Kaushiki Chakraborty

উন্মুক্ত অনুষ্ঠানের লাইভ স্ট্রিমিংয়েই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব, বলছেন কৌশিকী

সম্প্রতি গৃহবন্দি অবস্থায় কৌশিকীকে দেখা গিয়েছে তাঁর পুত্রকে যোগকোষ রাগে তালিম দিতে। একই সঙ্গে অনলাইন মাস্টারক্লাসও করছেন তিনি।

Advertisement

ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২০ ১১:২৯
Share:

কৌশিকি চক্রবর্তী।

নির্দিষ্ট দূরত্ববিধি মেনে স্বল্প দর্শক নিয়ে খোলা জায়গায় অনুষ্ঠান এবং তার লাইভ স্ট্রিমিংই আপাতত যে কোনও লাইভ পারফরম্যান্সের ঘটমান বর্তমান। এমনই মনে করছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তী।

Advertisement

কোভিড অধ্যুষিত বিশ্বে সামগ্রিকভাবে বিনোদনের জগৎ কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা দেখা গিয়েছে ইতিমধ্যেই। সেখান থেকে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব, তারই পথ বাতলাতে আনন্দবাজার ডিজিটালকে কৌশিকী বলেন, ‘‘আমি যে ধারার গান করি, সেই ধারার অনুষ্ঠান পূর্বাবস্থায় ফেরাতে গেলে দু’টি বিষয় জরুরি। প্রথমত, এক জায়গায় অনেক লোক নির্ভয়ে জড়ো হতে পারবেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া। দ্বিতীয় কারণটি অর্থসংক্রান্ত। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয়, তা শুধু টিকিট বিক্রি করে ওঠে না। সেখানে জরুরি স্পনসরশিপ। সেই স্পনসর এই মুহূর্তে পাওয়া কঠিন। কারণ, কোভিডের এই সময়ে অনেক সংস্থা উদ্বৃত্ত অর্থ খরচ করার আগে দু’বার ভাবছে।’’

সেই সূত্রেই কৌশিকীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘যে সব সংস্থা স্পনসর করে, তারা মোটের উপর দু’টি বিষয় নজরে রাখে। এক, তারা দেখে বেশি মানুষ জমায়েত হলে তাদের বিজ্ঞাপন অনেকের নজরে পড়বে। দ্বিতীয়ত, এই ধরনের অনুষ্ঠানের সঙ্গে কোনও বিজ্ঞাপন সংস্থার নাম জুড়ে দেওয়া হলে তার মধ্যে দিয়ে ওই সংস্থা নিজেদের সম্মানজনক ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। বেশি মানুষ অনুষ্ঠান দেখলেই তারা আবার বিজ্ঞাপন দিতে উৎসাহিত হতে পারে। সেই পরিস্থিতি এই মুহূর্তে নেই।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘প্রকৃতিকে আঘাত করলে ব্যুমেরাং হয়ে তা ফেরে’....প্রকৃতির কোলে ফিরে উপলব্ধি সাংসদ মিমির

তা হলে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় কী? কৌশিকী বলছেন, ‘‘কবে আবার পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠান হবে বলা কঠিন। ট্রেন-বাস চললেও সেখানে যে মানুষজন যাচ্ছেন, তা তাঁদের পেশার বাধ্যবাধকতার কারণে। কিন্তু বিনোদনের জন্য তাঁরা বদ্ধ অডিটোরিয়ামে আসবেন কেন? বিকল্প হিসেবে তাই ভিন্ন কিছু ভাবতে হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কিছু মানুষ খোলা জায়গায় দূরত্ববিধি মেনে একটা অনুষ্ঠান দেখলেন এবং একই সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানের লাইভ স্ট্রিমিং হলে এক সঙ্গে অনেক মানুষ দেখার বিষয়টি সেখানে থাকবে। এতে বিজ্ঞাপনদাতারা উৎসাহিত হতে পারেন।’’

