Bengali Movie

সত্যজিতের সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন, মাধবীর নাম না করে ‘কষ্ট পাওয়ার’ কথা লেখেন বিজয়াও

বার বার তিনি বলেছেন, সত্যজিতের মতো অভিনয় দক্ষতা তিনি আর কোনও পরিচালকের মধ্যে দেখেননি। তাঁর ছবির চিত্রনাট্যই ছিল শেষ কথা। এর পর আর অভিনেতাদের বেশি কিছু করতে হত না, অভিমত মাধবীর। সব কিছুই করিয়ে নিতেন পরিচালক।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:৫০
Share:
০১ ১৮

মঞ্চে অভিনয় তাঁকে আকর্ষণ করত ছোটবেলা থেকেই। তবে প্রথম দিকে ছিল তা নিছক শখ। তখনও জানতেন না তিনিই বাংলা ছবির ভবিষ্যতের ‘চারুলতা’। বাংলা চলচ্চিত্রে নারীকেন্দ্রিক ছবির অন্যতম মুখ মাধবী মুখোপাধ্যায় ছিলেন প্রথম সারির সব পরিচালকের পছন্দের অভিনেত্রী।

০২ ১৮

মাধবীর জন্ম ১৯৪২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। শিশির ভাদুড়ি, অহীন্দ্র চৌধুরী, নির্মলেন্দু লাহিড়ী এবং ছবি বিশ্বাসের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে মঞ্চে কাজ করেছেন তিনি। ছবিতে আত্মপ্রকাশ শৈশবেই। ১৯৫৩ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি অভিনয় করেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র পরিচালিত ‘দুই বিয়ে’ ছবিতে। তখন অবশ্য তিনি মাধুরী।

Advertisement
০৩ ১৮

মাধুরী নামেই তিনি অভিনয় করেন তপন সিন্‌হার ‘টনসিল’ ছবিতে। এর পর ১৯৬০ সালে মুক্তি পায় মৃণাল সেনের ছবি ‘বাইশে শ্রাবণ’। এই ছবি থেকেই তাঁর নাম পাল্টে যায়। বিজয় চট্টোপাধ্যায় নতুন নাম দেন, ‘মাধবী’। তার পর এই নামেই তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রকে।

০৪ ১৮

‘বাইশে শ্রাবণ’ এবং ‘আজ কাল পরশু’ ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তিনি মাধবীকে সুযোগ দেন ‘মহানগর’ ছবিতে। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘অবতরণিকা’ ছোটগল্প অবলম্বনে তৈরি এই ছবিতে ‘আরতি’-র ভূমিকায় মাধবীর দৃপ্ত অভিনয় শুধু বাংলা ছবির নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সম্পদ।

০৫ ১৮

অনিল চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে মাধবীকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে ‘মহানগর’-এর গল্প। মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের বধূ আরতির অপটু হাতে লিপস্টিক পরার মধ্যেই ঘটে যায় নিঃশব্দ বিপ্লব। সংসারের প্রযোজনে চৌকাঠের বাইরে পা রাখেন আরতি। তাঁর হাত ধরেই আটপৌরত্ব দূর হয় বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের গৃহবধূদের।

০৬ ১৮

১৯৬৩ সালে ‘মহানগর’-এর পরের বছরই মুক্তি পায় ‘চারুলতা’। সত্যজিৎ রায়ের আর এক আইকনিক ছবিতে বাঙালির মনের মণিকোঠায় চিরস্থায়ী জায়গা করে নেয় চারুলতা এবং তাঁর হাতের দূরবীন।

০৭ ১৮

একাধিক সাক্ষাৎকারে মাধবী বার বার জানিয়েছেন, ‘চারুলতা’-ই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ছবি। চারুর মতো জটিল চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পেরে তাঁর ভাল লেগেছিল। অভিনয়জীবনের শুরুতেই ‘মহানগর’ এবং ‘চারুলতা’-র মতো নারীকেন্দ্রিক ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ তাঁর কাজের গতিপথ পাল্টে দিয়েছিল। মনে করেন মাধবী।

০৮ ১৮

সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতি এখনও অমলিন মাধবীর মনে। সত্যজিতের ইউনিট থেকে দু’জন এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। জানান, পরিচালক তাঁর সঙ্গ‌ে দেখা করতে চেয়েছেন। সে সময় মাধবী উত্তর কলকাতার বাসিন্দা। সত্যজিৎ থাকতেন দক্ষিণ কলকাতায়। অত দূর ট্যাক্সিভাড়া দিয়ে যেতে আপত্তি ছিল মাধবীর। কারণ, তিনি নিশ্চিত ছিলেন, তাঁকে খারিজ করে দেবেন পরিচালক।

০৯ ১৮

কিন্তু মাধবীর মা অনড়। তিনি মেয়েকে পাঠাবেনই। শেষ অবধি মায়ের কথাতেই মাধবী গিয়েছিলেন। দু’তিন বার সাক্ষাতের পরে তাঁর হাতেই চিত্রনাট্য তুলে দেন বিশ্ববরেণ্য পরিচালক। পরে তিনি বলেছিলেন, মাধবীর মধ্যে অভিনয়ের সহজাত গুণ আছে। তাঁকে বেশি শেখাতে হয় না। সহজেই তিনি সেরাটা উজাড় করে দেন পর্দায়।

১০ ১৮

পরিচালকের গুণমুগ্ধ মাধবীও। সাক্ষাৎকারে বার বার তিনি বলেছেন, সত্যজিতের মতো অভিনয় দক্ষতা তিনি আর কোনও পরিচালকের মধ্যে দেখেননি। তাঁর ছবির চিত্রনাট্যই ছিল শেষ কথা। এর পর আর অভিনেতাদের বেশি কিছু করতে হত না, অভিমত মাধবীর। সব কিছুই করিয়ে নিতেন পরিচালক।

১১ ১৮

সত্যজিৎ-মাধবীর সম্পর্কের গুঞ্জনও বাংলা ছবির অন্যতম অংশ। তাঁরা দু’জনে কোনও দিন এই গুঞ্জন নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে এই টানাপড়েন লুকিয়ে থাকেনি বিজয়া রায়ের কলমে। তিনি তাঁর আত্মজীবনী ‘আমাদের কথা’-য় লিখেছেন এই গুঞ্জন তাঁকে কষ্ট দিয়েছিল। তবে সেখানেও অভিনেত্রীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

১২ ১৮

১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় সত্যজিতের পরিচালনায় মাধবীর তৃতীয় তথা শেষ ছবি ‘কাপুরুষ মহাপুরুষ’। এর পর দু’জনকে আর একসঙ্গে কাজ করতে দেখা যায়নি। শুধু সত্যজিৎ রায়ই নন। মাধবী তাঁর অভিনয় প্রতিভার ছাপ রেখেছেন মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনাতেও।

১৩ ১৮

ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘সুবর্ণরেখা’-য় মাধবীর কালজয়ী অভিনয় আজও উজ্জ্বল দর্শকস্মৃতিতে। সমান্তরাল ছবির পাশাপাশি মাধবী সুরভিত করেছেন মূলধারার বাণিজ্যিক বাংলা ছবিকেও।

১৪ ১৮

উত্তমকুমারের বিপরীতে ‘অগ্নীশ্বর’, ‘ছদ্মবেশী’, ‘শঙ্খবেলা’ ছবিতে মাধবী নিজেকে মেলে ধরেছিলেন ছক ভাঙা সাবলীল অভিনয়ে। তাঁর কেরিয়ারে উল্লেখযোগ্য বাকি ছবি হল ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘সমান্তরাল’, ‘স্ত্রীর পত্র’, ‘বিন্দুর ছেলে’, ‘গণদেবতা’, ‘সাহেব’, ‘কলকাতা ৭১’, ‘চোখ’, ‘উৎসব’ এবং ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’।

১৫ ১৮

বড় পর্দার পাশাপাশি মাধবী সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন টেলিভিশনেও। ‘ইষ্টিকুটুম’, ‘হিয়ার মাঝে’, ‘কুসুমদোলা’, ‘নক্সীকাঁথার মাঠ’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে মাধবী দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন পরবর্তী প্রজন্মের কুশীলবদের সঙ্গে।

১৬ ১৮

অভিনেত্রী পরিচয়ের সঙ্গে মাধবী স্বচ্ছন্দ রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও। অভিনেত্রী এবং রাজনীতিক— তাঁর দু’টি পরিচয়ের মাঝে একটা অদৃশ্য লক্ষ্মণরেখা বিরাজ করে। যার দু’দিকের ছায়া এগিয়ে চলে সমান্তরাল ভাবে। কেউ কাউকে ঢেকে রাখে না। আবার ছাপিয়েও যায় না।

১৭ ১৮

ব্যক্তিগত জীবনে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন অভিনেতা নির্মলকুমারের সঙ্গে। কিন্তু সেই দাম্পত্য ভেঙে গিয়েছে। বিবাহিত সম্পর্ক থাকলেও দু’জনে আলাদা থাকেন। তবে দু’জনের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধুত্ব আছে এখনও। কিছু দিন আগেই নির্মলকুমারের জন্মদিনে মাধবীর উপস্থিতির ছবি উজ্জ্বল হয়ে আছে নেটাগরিকদের মনে।

১৮ ১৮

নিছক নায়িকা হতে চাননি কোনও দিন। তাই বলে জনপ্রিয়তায় ভাটাও পড়েনি। দেখিয়ে দিয়েছেন একইসঙ্গে বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা এবং সমান্তরাল ছবির সফল অভিনেত্রী হওয়া যায়। তাঁর হাতের দূরবিনই এখনও বাঙালি দর্শকের নিঝুম দুপুরের ক্যালাইডোস্কোপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement