জিৎদার নিয়মানুবর্তিতা, ওরকম ফিটনেস! অবাক হয়ে যাই দেখে। কী করে নিজেকে এ রকম রেখেছে? জিজ্ঞেস করলে বলে না কিন্তু! ( দুষ্টু হাসি) বুঝে নিতে হয়।অন্য দিকে কিছু কিছু মানুষ থাকেন, তারা যত খাবারই খান, চেহারায় বদল হয় না। আমার তো হাওয়া খেলেও মনে হয় গায়ে লেগে যাবে! করোনার সময়ে আমার খাওয়া দেখে বাবা তো খুব বকত। এত কম খেতাম।
জিতের সঙ্গে লহমা
প্রশ্ন: লন্ডনে সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কেউ টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে আসে?
লহমা: অনেক দিন ধরেই ভিতরে ভিতরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসার খিদে তৈরি হয়েছিল। প্রেসিডেন্সি থেকে স্নাতক হওয়ার পরে বাবা-মা চেয়েছিল আরও পড়াশোনা করি। পরিবারের জন্য বাবা-মাকে স্নাতক হওয়ার পরেই চাকরি করতে হয়েছিল। ওরা চায়নি আমিও সেটাই করি। ইচ্ছে ছিল সোয়াসে গিয়ে স্নাতকোত্তর করব। তা-ই হল। পরবর্তী সময়ে আর পাঁচটা ছেলে-মেয়ের মতো চাকরিই করব ভেবেছিলাম।
প্রশ্ন: কী চাকরি করবেন ভেবেছিলেন?
লহমা: সাংবাদিকতা। চাকরি নিয়ে বেঙ্গালুরু চলেই যেতাম।
প্রশ্ন: কিন্তু জিতের অফিসে পৌঁছে গেলেন?
লহমা: একদম তাই। আসলে ভাগ্য টেনে নিয়ে গেল।
প্রশ্ন: আপনি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন?
লহমা: হ্যাঁ। নয়তো বাণিজ্যিক ছবিতে জিতের নায়িকা হলাম! ভাবতেই পারিনি।
প্রশ্ন: লোকে বলছে আপনি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছেন...
লহমা: অস্বীকার করি কেমন করে? এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পাওয়ার জন্য কত অভিনেতা লড়াই করছেন। সেখানে আমি প্রথমেই জিৎ-দার মতো মানুষের সঙ্গে কাজ করলাম।
প্রশ্ন: ছবি মুক্তির আগেই ‘রাবণ’-এর গানের এত ভিউ, প্রসেনজিৎ থেকে দেবের শুভেচ্ছা। নার্ভাস লাগছে না?
লহমা: খুবই নার্ভাস আমি। এই ইন্ডাস্ট্রিকে ছোটবেলা থেকে দেখেছি। হাসি, আনন্দ, ঝাঁ-চকচকে পোশাক। কিন্তু এ তো সম্পূর্ণ বাইরে থেকে দেখা। কাজ করতে গিয়ে বুঝলাম আসলে তা কতটা আলাদা।
প্রশ্ন: কতটা আলাদা?
লহমা: সবটাই। ২০২১-এর অক্টোবর থেকে শ্যুট শুরু হল। তার আগে জিৎ-দা ডেকে বলেছিল, কী ভাবে নিজেকে তৈরি করব। সুদীপ্তা চক্রবর্তীর কাছে কয়েকটা ক্লাস করে অভিনয় বোঝার চেষ্টা করেছিলাম। খুব উপকার হয় তাতে।
প্রশ্ন: আর শরীর চর্চা, খাওয়া?
লহমা: জিৎ-দাই বলে দিয়েছিল। ডায়েট শুরু হল। সঙ্গে শরীরচর্চা। খুব কষ্টকর জানেন...আগে করোনার সময়ে চারটেয় ঘুমোতাম। বেলায় উঠতাম।
প্রশ্ন: আর এখন?
লহমা: জিৎ-দার কথা মতো ওয়ার্ক আউট করছি। ম্যাগির বদলে চিকেন পোড়া, সবজি সেদ্ধ, খিচুড়ি...খুব কষ্টকর!
প্রশ্ন: তাই?
লহমা: আসলে জিৎদার নিয়মানুবর্তিতা, ওরকম ফিটনেস! অবাক হয়ে যাই দেখে। কী করে নিজেকে এ রকম রেখেছে? জিজ্ঞেস করলে বলে না কিন্তু! ( দুষ্টু হাসি) বুঝে নিতে হয়।অন্য দিকে কিছু কিছু মানুষ থাকেন, তারা যত খাবারই খান, চেহারায় বদল হয় না। আমার তো হাওয়া খেলেও মনে হয় গায়ে লেগে যাবে! করোনার সময়ে আমার খাওয়া দেখে বাবা তো খুব বকত। এত কম খেতাম। কিন্তু কিছু তো করার নেই! এত লোক আমাকে দেখবে, অভিনয় করব, কষ্ট তো করতেই হবে।
প্রশ্ন: সাংবাদিক হয়ে আপনার বাবা শিখিয়ে দেননি সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তাঁর উত্তর কী ভাবে দিতে হয়?
লহমা: না। বাবা শুধু বলে, অভিনেতাদের কোনও মতামত জাহির করা উচিত নয়। তাদের কাজ ছবিতে সংলাপ বলা। তার বাইরে নয়। যেমন জিৎ-দা। সংবাদমাধ্যমে শুধু কাজের কথা বলেন। আর কিচ্ছু না। প্রতি মুহূর্তে ওঁকে দেখে শেখার চেষ্টা করেছি। তবে আমার অভিভাবকেরা চেয়েছিলেন আমি ছবিতে অভিনয় করি।
প্রশ্ন: জিতের সঙ্গে প্রেমের দৃশ্য করতে অসুবিধে হয়নি?
লহমা: নার্ভাস লেগেছিল। তবে জিৎ-দা তার আগে থেকেই এমন ভাবে মেলামেশা করত, বিষয়টা সহজ করে দিয়েছিল। নাচের গানের শ্যুট করা আর একটা রোম্যান্টিক গানের শ্যুট করা যে কতটা আলাদা এবং কঠিন। তার ওপর জিৎ-দার পাশে দাঁড়ানো। কোন জিৎ-দা? যে ‘রোম্যান্টিক কিং’। আর এই কাজ করতে আর একটা কথাও মাথায় কাজ করছিল...
প্রশ্ন: কী সেটা?
লহমা: জিৎ-দার সঙ্গে এত অভিনেত্রীর জুটি আছে। শুভশ্রী, কোয়েল, নুসরত জাহান, নুসরত ফারিয়া। কত নাম বলব! সেখানে নতুন এসে আমি জিৎ-দার পাশে দাঁড়াচ্ছি। বাড়তি চাপ তো থাকেই। তবে উনি যে আমার মতো নতুন মুখের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, এতে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির ভাল হচ্ছে বলে আমি মনে করি। এর পরে তো সুস্মিতার সঙ্গেও কাজ করবেন।
প্রশ্ন: ‘রাবণ’-এর গান প্রকাশের পরে বয়ফ্রেন্ডের সংখ্যা কতটা বাড়ল?
লহমা: (লজ্জার হাসি) না, বয়ফ্রেন্ড ও রকম হয়নি। তবে নেটমাধ্যমে লোকে লিখছে, আমায় দেখতে তাদের ভাল লাগছে। তারা আমায় দেখে উত্তেজিত। এইটুকুই।
‘রাবণ’-এর নায়ক-নায়িকা
প্রশ্ন: আর আপনার বয়ফ্রেন্ড কী বলছেন?
লহমা: আমার কোনও বয়ফ্রেন্ড নেই। কারও আমায় ভাল লাগলে বোধ হয় সোজাসুজি বলতে পারে না, এ রকমও দেখেছি।
প্রশ্ন: অনেকেই বলেন অভিনেত্রীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সাংবাদিকরা কেন প্রশ্ন করবেন?আপনি কী ভাবেন?
লহমা: এটা হবেই। এত জন লোক কোনও অভিনেত্রীর বিয়ে নিয়ে জানতে চাইছে। আরে আমিই তো সারা ক্ষণ শাহরুখকে দেখি। কী করছে? কোথায় যাচ্ছে? কারও আমাকে নিয়ে উৎসাহ বেশি হলে সেটা ইতিবাচক হিসেবেই আমি বুঝি। হ্যাঁ, তার মধ্যে বাজে কথাও কেউ কেউ লিখবে। লিখুক না। ভাল কাজ করলে তা দর্শক ঠিক বুঝতে পারবে। তবে জিৎ-দাকে প্রায়ই বলছি, আমার খুব ভয় করছে। জিৎ-দা ভরসা দিয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতা হিসেবে কাদের পছন্দ?
লহমা: শুভশ্রীকে চিনি। খুব ভাল মানুষ। ভাল অভিনেত্রী। খুব মিষ্টিও। শ্রাবন্তীকে পর্দায় দেখতে খুব ভাল লাগে। জয়া আহসান। নুসরত। জিৎ-দা আর আবীরকেও খুব ভাল লাগে। জানি না এ ভাবে বলে ঠিক করলাম কি না। আমি তো নতুন। যা মনে হয়েছে বললাম।
প্রশ্ন: অভিনেত্রী হিসেবে শরীর নিয়ে কোনও ছুঁৎমার্গ আছে?
লহমা: নিজেকে তো ভাঙতেই হবে। চিত্রনাট্যে ভাল লাগলে ছুঁৎমার্গ থাকার কথা নয়। সবে শুরু করেছি। দেখা যাক।
প্রশ্ন: নেটমাধ্যমকে কী ভাবে সামলাচ্ছেন? প্রভাবী হতে চান?
লহমা: খুব কিছু পরিকল্পনা করে উঠতে পারিনি। রিল এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি মাঝে মধ্যে করি। কিন্তু ভাবনা ছিল না।এখন তো ছবি তুললেই ভেবে তুলি। অনুরাগীরা পর্দায় দেখতে দেখতে ভাবে সব সময়ে পরীদের মতো দেখতে লাগবে। তা কিন্তু নয়। সারা ক্ষণ তা হলে বাড়িতে সেজে বসে থাকতে হয়। সেটা পারব না। নাচ শিখে ভাল নাচতে পারলে তবেই রিল করব।
প্রশ্ন: শ্যুটের জন্য বিকিনি পরতে চাইবেন?
লহমা: আমার পছন্দ হলে, আত্মবিশ্বাস থাকলে কেন পরব না? শুধু বিকিনি কেন? হল্টার পরতে হলেও নিজের ভিতর থেকে সম্মতি পেলে, নিজেকে ভাল লাগলে পরতেই পারি।
প্রশ্ন: প্রিমিয়ারে কী প্ল্যান?
লহমা: কে সাজাবে, আমায় সেটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কী শাড়ি পরব, মা ঠিক করে দিয়েছে। আর বন্ধুদের মজা করে বলেছি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিটি মারতে। (খুব হাসি)