সম্প্রতি গৃহবন্দি অবস্থায় কৌশিকীকে দেখা গিয়েছে তাঁর পুত্রকে যোগকোষ রাগে তালিম দিতে। একই সঙ্গে অনলাইন মাস্টারক্লাসও করছেন তিনি। যেখানে কাফি রাগে একটি বন্দিশি ঠুংরি নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি, বিভিন্ন শহরে থাকা তাঁর ‘সখী’ দলের সদস্যদের নিয়েও ‘লাইভ’ করেছেন। সেই সঙ্গে ভাবছেন কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে এই ইন্ডাস্ট্রি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রেক্ষাগৃহে লাইভ অনুষ্ঠান হলে সেখানে অনেক মানুষ কাজ করেন। তাঁদেরও তো কাজ বন্ধ। আবার, শুধু অনলাইন যে কনসার্টগুলো হচ্ছে, তাতে শিল্পীর সঙ্গে শ্রোতার আত্মিক সংযোগ স্থাপন হয় না। যেমন আমি যখন কোনও অনলাইন কনসার্ট করেছি, সেখানে দেখেছি শুধু ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে গান করতে কষ্ট হয়। কারণ, স্টেজে যখন গান করি, তখন ওই আলো-আঁধারির মধ্যে মুখগুলো দেখতে ভাল লাগে। কখনও শ্রোতাদের চোখের অভিব্যক্তি আবছা হয়ে সরে সরে যায়। হাততালির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এই সবকিছুই শিল্পীদের উৎসাহিত করে। সে জন্যই মনে হচ্ছে, খোলা জায়গায় অল্প কিছু শ্রোতা নিয়ে অনুষ্ঠান হলে সেখানে অন্তত একজন শিল্পী একাত্ম হতে পারবেন। সেই অনুষ্ঠান লাইভ স্ট্রিমিং হলে বিশ্বের অনেক মানুষ অনুষ্ঠানটা দেখবেন। সেখানে শিল্পীর সঙ্গে শ্রোতার সেই সংযুক্তি থাকবে। ফলে অনুষ্ঠানের গুণগত মানও বজায় থাকবে।’’

আরও পড়ুন: ‘কহো না..’-এ হৃতিকের সঙ্গে কাজ শুরু করলেও অভিষেকের বিপরীতে ডেবিউ করেন করিনা, কেন জানেন

বস্তুত, অনলাইন মাস্টার ক্লাস নিয়ে অজয় চক্রবর্তীর কন্যার বক্তব্য, ‘‘চিরকাল দেখেছি, আমার পারফরম্যান্স অনেকে নকল করেন। সেটা একটা দিকে ভাল। আবার একটা দিকে খারাপ। ভাল এই কারণে, যে আমার গান কাউকে অনুপ্রাণিত করে। এটা তৃপ্তি দেয়। আর খারাপ এই জন্য যে, এর ফলে যাঁরা আমাকে নকল করেন, তাঁদের নিজস্বতা তৈরি হয় না। আমি কী ভাবনা থেকে কখন কোন তানটা করলাম, সেটা ভাগ করে নেওয়ার জন্যই আমি এই ক্লাসগুলো করি। যাতে ওঁরা নিজের মতো ভাবতে পারেন। কোভিডের জন্য কিছুটা সময় পাওয়ায় এই কাজগুলো করতে পারলাম।’’

বিপন্ন এই সময়ে কৌশিকী মনে করছেন, শরীরের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যও রক্ষা করা জরুরি। বলছেন, ‘‘শেষ বোর্ডিং পাস কবে হাতে ধরেছি, শেষ কবে নিজের হাতে সুটকেস গুছিয়েছি, শেষ কবে বিমানে চড়েছি মনেই পড়ে না। অথচ, কয়েক মাস আগেও আমার কাছে সুটকেস গোছানোটা কোনও কাজ বলেই মনে হত না! এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে বিশ্বের প্রতিটা মানুষ যাচ্ছেন। তাই সেখানে মানসিক স্থিতি বজায় রেখে নিজেকে সামলে চলতে হবে।’’

অভিনব কোনও কাজ করছেন কি? কৌশিকীর সহাস্য উত্তর, ‘‘ভূমিকম্পের সময় বাড়ির ভিত গড়তে নেই!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement