গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
কিছু দিন আগে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপর পুলিশি নির্যাতনের ঘটনায় যখন সারা দেশ গর্জে উঠেছিল তখন মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন শাহরুখ, সলমন, আমির, দীপিকা-সহ বলিউডের প্রথম সারির অভিনেতারা। রবিবার জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপর মুখোশধারীদের তাণ্ডবের ঘটনাতে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবাদ ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠলেও এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি তিন খান-সহ বেশ কিছু প্রথম সারির অভিনেতা।
যদিও অভিনেত্রী সোনম কপূর, রিচা চাড্ডা, কঙ্কণা সেনশর্মা, অনুরাগ কাশ্যপ, তাপসী পান্নু,কৃতী শ্যাননের মতো বেশ কিছু বলি সেলেব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁদের মুখে একটাই বক্তব্য, ‘যা হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না’!
গতকালই অভিনেত্রী সোনম কপূর টুইটারে লিখেছিলেন, “এতই যখন সাহস তখন মুখ দেখালে না কেন? নিরীহ ছাত্রদের উপর হামলা করার সময় অন্তত মুখটা দেখাও। আমি স্তম্ভিত।”
ঘটনার পর শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরে জামিয়া-জেএনইউ-সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বারবার হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা করে একটি টুইট করেছিলেন। সেই টুইটকেই শেয়ার করে আদিত্যর ভূমিকার প্রশংসা করে সোনম লেখেন, “এরকম নেতাই আমাদের প্রয়োজন। তবেই আশার আলো দেখা যাবে।”
কিছুদিন আগে জামিয়ার পড়ুয়াদের উপর পুলিশি অত্যাচারের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন অভিনেতা রাজকুমার রাও। রবিবার জেএনইউ কাণ্ডেও রাজকুমার তাঁর টুইটারে লেখেন, “যা হয়েছে তা লজ্জাজনক, হৃদয় বিদারক এবং ভয়ঙ্কর। যারা এই কাজ করেছে তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
রাজকুমারের টুইট
চুপ থাকেননি রীতেশ-জেনেলিয়া-তাপসীও। তাপসী লেখেন, “কী হচ্ছে এ সব! দুঃখজনক।” দিয়া মির্জা লেখেন, “আর কতদিন চলবে এ সব? কতদিন অন্ধ হয়ে বসে থাকবেন? রাজনীতি এবং ধর্মের নামে আর কতদিন এই হানাহানি চলবে? এনাফ ইজ এনাফ”।
তাপসীর টুইট
রীতেশের গলাতেও শোনা গেল একই সুর। তিনি লেখেন, “মুখ কেন ঢাকতে হয়? কারণ তারা জানে, যা করছে তা ভুল, আইনবিরুদ্ধ এবং অপরাধযোগ্য। এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না।”
সংশোধনী নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছিলেন স্বরা ভাস্কর, অনুরাগ কাশ্যপ এবং শাবানা আজমি সহ বেশ কিছু অভিনেতা। জেএনইউ কান্ডে ছাত্রদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় আবারও গর্জে উঠলেন তাঁরা। পড়ুয়াদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় চোখের জল বাঁধ মানেনি স্বরার। একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করার জন্য সকল দিল্লিবাসী কে প্রতিবাদে রাস্তায় নামার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
স্বরার টুইট শেয়ার করে শাবানা আজমি লেখেন, “বলার ভাষা নেই। শুধুমাত্র প্রতিবাদই যথেষ্ট নয়। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” বিশাল দাদলানী, অনুরাগ কাশ্যপ, অনুরাগ বসুও সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বলিউডের পাশাপাশি প্রতিবাদ জানিয়েছেন টলিউডও। মিমি, সৃজিত, আবির পরম...ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় সমালোচনা করেছেন তাঁরাও।
ঠিক কী হয়েছিল? জেএনইউ-র পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, রবিবার বিকেল থেকেই ক্যাম্পাসে আচমকা ভিড় জমতে শুরু করে। মুখোশধারী গুন্ডারা প্রথমে সবরমতী ধাবার বাইরে জড়ো হয়।অভিযোগ, এর পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবিভিপি নেতা-নেত্রীরা ভাড়াটে গুন্ডাদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, এর পর, রড, লাঠি, বাঁশ নিয়ে পড়ুয়াদের উপরে চড়াও হয় তারা। হস্টেলের আলো নিভিয়ে দিয়ে হামলার পাশাপাশি সবরমতী, কাবেরী, পেরিয়ার হস্টেলে ভাঙচুরও চলে।সভানেত্রী ঐশী ঘোষ-সহ বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ছাড়াও আহত হন বেশ কয়েকজন অধ্যাপকও।
আরও পড়ুন-‘হীরকের রাজা, এ ভাবে পাঠশালা বন্ধ করতে পারবে না’, জেএনইউ কাণ্ডে সরব মিমি-পরম-আবিরেরা
এদিকে জেএনইউ-র ঘটনায় বাড়ছে রাজনৈতিক চাপও। গতকালই ওই ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রের লজ্জা’আখ্যা দিয়ে টুইটারে সোচ্চার হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীনেশ ত্রিবেদীর নেতৃত্বে এ দিন জেএনইউ-তে প্রতিনিধি দলও পাঠাচ্ছে তৃণমূল। জেএনইউ কাণ্ড নিয়ে ময়দানে নামতে চলেছে কংগ্রেসও।