গঙ্গা-র পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের দিনহাটাতে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে ফের অতিমারির প্রত্যাবর্তন। ফলে, শ্যুট পিছিয়ে এপ্রিল মাসে। ইচ্ছে, সমস্ত অভিনেতাদের নিয়ে মহড়া দিয়ে নেব। মেঘনকে বারেবারে চিত্রনাট্য পড়ে শুনিয়েছি। কারণ, ও তো খুবই ছোট।’’ পরিচালকের খুব ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশে গিয়ে শ্যুট করার। কিছু নিয়ম-নীতির কারণে সেই ইচ্ছে পূরণ করতে পারেননি।
ছোট্ট মেয়ে দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে। বড় পর্দার অভিনেত্রী হচ্ছে সে। কী অনুভূতি ছোট্ট মেঘনের মা-বাবার? অনেকটা আনন্দ আর ভয় মিশিয়ে জবাব দিয়েছেন মেঘনের বাবা, ‘‘তমাল বলেছেন দেশ-বিদেশের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নাকি ছবিটি যোগ দেবে। মেঘনের তো সে সব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমাদের হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। ওইটুকু ছোট্ট মেয়ে। সব গুছিয়ে করে উঠতে পারবে তো?’’