কৈশোরে তৈরি করেছিলেন নিজের রেকর্ড সংস্থা। পরে অবশ্য সেটি বিক্রি করে দেন। এর পর সরে আসেন ছবি প্রযোজনায়। সেখানে মিডাস-স্পর্শে পর পর সাফল্য। কিন্তু কিছুটা হলেও এ বার হোঁচট খেলেন মধু মন্তেনা।
সর্বভারতীয় একটি ইংরেজি নিউজ চ্যানেলের খবর, নীনা গুপ্তর প্রাক্তন জামাইকে ডেকে পাঠাবে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো বা এনসিবি।
ওই নিউজ চ্যানেলের খবর অনুযায়ী, বুধবারই এনসিবি তলব করতে পারে জাতীয় পুরস্কারজয়ী প্রযোজক মন্তেনাকে। সুশান্তকাণ্ডের তদন্তে মাদকযোগে উঠে এসেছে রামগোপাল বর্মার মামাতো ভাই মধু মন্তেনার নাম।
ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত নাম মন্তেনা এখন ‘কওয়ান ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’-র কর্ণধার। তাঁর সংস্থায় কাজ করেন জনৈক করিশ্মা। কাজের সূত্রেই করিশ্মার সঙ্গে কথা হত দীপিকার। কারণ সংস্থার হয়ে দীপিকার ম্যানেজার ছিলেন করিশ্মা। বলিউডের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক তারকাদের জন্যেও কাজ করে মন্তেনার সংস্থা।
কিন্তু কী ভাবে এই সংস্থার কর্মী করিশ্মা এবং তারকা দীপিকার নাম জড়িয়ে গেল মাদককাণ্ডে? সম্প্রতি কয়েক জন বলি-তারকার হোয়াটস্অ্যাপ চ্যাট এনসিবি-র হাতে আসে। সেখানে ‘ডি’ এবং ‘কে’ আদ্যাক্ষরের দু’টি নামের কথা জানা যায়। মাদক প্রসঙ্গে তাঁদের মধ্যে একাধিক বার কথা চালাচালি হয়েছে বলে দাবি করে এনসিবি।
বলিউডের একাংশের দাবি, ‘ডি’ আসলে দীপিকা পাড়ুকোন। আর ‘কে’ হচ্ছেন করিশ্মা। ‘কে’কে বুধবার ডেকে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ‘ডি’ অর্থাৎ দীপিকাকেও সমন পাঠানো হবে বলে খবর। সুশান্তের প্রাক্তন ট্যালেন্ট ম্যানেজার জয়া সাহার কাছ থেকেই করিশ্মার নাম তদন্তকারীদের কাছে এসেছে বলে জানা গিয়েছে।
করিশ্মার সূত্রেই সংস্থার মালিক মন্তেনার সঙ্গে এনসিবি কথা বলবে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এই সংস্থার অনেক আগে থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত নাম মধু মন্তেনা। ২০০৩-এ তাঁকে প্রযোজক হিসেবে প্রথম বার পায় বলিউড। তেলুগু ছবি ‘কার্তিক’ প্রযোজনা করেছিলেন তিনি।
২০০৮-এ ‘গজনি’ দিয়ে প্রথম হিন্দি ছবি প্রযোজনা। আগমনেই বাজিমাত করেন মন্তেনা। একই বছরে বক্স অফিসে পর পর সুপারহিট হয় আমির খানের ‘গজনি’ এবং তার পর রামগোপাল বর্মা পরিচালিত তারকাখচিত ছবি ‘রান’।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি ‘অটোগ্রাফ’-এর সহ-প্রযোজক ছিলেন মন্তেনা। ছবির নায়িকা নন্দনা সেন ছিলেন তাঁর বান্ধবী।
২০১৩ থেকে ফ্যান্টম ফিল্মস-এর ব্যানারে ছবি প্রযোজনা করছেন মন্তেনা। তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য সফল ছবির নাম। ‘লুটেরা’, ‘কুইন’, ‘এনএইচ টেন’, ‘বম্বে ভেলভেট’, ‘শানদার’, ‘মুক্কাবাজ’, ‘হ্যাইজ্যাক’, ‘মনমর্জিয়াঁ’, ‘সুপার থার্টি’-সহ বহু জনপ্রিয় ছবির নেপথ্য কারিগর তিনি।
বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ করা ছবির পাশাপাশি মন্তেনা উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু অন্যস্বাদের ছবিও। ‘মসান’, ‘উড়তা পঞ্জাব’, ‘রমন রাঘব ২.০’-র মতো ছবির প্রযোজক তিনি।
তিন বার জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে তাঁর ছবি। ২০১৫ সালে ‘কুইন’ সেরা হিন্দি ছবি হিসেবে পুরস্কৃত হয়। সে বছরই সেরা নবাগত পরিচালক বিভাগে সম্মানিত হয় ‘মসান’। পরের বছর সেরা গুজরাতি ছবি হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পায় ‘রং সাইড রাজু’।
তাঁর সংস্থা ‘ফ্যান্টম ফিল্মস’-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা হলেন অনুরাগ কশ্যপ, বিকাশ বহেল এবং বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে।
পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবির পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের ছবিও প্রযোজনা করেন মন্তেনা। এ ছাড়াও কাজ করেন কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট প্রোডাকশন এবং কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন নিয়েও।
৫০ দিনের মধ্যে মন্তেনা প্রযোজিত সাতটি ছবি মুক্তি পাওয়ায় রেকর্ড বইয়ে জায়গা পেয়েছেন তিনি প্রযোজক হিসেবে। এই সাতটির মধ্যে চারটি ছবির মুক্তির মাঝে ব্যবধান ছিল মাত্র আট দিন করে।
নীনা গুপ্ত এবং ভিভ রিচার্ডসের মেয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার মাসাবাকে ২০১৫ সালে বিয়ে করেছিলেন মন্তেনা। তবে চার বছর পরে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
তাঁদের ডিভোর্সের কারণ হিসেবে বেশ কিছু সম্ভাবনা গুঞ্জরিত হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। মধু মন্তেনার বিরুদ্ধে একাধিক সম্পর্কে থাকার অভিযোগ শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সে সব অভিযোগ উড়িয়ে দেন মাসাবা।
বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে অবশ্য নীনাকন্যার মুখে চিরদিনই কুলুপ। দাম্পত্য ভাঙলেও তাঁদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব অটুট, সে কথা জানাতে ভোলেননি মাসাবা। সুশান্ত মৃত্যু পরবর্তী মাদককাণ্ডে প্রাক্তন স্বামীর নাম উঠে আসা নিয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি মাসাবা।