বিক্রম ঘোষের সুরে, শ্রীজাতের কথায় নন ফিল্ম বাংলা গান রেকর্ড করলেন মহালক্ষ্মী আইয়ার। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: আপনি এত সুন্দর বাংলা বলতে পারেন। কী ভাবে শিখলেন?
মহালক্ষ্মী: আমার দিদির স্বামী প্রবাসী বাঙালি। ওঁর পূর্বপুরুষ কলকাতায় থাকতেন। ওঁর সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলি বাড়িতে। একটু একটু করে কথা বলতে বলতে ভাষাটা শেখার চেষ্টা করেছি। যে কোনও ভাষা শিখতে আমার ভাল লাগে। বাংলা ভাষা আমার খুবই মিষ্টি লাগে। কতটা ভাল বাংলা বলতে পারি, তা আমি জানি না। তবে বুঝতে পারি স্পষ্ট।
প্রশ্ন: সম্প্রতি অনেক দিন পর বাংলায় গান করলেন। কী রকম অভিজ্ঞতা?
মহালক্ষ্মী: বিক্রম ঘোষ সঙ্গীতায়োজন করেছিলেন। আমার সঙ্গে শান-ও গেয়েছেন। গানটির কথা শ্রীজাতের। বিক্রমদার সুরে এটা আমার রেকর্ড করা প্রথম গান । এর আগে আমি বহু শো করেছি। এই প্রকল্পে দুটো গান ছিল। একটা এখন প্রকাশিত হচ্ছে। বিক্রমদা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত যেমন ভাল জানেন, তেমনই লোকসঙ্গীতও। এই গানে এই দুই ধারার মিশেল ঘটেছে। গানটির মধ্যে দিয়ে বাঙালিয়ানার উদ্যাপন করা হয়েছে। গানের কথা, সুর এবং উপস্থাপন— সব কিছুর মধ্যে দিয়েই ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে। শানের সঙ্গে আগে আমি বহু গান রেকর্ড করেছি। হিন্দি, গুজরাতি, বাংলা। তবে নন ফিল্ম বাংলা গান এই প্রথম।
ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: ‘দিল সে’ ছবির ‘অ্যায় আজনবি’ গানের ছোট্ট একটা অংশে আপনার কণ্ঠ ব্যবহৃত হয়েছে। এই গানটি ভীষণ জনপ্রিয় হয়। গানটি তৈরি হওয়ার সময়ের গল্প যদি বলেন।
মহালক্ষ্মী: এআর রহমানস্যরের সুরে এটা আমার প্রথম গান। স্টুডিয়োতে যেতেই উনি বললেন, এই গানটা কিন্তু উদিত নারায়ণের জন্য। এতে তোমার একটা ছোট পার্ট আছে। আমি বলেছিলাম, আমার কোনও সমস্যা নেই। আমি একটা সুযোগ খুঁজছিলাম, তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। রেকর্ডিংয়ের সময় ‘পাখি পাখি পরদেশি’ বাণীটা আমার হাতে দেন। বলেন, তুমি যত রকম ভাবে পারো, এটা গেয়ে যাও। আমি গাইতে থাকলাম। ৫০টা টেক হয়েছিল। ১ ঘণ্টা ধরে আমি ওইটুকু অংশ নানা ভাবে গেয়েছিলাম। তার মধ্যে থেকে বেছে বেছে উনি চয়ন করে নেন। সেটাই মূল গানে এখন শুনতে পাওয়া যায়। এর পরেও আমি এআর রহমানস্যরের সুরে অনেক গান করেছি। তবে সবচেয়ে পছন্দের তালিকায় রয়েছে এই গানটি।
প্রশ্ন: এআর রহমানের কাজের বৈশিষ্ট্য কী?
মহালক্ষ্মী: ওঁর স্বতঃস্ফূর্ততা। খুব গুণী মানুষ। খুবই সাধারণ জীবনযাপন করেন। নিজেও বলে থাকেন, উনি যা কিছু করছেন, সবই উপরওয়ালার থেকেই পেয়েছেন। ওঁর এই সহজ-সরল জীবনেরই ছাপ পাওয়া যায় সুরেও। অন্যের থেকে ওঁকে আলাদা করেছে ওঁর স্বতঃস্ফূর্ততা। উনি স্টুডিয়োয় বসে ওই মুহূর্তে এমন কিছু সৃষ্টি করতে পারেন, যা অন্য অনেকের থেকে ওঁকে আলাদা করে। প্রথাগত ভাবে যা যা করার উনি তা করেন। কিন্তু তার সঙ্গে উনি এমন কিছু করেন, যা ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি’। এটা ওঁর বৈশিষ্ট্য।
প্রশ্ন: উনি তো অনেক নতুন কণ্ঠের সঙ্গে পরিচয়ও করিয়েছিলেন।
মহালক্ষ্মী: একদমই তাই। ওঁর আর একটা বৈশিষ্ট্য হল, নতুন কণ্ঠের সঙ্গে মানুষের পরিচয় করানো। আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে ইন্ডাস্ট্রিতে এত কণ্ঠ ছিল না। এত ধরনের নতুন কণ্ঠের সঙ্গে পরিচয় করানো ওঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
প্রশ্ন: আপনি তো শঙ্কর-এহসান-লয়, বিশাল-শেখরের মতো সুরকারের সুরে গান করেছেন। প্রত্যেকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আলাদা।
মহালক্ষ্মী: প্রত্যেকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা, প্রত্যেকের কাজ করার পদ্ধতি আলাদা। শঙ্কর-এহসান-লয়ের কথা ধরুন। তিন জন মানুষ। কিন্তু যখন সুর করেন, তখন সেটা শুনে মনে হয়, এক জনই সেই সুর করেছেন। তার মানে, ওঁরা তিন জন মানুষ হলেও তিন জনের ভাবনাটা একই রকম পথ ধরে চলে। বিশাল-শেখরের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। দু’জনেই ভাল গান করে। মজার ব্যাপার, দু’জন দু’ধরনের গানবাজনার সঙ্গে যুক্ত। বিশাল রক গায়। আর শেখর গজল গায়। কিন্তু যখন একসঙ্গে সুর করে, সেটা তখন একেবারে অন্য ধরনের হয়। নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মিশেল ঘটে সুরে। তাই প্রত্যেক সুরকারের নিজস্ব স্টাইল আছে। নিজেরা যা পছন্দ করেন, তার সঙ্গে নিজেদের ভাবনাচিন্তা কী, তা থেকে সৃষ্টি হয় তাঁদের সুর।