জয় এবং লোপামুদ্রা।
‘সারেগামাপা ২০২০’ রিয়েলিটি শো-এর বিচার ‘অস্বচ্ছ্ব’। টাকা দিয়ে ‘সেরা’র সম্মান কিনেছেন অর্কদীপ।এমনই অভিযোগ দর্শক-শ্রোতাদের। এই ক্ষেত্রে বিচারকেরা ঠিক বিচার করেননি বলে নেটমাধ্যমে উত্তাল দর্শক। 'বিচারকেরা টাকা খেয়ে বিচার করেছেন’, দাবি তাঁদের। রাগে, ক্ষোভে বিচারকদের তাঁরা ‘বজ্জাত’, ‘খারাপ’, ‘চোর’ তকমা দিতেও ছাড়েননি।
নেটামাধ্যমেই সেই উত্তর ফিরিয়ে দিয়েছেন লোপামুদ্রা মিত্র। সুরকার জয় সরকারকে কটাক্ষ করেই একাধিক নেটাগরিকের এই কুমন্তব্য। লোপামুদ্রার সাফ জবাব, ‘গত ২০ বছর আমি জয় সরকারের মতো একজন আদ্যোপান্ত গানবাজনা প্রেমিক মানুষের সঙ্গে থাকি। তাঁকে চিনি হাড়ে-মজ্জায়'। জয়ের বিরুদ্ধে ‘টাকা খাওয়ার অভিযোগ’ নস্যাৎ করেছেন তিনি। জয়কে সমর্থন করার সঙ্গে পাশে দাঁড়িয়েছেন অর্কদীপেরও, ‘ছেলেটির কি দোষ? ওর উপর কতটা মানসিক চাপ পড়ছে, ওর যন্ত্রণা এক বারও ভেবে দেখছেন? প্রথম হয়ে সে যেন ফাঁসির আসামী! জেতাটাকে উপভোগ করতে পারছে না বেচারা’।
একই সঙ্গে লোপামুদ্রার কটাক্ষ, ‘পরের সিজন শুরু হলে এ বছরের প্রতিযোগীদের ভুলে যাবেন আপনারা। প্রথম, দ্বিতীয় কে কোন বছরে, কেউ মনে রাখবেন না। এক বছর চড়া আলোর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার পর এক অদ্ভুত ইঁদুরদৌড়ে নেমে পড়বে ওরা’। শিল্পীর আফসোস, সে দৌড়ে ওরা একা। সেই লড়াই ওদের একার। সে লড়াই ওদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই। বেঁচে থাকার লড়াই। সে দিন আর ওদের পাশে কেউ নেই!
‘সারেগামাপা ২০২০’-র সেরা অর্কদীপ মিশ্র। রবিবার গ্র্যান্ড ফিনালেতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরে এই ফলাফল ঘোষিত হতেই প্রতিবাদে সরব নেটমাধ্যম।
অনেকে সরাসরি বিঁধেছেন অর্কদীপকে, এর আগে বহু প্রতিযোগী তাঁদের গায়কী থেকে বেরতে পারছেন না, এই অভিযোগে বিদায় নিয়েছেন এই প্রতিযোগিতার মঞ্চ থেকে। অথচ অর্কদীপ শুধুই নিজের ঘরানা লোকগানের মধ্যে থেকেই সেরার শিরোপা পেলেন! তাদের প্রশ্ন, ‘এটা অন্যায়, অবিচার নয়?’
অনেকেই আবার আর এক প্রতিযোগী নীহারিকার সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচারও করেছেন। কেউ কেউ লিখেছেন, ‘শুধুমাত্র একই ধাঁচের গান গেয়ে অর্কদীপ জিতে গেল। আর নীহারিকা সব ধরনের গান গাওয়ার যোগ্যতা রেখেও জিতল না। এর মানেটা বুঝতে পারছেন না? মানে মানি ইজ সুইটার দ্যান হানি’।
প্রকৃত ঘটনা কী?
লাইভে এসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইমন চক্রবর্তীও। তাঁর দাবি, ‘আজ নীহারিকা প্রথম হলে তখনও যে অভিযোগ থেমে যেত, তা নয়। তখন বলা হত, অর্কদীপ কেন প্রথম হল না? ও তো বাংলা গান গেয়েছিল? তা হলে বাংলা গান শোনানো হচ্ছে না বাংলা চ্যানেলে! আপনাদের এই অভিযোগ চলতেই থাকবে’। তার পরেই ইমনের প্রশ্ন, ‘আপনাদের সব বিষয়েই এত বক্তব্য কেন?’ জাতীয় পুরস্কারজয়ী শিল্পীর পরামর্শ, সবাই শো-টি দেখছেন। ভালওবাসছেন। তা হলে মন থেকে প্রতিযোগীদের আশীর্বাদ করা উচিত সবার। যুক্তি, কাউকে ভাল না বলতে পারলে খারাপ বলার অধিকারও নেই।
অর্কদীপ মিশ্র।
বিচারক মনোময় ভট্টাচার্য আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন, ‘‘বিচারকদের কেউ প্রভাবিত করেনি। গুরু হিসেবে আমি এবং বাকি যাঁরা রিয়েলিটি শো-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁরা কিন্তু বিচারকদের কোনও ভাবেই প্রভাবিত করেননি। তাঁদের মেনে নিতে হয়েছে বিচারকদের মতামত। গুরুরা প্রতিযোগীদের তৈরি করে দিয়েছেন মাত্র। শো-এ বিচারকদের মতামতই চূড়ান্ত ছিল।’’ বিচারকদের মতামত নিয়ে গুরুদের মধ্যে কখনও দ্বিমত তৈরি হয়েছে? মনোময় স্বীকার করেছেন, ‘‘দ্বিমত তৈরি হতেই পারে। আমি যেমন মনে করি, যুগ্ম সেরা হতে পারত। সেই অনুযায়ী অর্কদীপের সঙ্গে নীহারিকা বা অনুষ্কাও প্রথম হতে পারত।’’ তবে বিচারে অস্বচ্ছ্তা ছিল, এই অপবাদ মানতে নারাজ তিনিও।
যাঁকে নিয়ে এত কথা, কী বলছেন জি বাংলা সারেগামাপা ২০২০-র সেরা অর্কদীপ মিশ্র? আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে অর্কদীপ জানালেন, রাতারাতি খ্যাতির শীর্ষে চড়ে কুখ্যাতও তিনি! দর্শক-শ্রোতার আপত্তি কী নিয়ে? অর্কদীপের গান না সম্মান? অর্কদীপের দাবি, ‘‘আমার সম্মান নিয়ে কারও আপত্তি নেই। সবার আপত্তি আমার লোকগান গাওয়া নিয়ে।’’
শিল্পীর সামাজিক পাতায় গেলেই দেখা যাবে গান, গায়কির সমালোচনার পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও রীতিমতো কাটাছেঁড়া চালাচ্ছেন সবাই। যা নিয়ে শিল্পীর তীব্র আপত্তি। তাঁর ক্ষোভ, এটাই এখন চলে। তিনি বিস্মিত, ব্যক্তিগত স্তরে পৌঁছে গিয়ে, মা-বাবাকে অপমান করে কী সুখ পান সবাই? আজও তিনি বুঝে উঠতে পারেননি।
দর্শক-শ্রোতার প্রশ্ন, শুধুই লোকগীতি গেয়ে কী ভাবে সেরা হলেন অর্কদীপ? তিনি নাকি তাঁর গায়কী আর ঘরানা থেকে বেরননি! জবাব দিয়েছেন অর্কদীপ। তিনি বললেন, ‘‘শো বলছে, আমি কিশোর কুমার, শ্যামল মিত্র, শাহরুখ খান-সহ হিন্দি, বাংলা বহু ছবির গান গেয়েছি। প্রত্যেক শিল্পীরই নিজস্ব পছন্দ থাকে। আমার পছন্দ লোকগান। তার মানে এটা নয়, আমি অন্য গান জানি না!’’
অর্কদীপ ইতিমধ্যেই বুঝে গিয়েছেন, সব হয়তো সম্ভব। লোকের মুখ বন্ধ করা কোনও দিন সম্ভব নয়।