Amala Shankar

নৃত্যশিল্পী অমলাশঙ্কর প্রয়াত, শোকের ছায়া সাংস্কৃতিক জগতে

গত ২৭ জুন ১০১ বছর পূর্ণ করেন অমলা শঙ্কর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২০ ১০:৩৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

নৃত্যশিল্পী অমলাশঙ্কর প্রয়াত। শুক্রবার ভোরে ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। বার্ধক্যজনিত কারণেই অমলাশঙ্করের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর নাতনি শ্রীনন্দা। গত ২৭ জুন ১০১ বছর পূর্ণ করেন অমলাশঙ্কর।

এ দিন সকালে শ্রীনন্দাই সোশ্যাল মিডিয়ায় অমলাশঙ্করের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ‘‘১০১ বছর বয়সে আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ঠাম্মা। গত মাসেই ওঁর জন্মদিন পালন করেছিলাম আমরা। খুব অস্থির বোধ করছি কারণ মুম্বই থেকে কলকাতা যাওয়ার বিমান চলছে না।’’

শ্রীনন্দা আরও লেখেন, ‘‘ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। একটা যুগের অবসান হল। ঠাম্মা, তোমাকে খুব ভালবাসি। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ।’’ অমলাশঙ্করের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

Advertisement

শ্রীনন্দার ইনস্টাগ্রাম পোস্ট।

আরও পড়ুন: মুক্তির আগেই দেশ থেকে বিদেশে পাড়ি শকুন্তলা দেবীর!​

Advertisement

১৯১৯ সালের ২৭ জুন অবিভক্ত বাংলাদেশের যশোরে জন্ম অমলাশঙ্করের। ছোট্ট বয়স থেকেই প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটে তাঁর। ১৯৩১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে প্যারিসের ইন্টারন্যাশনাল কলোনিয়াল এগজিবিশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখানেই শঙ্কর পরিবার তথা স্বামী ও গুরু উদয়শঙ্করের সঙ্গে আলাপ ফ্রক পরিহিতা অমলার। তার পরেই উদয়শঙ্করের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন তিনি। উদয়শঙ্করের ডান্স গ্রুপের সঙ্গে দেশ-বিদেশে ঘুরে অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে থাকেন।

তার কয়েক বছরের মধ্যেই, মাত্র ১৯ বছর বয়সে উদয়শঙ্করের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন অমলা। ১৯৪২ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। একাধিক সাক্ষাৎকারে অমলা জানিয়েছেন, এক দিন রাতে হঠাৎই তাঁর ঘরে এসে বিয়ের প্রস্তাব দেন উদয়শঙ্কর। ঘটনার আকস্মিকতায় কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। বিয়ের পর আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে উদয়-অমলা জুটি। বিশ্বের বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী জুটিদের মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠেন তাঁরা।

উদয়শঙ্কর পরিচালিত ছবি ‘কল্পনা’য় উমার চরিত্রে অমলার নৃত্যাভিনয় দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়। কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় সেটি। সেইসময় কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়া কনিষ্ঠতম তারকা ছিলেন অমলাশঙ্কর। তার ৮১ বছর পর ২০১২ সালে ফের কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেন তিনি।

স্বামী উদয়শঙ্করের সঙ্গে অমলাশঙ্কর। ছবি আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে সংগৃহীত।

আরও পড়ুন: ফের ভুয়ো খবর, বিরক্ত অমিতাভ জানালেন তিনি কোভিড পজিটিভ​

তবে শুধু নাচের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি অমলাশঙ্কর। ছবি আঁকাতেও স্বকীয়তার ছাপ রাখতে পেরেছিলেন তিনি। তবে যাঁর হাত ধরে শিল্প জগতে আধিপত্য বিস্তার তাঁর, সেই উদয়শঙ্করের সঙ্গে অমলার দাম্পত্যে এক সময় চিড় ধরে। উদয় শঙ্করের জীবৎকালেই তাঁরা আলাদা থাকতেন। ১৯৭৭ সালে উদয়শঙ্করের মৃত্যু হয়।

উদয়-অমলার দুই সন্তান, প্রয়াত সুরকার আনন্দ এবং মমতাশঙ্কর। মেয়ে এবং ছেলের স্ত্রী তনুশ্রীশঙ্করের সঙ্গে মিলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শঙ্কর ঘরানাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন অমলাশঙ্কর।

এই নৃত্যশিল্পীর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্প-সংস্কৃতি মহলে। নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায় বললেন, ‘‘অমলাশঙ্করকে আমি মাসিমা বলতাম। আজীবন এ রকম প্রাণবন্ত শিল্পী খুবই কম দেখেছি। আস্তে আস্তে বয়স যখন থাবা বসালো শরীরে, আর নাচতে পারছেন না, তখন তিনি আঁকতে শুরু করলেন। সত্যিকারের শিল্পী ছিলেন বলেই এ ভাবে এক শিল্প থেকে আর এক শিল্পে নিজেকে রূপান্তর করে নিতে পেরেছিলেন। উনি ভীষণ বকতেন, বড় চুল কোনও দিন রাখিনি বলে। ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ দেখার পরে আমাকে ডেকে পাঠিয়ে মাসিমার কি আদর! মজার ব্যাপার, আমি উদয়শঙ্করকে দাদা বলতাম, ওঁকে মাসিমা।

অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের কথায়: ‘‘অমলাশঙ্কর নেই, এই খবরটা পাওয়ার পরেই মনে হল এক মহা যুগের অবসান ঘটল। আধুনিক বাংলা নাচের জন্মদাতা উদয়শঙ্কর, অমলাশঙ্কর। ক্রিয়েটিভ নাচকে কী ভাবে জনপ্রিয় করেছেন দু’জনে, তা ওঁদের কম্পোজিশন দেখলেই বোঝা যায়। আমি সুযোগ পেলেই ওঁদের নাচ দেখি। আর অবাক হয়ে ভাবি, কত গভীর ভাবে ভালবাসলে নাচের এমন নবজন্ম দেওয়া যায়!’’

ঘরোয়া অমলাশঙ্করকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা ভাগ করলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী প্রমিতা মল্লিক, ‘‘চন্দ্রোদয় ঘোষ, মমতাশঙ্করের সুবাদে অমলাশঙ্কর আমার মাসিমা। যত বার মুখোমুখি হয়েছি তত বার ভীষণ আদর করে কাছে টেনে নিয়েছেন। আর শেষ দিন পর্যন্ত নিজেকে পরিপাটি রেখেছিলেন। তসর বা মুগা শাড়িতে, মানানসই ব্লাউজে, কপালে চন্দনের তিলকে, পাতা কাটা চুলে মাসিমা শেষ দিনেও অনন্যা।’’

সাজেও অমলাশঙ্কর স্বতন্ত্র ছিলেন। এ কালে সেই সাজ কতখানি আধুনিক? ডিজাইনার শর্বরী দত্তের দাবি, কোনও দিন তিনি অমলাশঙ্করকে এলোমেলো দেখেননি। যতই রোগ-শোক আসুক, তিনি নিজেকে পরিপাটি রাখতেন। সুন্দর সুন্দর সুতির শাড়ি পড়তেন গরমে। শীতের জন্য থাকত মুগা, তসর, গরদ বা সিল্ক। ছোট্ট টিপ, হালকা গয়না আর একরাশ আভিজাত্য। মেকআপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদারের বক্তব্যও একই রকম। শ্রীনন্দার কাছে তিনি শুনেছেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে আই ব্রাও ঠিক করে তবে ঘরের বাইরে পা রাখতেন অমলাশঙ্কর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement