ভাল ক্রিকেট খেলতে পারতেন। বড় হয়ে পাইলটের প্রশিক্ষণও নেন। কিন্তু সব কিছু ছেড়ে সেলিম খানের গন্তব্য হল বলিউড।
ভাল দেখতে হওয়ায় ফিল্মে কাজ পেতেও শুরু করেন। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত অন্তত ২৪টি ফিল্মে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু অভিনেতা হিসাবে তেমন ভাবে জায়গা করতে পারেননি বলিউডে। সেলিম খান বুঝতে পেরেছিলেন, অভিনয় তাঁর জন্য নয়।
এর পর ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু জাভেদ আখতারের সঙ্গে জুটি বেঁধে ফিল্মের ডায়লগ লিখতে শুরু করলেন। সেলিম-জাভেদ জুটি ইন্ডাস্ট্রিতে হিট হয়ে যায়। অথচ আচমকাই তাঁদের এই জুটি ভেঙে যায়। ইন্ডাস্ট্রি তাঁদের চাইলেও, তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে চাইতেন না আর।
১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তাঁদের দুর্দান্ত পার্টনারশিপ ছিল। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা প্রচুর হিট ফিল্ম দিয়েছেন।
তার মধ্যে ২২টা ফিল্ম ছিল হিন্দিতে আর দুটো ছিল কন্নড়ে। তাঁরাই প্রথম স্ক্রিপ্ট রাইটার, যাঁরা বলিউডে নিজেদের আলাদা পরিচিতি তৈরি করতে পেরেছিলেন।
তাঁদের সময় থেকেই ফিল্মে স্ক্রিপ্ট রাইটারদের ক্রেডিট দেওয়া শুরু হয়। তার আগে কোনও স্ক্রিপ্ট রাইটারদেরই নাম দেওয়া হত না।
বলি মহলের অনেকের মতে, তাঁদের লেখা ডায়ালগের উপর ভর করেই অমিতাভ বচ্চন ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
জানা যায়, কোনও কোনও ফিল্মে তাঁরা নাকি নায়কের থেকেও বেশি পারিশ্রমিক নিতেন। এমনকি ফিল্মের লভ্যাংশের ২৫ শতাংশ পর্যন্তও দাবি করার নজির রয়েছে তাদের।
সেলিম-জাভেদের এত হিট জুটি কেন আচমকা দুটো আলাদা রাস্তা ধরতে শুরু করল? কেন তাঁরা সেলিম-জাভেদ থেকে আলাদা ভাবে সেলিম খান এবং জাভেদ আখতার হয়ে উঠলেন? কেনই বা তাঁদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরল?
জানা যায়, জাভেদ আখতারের একটা সিদ্ধান্তকে ঘিরেই তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে। দু’জনে একসঙ্গে স্ক্রিপ্ট লিখতেন, সারাদিন একসঙ্গে কাজ করে যেতেন।
কিন্তু স্ক্রিপ্টের পাশাপাশি জাভেদ আখতার মিউজিক নিয়েও গবেষণা করতে চাইছিলেন। ইন্ডাস্ট্রিতে গান নিয়ে এগোতে চাইছিলেন তিনি।
এক দিন ফিল্মের জন্য গান লেখার প্রস্তাব দিয়ে বসেন সেলিম খানকে। জাভেদের প্রস্তাব ছিল, সেলিম-জাভেদ নামেই তিনি গান লিখবেন ফিল্মের জন্য। যা একেবারেই পছন্দ হয়নি সেলিমের।
কারণ, গান সম্বন্ধে কোনও অভিজ্ঞতা সেলিম খানের ছিল না। আর যাতে তিনি এতটুকু শ্রম দিতে পারবেন না, তার ক্রেডিট কী ভাবে নেবেন! জাভেদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন সেলিম।
জানা যায়, এর পর নাকি এক দিন জাভেদ আখতার সরাসরি সেলিম খানকে বলে দিয়েছিলেন, এ বার তাঁরা আলাদা কাজ করলেই ভাল হবে। সেই শুরু। সেই থেকেই তাঁদের সম্পর্কে চিড় ধরে।
সে দিন জাভেদের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সেলিম কোনও কথা বলেননি। তবে তিনি এতটাই আঘাত পেয়েছিলেন যে, দেশ ছেড়ে লন্ডনে চলে যান। পরে অবশ্য দেশে ফিরে ফের কাজ শুরু করেছিলেন।
লন্ডন থেকে ফিরে নতুন করে মুম্বইয়ে কাজ পাওয়া মুশকিল ছিল। কিন্ত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেলিম খান ফের নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছিলেন। তবে আর সেলিম-জাভেদ জুটি তৈরি হয়নি।