মিস্টার বচ্চনের ডেরায়

অমিতাভ বচ্চন-এর জুহুর বাড়িতে বসে অমর সিংহকে নিয়ে ক্যামেরার সামনে তাঁকে আক্রমণাত্মক সব প্রশ্ন! মানুষটাকে এই ক’বছর কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা লিখছেন অর্ণব গোস্বামীঅমিতাভ বচ্চন-এর জুহুর বাড়িতে বসে অমর সিংহকে নিয়ে ক্যামেরার সামনে তাঁকে আক্রমণাত্মক সব প্রশ্ন! মানুষটাকে এই ক’বছর কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা লিখছেন অর্ণব গোস্বামী

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০০:০১
Share:

সুপারস্টাররা কি এমন হন নাকি?

Advertisement

যাঁকে নিয়ে ভারতবর্ষ পাগল, সেই মানুষটা কেন সব ব্যাপারে এত সংযত থাকবেন? কেনই বা নিজের মতামত দিতে গিয়ে এমন আটকে আটকে যাবেন যে, কিছুতেই তাঁর মনের কথা জানা যাবে না?

মিস্টার অমিতাভ বচ্চনকে চিনি সাত-আট বছর। তার মধ্যে গত তিন-চার বছর কিছুটা হয়তো ওঁর আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। আর তার পর থেকে নাগাড়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ইন্টারভিউতে, ওঁর এই সাবধানী মোড়কটাকে ভাঙার।

Advertisement

চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষটাকে বোঝারও। মিস্টার বচ্চনকে কাছ থেকে দেখে আমার একটা অদ্ভুত উপলব্ধি হয়েছে। সেটা হল এমন অবিশ্বাস্য সাফল্যের অধিকারী মানুষটা অদ্ভুতভাবে প্রতি মুহূর্তে নিজের ব্যর্থতাকে বয়ে নিয়ে চলেন। আমরা সবাই ওঁর সাফল্যই দেখি আর অভিভূতই হই। কিন্তু উনি ভেতরে সেই ব্যর্থতা বা সমালোচনার জখমগুলো বয়ে নিয়ে চলেন। সে জন্যই হয়তো চট করে কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না। মন খুলে কথা বলতে চান না।

কোথাও আমার মনে হয়, ওঁর জীবনে প্রাপ্তি এবং বিষণ্ণতা দু’টোই এমনভাবে এসেছে যে উনি একটাকে আর একটার চেয়ে ছাড়াতে পারেন না।

‘কুলি’র দুর্ঘটনার পর যে মানুষটার অসুস্থতার জন্য ’৮২ সালে গোটা দেশ উপোস আর প্রার্থনা করেছিল, তাঁকেই কি না পরের পাঁচ-ছ’ বছরের মধ্যে বফর্স কেলেঙ্কারির জন্য তীব্রতম সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকছেন, আর লোকে চিৎকার করেছে ‘চোর, চোর, বফর্সের টাকা নিয়েছে!’ নব্বই দশকে একটা সময়ে বলিউড তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এই সময়ের অনেক অপমান এবং হতাশা ওঁর চিরসঙ্গী। আমার মনে হয়, আমিই একমাত্র সাংবাদিক যাকে উনি বিশ্বাস করে জীবনের এই ক্ষতবিক্ষত সময়গুলোর কথা শেয়ার করেছেন।

যেমন, এবিসিএল-এর ব্যর্থতা নিয়ে বহুবার কথা হয়েছে আমাদের মধ্যে। উনি মনে করেন এবিসিএল সময়ের আগেই চলে এসেছিল। আজ ইউটিভি বা অন্য কর্পোরেট সংস্থাদের রমরমা দেখে আমিও ওঁকে বলেছি, উনি বোধহয় সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা একটা কনসেপ্ট ভেবেছিলেন। আজ মুম্বই ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি কর্পোরেটাইজড। কিন্তু সেই ভাবনাটা প্রথম মিস্টার বচ্চনই শুরু করেছিলেন। যার কোনও স্বীকৃতি দেয়নি বলিউড। সেই দুঃখটাও কোথাও রয়ে গেছে।

সাংবাদিক হিসেবে আমার বারবার মনে হয়েছে, এটাই চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিত যে, সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চনের এই আস্তরণটাকে সরিয়ে পিছনের মানুষটাকে বার করে আনতে হবে।

শেষ ইন্টারভিউটাতে বোধহয় ওঁর নিজের মোড়ক থেকে কিছুটা বার করেও আনতে পেরেছিলাম। আর সেটা হয়েছিল কি না ওঁরই ডেরায়।

সে দিন বিকেল চারটেয় ওঁর জুহুর বাড়িতে ইন্টারভিউ শুরু হওয়ার কথা। সময় মতো গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে গিয়েছি ওঁর অফিসে। সকাল থেকে টাইমস নাও-এর চল্লিশ-পঞ্চাশ জনের ক্রু দখল নিয়ে ফেলেছে ওঁর লিভিং রুম। কিন্তু আমার মাথায় তখন অন্য চিন্তা।

এমনিতে আমি ওঁর বিশাল ফ্যান। এতটাই যে লোয়ার প্যারেলের অফিসে আমার ঘরের দেওয়ালে ‘দিওয়ার’‌য়ের সেই ছবিটা লাগানো, যেখানে পিটারের ডেরায় বসে আছেন অমিতাভ বচ্চন।

কিন্তু তাতেও সে দিন অন্য দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরছে।

অলরেডি মিস্টার বচ্চনের চারটে ইন্টারভিউ আমি করে ফেলেছি। সিনেমা সংক্রান্ত সব কিছু জিজ্ঞেস করা হয়ে গেছে। ‘শোলে’, ‘দিওয়ার’ কিছুই বাকি নেই। তখন সবে ‘পিকু’ রিলিজ করেছে। এমনই অবস্থা যে, সেটাও তখনও আমার দেখা হয়নি। তাই ‘পিকু’ নিয়েও প্রশ্ন সম্ভব নয়।

মিস্টার বচ্চন আই কান্ট ডু দিস ইন্টারভিউ

এর আগে আমি প্রিন্স চার্লসের ইন্টারভিউ শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ক্যানসেল করেছিলাম। কারণ আমি কী কী জিজ্ঞেস করব সেই প্রশ্নগুলো উনি চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। আমি ও রকম ইন্টারভিউ কোনও দিন করিনি। করবও না।

কিন্তু সে তো প্রিন্স চার্লস প্রশ্ন চেয়ে পাঠিয়েছিলেন বলে ক্যানসেল করেছিলাম। এখানে তো ক্যানসেল করতে চাইছি কারণ আমার কাছে আর কোনও প্রশ্ন নেই অমিতাভ বচ্চনকে জিজ্ঞেস করার। সে জন্য।

অথচ সকাল থেকে ক্যামেরা সেট আপ করা হয়ে গিয়েছে। এখন যদি বলি আমার কোনও প্রশ্ন নেই ওঁকে জিজ্ঞেস করার, তাই ইন্টারভিউটা ক্যানসেল করতে চাইছি। সেটা শুনলে উনি হয়তো দুঃখ পাবেন। অবধারিত রাগও করবেন।

এর মধ্যে অভিষেক ওপরতলা থেকে নেমে এসেছে। ওর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার মধ্যেই তিনি এসে হাজির।

দু’জনে সামনাসামনি। এক গ্লাস জল খেয়ে এ বার আমি সাহস করে বলেই ফেললাম, ‘‘মিস্টার বচ্চন, আই কান্ট ডু দিস ইন্টারভিউ।’’

উনি কথাটা শুনে চমকে উঠলেন। আমার দিকে তাকালেন। বিখ্যাত সেই ব্যারিটোনে বললেন, ‘‘হোয়াই অর্ণব? হোয়াট হ্যাপেনড্?’’

আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় তারকাকে ধীরে ধীরে বললাম, ‘‘ফিল্ম নিয়ে আপনাকে আমার যা যা জিজ্ঞেস করার ছিল, সেগুলো আগের ইন্টারভিউগুলোতে করে ফেলেছি। তাই আজ যদি কথা বলতেই হয়, তা হলে আমি শুধু ফিল্মের বাইরের প্রশ্ন করতে চাইব।’’ উনি শুনলেন আমার কথাটা মন দিয়ে। তার পর চুপ। উনিও। আমিও।

অমিতাভ বচ্চনের মতো ব্যক্তিত্বের সামনে চুপ করে বসে থাকাটা যে একজন জার্নালিস্টের উপর কী পরিমাণ চাপ, তা ওই অবস্থায় না পড়লে কেউ বুঝবে না।

এক মিনিট কেটে গেল। সব চুপ। দু’মিনিট কেটে গেল। তিন-চার-পাঁচ-ছয়-সাত...

আট মিনিটের মাথায় উনি বললেন, ‘‘ওকে অর্ণব, আই উইল ডু দ্য ইন্টারভিউ বাট অন ওয়ান কন্ডিশন। অন্তত একটা প্রশ্ন ইন্টারভিউটায় থাকতে হবে ‘পিকু’ নিয়ে।’’

আমি বললাম, ‘‘আমি তো দেখিনি ছবিটা। কিন্তু নিশ্চয়ই চেষ্টা করব।’’

আবার তোড়জোড় শুরু হল... লাইটস... ক্যামেরা... অ্যাকশন... ইন্টারভিউ বিগিনস...

আমাদের দেশে সাংবাদিকরা সেলিব্রিটিদের বড্ড বেশি ভয় পায়

আমার ওঁকে প্রথম প্রশ্নই ছিল, সলমন খানকে নিয়ে। অনেক দিন ধরে লক্ষ করছিলাম, বলিউডের প্রায় সব সেলিব্রিটি হিট অ্যান্ড রান কেসে সলমন খানের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের যুক্তিও ছিল অদ্ভুত। তাঁদের মতে সলমন খান প্রচুর চ্যারিটি করেন, খুব দয়ালু। কিন্তু এক জন সেলিব্রিটিও এটা বলছিলেন না যে, দয়ালু তো কী! কিছু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে ওঁর গাড়ির তলায় চাপা পড়ে। এটা নিয়েই ছিল সে দিন আমার প্রথম প্রশ্ন।

অনেক আমাকে পরে জিজ্ঞেস করেছে, ইন্টারভিউয়ের শুরুতেই ও রকম ধারালো প্রশ্ন আমি কেন করতে গেলাম? তাদের একটা কথাই বলেছি।

আমাদের দেশে সাংবাদিকরা সেলিব্রিটিদের বড্ড বেশি ভয় পায়। যাকে ইংরেজিতে বলে ‘ইন দ্য অ অব আ স্টার’ থাকে সব সময়। সিঁটিয়ে ভিতু ভিতু। অমিতাভ বচ্চনের বেলা তো থাকেই। মিস্টার বচ্চন সেটা বিলক্ষণ জানেন। তাই জেনে শুনে সাংবাদিকের চোখের দিকে তাকিয়ে কাঠকাঠ টোনে উত্তর দিয়ে যান। তাতে সাংবাদিক আরও ভয় পেয়ে যায়।

এবং প্রশ্ন করতে এই ভয় কিন্তু শুধু অমিতাভ বচ্চন অবধি সীমাবদ্ধ নয়। অনেক দিন ধরে দেখছি আমাদের দেশে সেলিব্রিটিদের কেউ আসল প্রশ্নগুলো করেই না। আমি এই রাখঢাক জার্নালিজম কোনও দিন করিনি। করবও না।

বুঝতে পারিনি যে-ইন্টারভিউ সলমন নিয়ে শুরু হয়েছিল তা বফর্স দিয়ে শেষ হবে

সলমন খানের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই দেখলাম মিস্টার বচ্চন সেই ডিপ্লোম্যাটিক উত্তরের দিকে চলে যাচ্ছেন। ওঁকে বেশ ভাল চিনে গেছি বলেই আজ বলতে পারছি, সাংবাদিকরা ভাল ফলো আপ প্রশ্ন করে না বলেই কিন্তু উনি এই সব ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর দিয়ে পার পেয়ে যান। যেখানে রিয়েলিটি হল একদম উল্টো। মিস্টার বচ্চন কিন্তু চান সাংবাদিকরা তাঁকে খোঁচাক। খুঁচিয়ে উত্তেজিত করুক।

সেই প্রোভোকেশনটা বজায় রেখেই আমি ওঁকে সলমনের কথার পরেই সঞ্জয় দত্তের প্রসঙ্গ তুললাম। বললাম বলিউড যে ভাবে সঞ্জয় দত্তর পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে ভাবে তো হায়দরাবাদের এক অভিনেত্রীর পাশে দাঁড়ায়নি, যার ওপর প্রস্টিটিউশন র‌্যাকেট চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। তখনও দেখেছিলাম উনি সেই ডিপ্লোম্যাটিকই রয়েছেন। তখন ‘আরক্ষণ’ ছবির সময় তাঁর একটা ‘কোট’ পড়ে শোনালাম যে, ‘‘বলিউডের উচিত সবসময় একে অপরের পাশে দাঁড়ানো।’’ আমার কাছে ওটাই ছিল ব্রেকিং পয়েন্ট।

প্রায় কুড়ি-বাইশটা প্রশ্ন করার পর দেখলাম, মিস্টার বচ্চন অবশেষে খোলস থেকে বেরোচ্ছেন। আমরা যাকে জার্নালিজমে বলি ‘ক্র্যাকিং’। একটা সময় তো উনি রেগেই গেলেন। সে দেখে আমার মনে হল, যাক, মানুষটাকে বের করা যাচ্ছে।

তার পর আর আমাকে কিছু করতে হয়নি। বফর্স হোক কী গাঁধী ফ্যামিলির সঙ্গে সম্পর্ক, অমর সিংহ হোক কী বিফ ব্যান— উনি সব প্রশ্নের দুর্দান্ত উত্তর দিয়েছিলেন।

সে দিন কথা বলতে বলতে এটাও বুঝেছিলাম, অমর সিংহ, গাঁধী পরিবার— পলিটিশিয়ানদের সঙ্গে ওঁর সব সম্পর্কই তিক্ততায় শেষ হয়েছে। তাই রাজনীতিবিদদের ব্যাপারে ওঁর চূড়ান্ত স্মৃতিটাই তিক্ততার। সে কায়দা করে মন্তব্য এড়িয়ে যেতে চান বা না চান।

হ্যাঁ, বাল ঠাকরের সঙ্গে ওঁর ভাল সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেই তো মুম্বইতে থাকতে হলে বাল ঠাকরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেই হবে। না রেখে কোনও সেলিব্রিটির উপায় ছিল না। কিন্তু ঠাকরের সঙ্গে ওঁর অমর সিংহ বা গাঁধীদের মতো ব্যক্তিগত সম্পর্ক হয়নি।

মিস্টার বচ্চন বোঝেন সাংবাদিক কোন দিকে যেতে চাইছে

এই ইন্টারভিউয়ের শুরুতে আমি একেবারেই বুঝিনি যা সলমন নিয়ে শুরু হয়েছিল তা যে বফর্স দিয়ে শেষ হবে।

এখানে আমার একটা জার্নালিস্টিক লজিক আছে। এত দিন ইন্টারভিউ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝেছি, যেখানে আপনি প্রশ্ন তৈরি করে নিয়ে যান সেখানে আপনি শোনেন বেশি। মাথা কাজ করান না। ফলো আপ প্রশ্নের ফ্যাকাল্টিটাই তখন মাথায় থাকে না। কিন্তু যেখানে আপনি অনেকটাই প্রশ্ন ছাড়া, খোলাখুলি আড্ডায়, সেখানে ইন্টারভিউয়ের মান অনেক ভাল হয়। আমার মনে হয় এ ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল।

যেহেতু উনি রেডি ছিলেন না, আর আমিও ক্লিয়ার ছিলাম না উনি রাজি হবেন কি না নন-ফিল্মি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে, তাই জন্যই ইন্টারভিউটা প্রাণবন্ত হয়েছিল।

একটা কথা জানিয়ে রাখি উনি কিন্তু অসম্ভব ‘মিসচিভিয়াস’। দুষ্টুমিতে ভরা। একজন ইন্টারভিউয়ার যে ভাবে উল্টো দিকে বসা লোকটার মাইন্ড রিড করে, উনিও তাই করে চলেন। অভিজ্ঞতা থেকে উনি ঠিক জানেন আপনার পরের প্রশ্ন কী হতে পারে। সেই প্রেডিক্টেবল প্রশ্নের বাইরে গিয়ে ওঁকে চমকে দিন, দেখবেন ওঁর ঠোটের কোণে এক চিলতে হাসি খেলছে।

আমাদের এডিট মিটিংয়ে আসতে চান, ডাকতে চাই না

ইন্টারভিউয়ের শেষ দিকে উনি বলেছিলেন পরের জন্মে সাংবাদিক হয়ে জন্মাতে চান। এবং যে ভাবে আমি প্রশ্ন করি সবাইকে সেটাই করতে চান। তখন আমি ওঁকে বলি, আমি শিওর উনি খুব ভাল নিউজ অ্যাঙ্কর হবেন। এবং তাতে উনি বলেন, উনিও শিওর, আমি খুব ভাল অভিনেতা হব।

উনি মজা করতে পারেন। কিন্তু আমি মজা করিনি। আমি বিশ্বাস করি, ক্যামেরার সঙ্গে ওঁর ভালবাসাটা অন্য লেভেলের। অফ ক্যামেরা দেখেছি কথা বলতে বলতে ওঁর কাঁধ ঝুঁকে যাচ্ছে, একটু টায়ার্ড লাগছে। কিন্তু যেই ক্যামেরা অন হল, মিস্টার বচ্চন একেবারে অন্য মানুষ। এনার্জিটাই মুহূর্তে বদলে গেল।

ওঁর সঙ্গে অনেক দিনের আলাপের ফলে আজ একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। রাত্তিরে নিউজ আওয়ার দেখার পর প্রায়ই আমাকে এসএমএস করেন। নিজের মতামত জানান। এমনিতে মুম্বইতে থাকলে উনি আর ওঁর স্ত্রী জয়া বচ্চন যে নিউজআওয়ার দেখবেনই সেটা আমি জানি। আমাকে বলেওছেন।

আমাদের স্টুডিয়োতে উনি বেশ কয়েক বার এসেছেন। টাইমস নাও-এর নিউজরুমটা ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। মনে হয় খুশিই হয়েছেন। আমায় বলেছেন চ্যানেলগুলোর পেছনের জগৎ নিয়ে উনি ভীষণ উৎসাহী। কী ভাবে খবর তৈরি হয়, কী ভাবে আসে, সব কিছু উনি জানতে চান। চ্যানেলের জগৎ নিয়ে চান একটা ফিল্ম করতে। এমনকী আমায় বলেছেন টাইমস নাও-এর এডিট মিটিংয়ে ওঁকে ডাকতে। সাংবাদিকদের এডিট মিটিং কী ভাবে চলে সেটা ওঁর জানার খুব ইচ্ছে। বেশ কয়েকবার আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমি জানি উনি আমাদের এডিট মিটিংয়ে এলে মিটিংই বানচাল হয়ে যাবে। কারণ আমি নিজের চোখে দেখেছি উনি অফিসে এলে কাজ থেমে যায়। আমাদের অফিস লোয়ার প্যারেলে। পুরোপুরি অফিস পাড়ায়। কিন্তু মিস্টার বচ্চন আসছেন জানলে অফিসের বাইরে আজও হাজার হাজার লোক জমে যায়।

‘‘অলওয়েজ মিস্টার বচ্চন’’

আজ তিন-চার মাস পরে ভাবতে গিয়ে মনে হচ্ছে, অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে শেষ ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং প্রোগ্রামটা সত্যিই আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকল। আমাকে একজন জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী না অমিতাভ বচ্চন? এই মুহূর্তে যদি আপনাকে চয়েস দেওয়া হয়, কাকে ইন্টারভিউ করবেন?’’ জবাবে বললাম, ‘‘রাহুল গাঁধী।’’ কারণ এই মুহূর্তে রাহুল গাঁধী খবরের মধ্যে এত বেশি আছেন যে ওঁকে ইন্টারভিউয়ের সুযোগ পেলে ভাল লাগবে। কিন্তু আমাকে যদি বলেন মিস্টার বচ্চন না শাহরুখ খান? কাকে ইন্টারভিউ করতে বেশি ইচ্ছুক থাকব? বা বাকি খানদের? তা হলে আমি একটা কথাই বলব, অলওয়েজ মিস্টার বচ্চন। ওঁর গ্রেসটাই আলাদা।

ওঁর সত্তরতম জন্মদিনেও দেখা করতে গিয়েছিলাম। সে দিন ওঁকে একটু ম্রিয়মাণ দেখাচ্ছিল। কিন্তু ইদানীং আবার দেখছি সেই পুরনো মেজাজে।

চাইব উনি ভাল থাকুন, আমাদের আনন্দ দিন। আর আমি যেন খোলস ছেড়ে বের করে আনা, আরও কিছু ভাল ইন্টারভিউ করতে পারি ওঁর সঙ্গে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement