‘গ্যাং অফ ঘোস্ট’
আপনি শুনলাম খুব মনমরা হয়ে পড়েছেন...
না, মনমরা নয়। তবে দুঃখ পেয়েছি যে আমার ছবিটা মুক্তি পাওয়ার আগেই এত বিতর্ক। আমি চাই বাংলার মানুষ ‘গ্যাং অব ঘোস্টস’ দেখুক। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছবিটি খুব জনপ্রিয়। তবু বলব যে আমার ছবিটা দেখে তার পর সেটার ভালমন্দের বিচার করা হোক। ছবি মুক্তির আগেই তার সম্পর্কে ইরেসপন্সিবল কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার কোনও মানেই হয় না।
অনীক দত্তর সঙ্গে কথা বলেছেন? ছবিটা ওঁকে দেখাতে চাইবেন?
নিশ্চয়ই দেখাতে চাইব। আমি তো পরিচালক অনীক দত্তর সঙ্গে গায়ে পড়ে ঝগড়া করিনি! ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’- এর প্রযোজকের কাছ থেকে রতন জৈন স্বত্ব কিনেছিলেন। আমি তো এমনটাও শুনেছিলাম যে অনীককেও রতনজি বলেছিলেন ছবির হিন্দি রিমেকটা পরিচালনা করতে। উনি নাকি বলেছিলেন ভাবতে এক বছর সময় নেবেন। যে কোনও কারণেই হোক, ছবিটা পরিচালনা করার অফার তার পর আমার কাছে আসে। জানি না ফ্রাস্ট্রেশন থেকেই অনীক দত্ত এ সব বলেছিলেন কিনা। এত বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। ‘জানে ভি দো ইয়ারোঁ’ ছবিটার সংলাপ আমার লেখা। অভিনয় করেছি ওই ছবিতে। সে সবের তোয়াক্কা না করেই আমার সিনেমার ট্রেলার দেখে এমন মন্তব্য করলেন কেন? আরও খারাপ কীসে লাগছে জানেন?
কীসে?
অনীক নিজে বিজ্ঞাপনের মানুষ। বোঝেন মার্কেটিং ব্যাপারটা কী। তা-ও ইন্ডাস্ট্রির এক পরিচালকের কাজ না দেখেই এ রকম একটা কথা বলে দিলেন? আ ওয়েল রেড ম্যান লাইক হিম...উনি এ সব কী করে বলেন? আমার ছবিতে আমি ওঁকে অরিজিনাল স্টোরির ক্রেডিট দিয়েছি। এটা আমি সব সময় করে এসেছি। এর আগেও যত বার সুপারডুপার রিমেক পরিচালনা করেছি, আমি কিন্তু অরিজিনাল ফিল্মের পরিচালকের নাম ক্রেডিটে দিয়েছি। মনে আছে ‘পবিত্র বন্ধন’ বলে একটা ছবি থেকে আমি ‘হম আপকে দিল মে রহেতে হ্যায়’ বানিয়েছিলাম। অরিজিনাল ছবিটা অন্য রকমের ছিল। আমি সেখান থেকে একটা লাভস্টোরি বের করেছিলাম। কত সাকসেসফুল রিমেক করেছি! যেমন ‘তেরে নাম’, ‘মুঝে কুছ কহেনা হ্যায়’, ‘হমারা দিল আপকে পাস হ্যায়’। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ আমার খুব পছন্দের ছবি। তবে এটাকে এমন ভাবে অ্যাডাপ্ট করেছি যাতে সর্বভারতীয় দর্শক সেটা দেখে আনন্দ পায়।
বাংলাতে ‘কদলীবালা’ হিন্দিতে ‘মনোরঞ্জনাকুমারী’
এর মধ্যে কথা হয়েছিল যে আপনি নাকি আইনি পদক্ষেপ নিতে চলেছেন ওই সব মন্তব্য করার জন্য। এটা কি অতিরঞ্জিত কোনও গুজব মাত্র?
৩০ বছর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। কোনও বিতর্কে জড়াইনি। থিয়েটার করেছি। ফিল্মে অভিনয় করেছি। প্রযোজনা করেছি। ছবি পরিচালনা করেছি। সৃজনশীল মানুষদের আমি সম্মান করি। ওই ঘটনার পর আমার লিগাল টিমের লোকজন খুব রেগে গিয়েছিল। আই হ্যাড টু কাম দেম ডাউন।
চণ্ডীগড়, কানপুর, লখনউ সব জায়গায় ছবিটা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কলকাতায় এলেন না কেন? অভিমান হয়েছে?
না না। সময়ের অভাব। কলকাতায় একটা ফ্যাশন শো-তে আমার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এমন শিডিউল যে শুধু মীরা চোপড়া যেতে পারল। তবে আবার বলছি, কলকাতা আমার খুব প্রিয়। বাংলা ছবি দেখি। ‘অটোগ্রাফ’, ‘বাইশে শ্রাবণ’, ‘মনের মানুষ’ দেখে আমার দারুণ লেগেছে। কত বাঙালি বন্ধু রয়েছে আমার। ওদের সঙ্গে মিশে বুঝেছি বাঙালিরা খুব প্যাশনেট। হোয়েন ইট কামস টু দেয়ার আর্ট, দে আর পোজেসিভ অ্যাবাউট ইট। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ দেখে আমার দারুণ লেগেছিল। প্রোমোটারদের নাকি এমন উপদ্রব যে ভূতেদের থাকার জায়গার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। দেখে মনে হয়েছিল কী দারুণ একটা ব্ল্যাক কমেডি! ঠিক করলাম মুম্বইয়ের মিল-য়ের পটভূমিতে চিত্রনাট্যটা লিখব। সে ভাবেই এগোলাম। চিত্রনাট্যে যা বদল এনেছি, সেগুলো পরমব্রত (চট্টোপাধ্যায়)-কে বলতাম। ও তো অরিজিনাল আর রিমেক, দু’টোতেই অভিনয় করেছে। আমি চাইব মানুষ যেন একটু খোলা মনে আমার কাজটা দেখেন। অভিমানের কথা বলছেন বলে বলি বহু দিন হল এ সব অনুভূতি আমি পেরিয়ে এসেছি। নিজের জীবনে এমন একটা সময় গিয়েছে, যখন আমি ভাবতাম ছবি হিট বা ফ্লপে কী এসে যায়...
এটা কি ছেলের মৃত্যুর প্রসঙ্গে বলছেন?
আজও গায়ে কাঁটা দেয় সে সব দিনের কথা ভাবতে গিয়ে। বেঁচে থাকলে আমার ছেলের আজ বয়স হত ১৮/১৯ বছর। হয়তো আমার পাশে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকত। কিন্তু কুশ তো সেই কবে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। দু’বছর বয়সও হয়নি ওর তখন। খাওয়াতে গিয়ে শ্বাসনালিতে দুধ ঢুকে যায় ছেলেটার। আমি বাড়ি ছিলাম না। টেলিভিশন এডিটিংয়ের জন্য একটা কোম্পানি খুলেছিলাম। তার কাজ দেখতে গিয়েছিলাম। সে সময় বাড়িতে বয়স্ক কেউ ছিলেন না। থাকলে হয়তো বলে দিতেন যে বাচ্চাকে পিঠে থাপ্পড় মেরে দাও, তা হলে দম বন্ধ হবে না... ও কথা বলতে বলতে আজও কেমন গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। কী ভয়ঙ্কর সব দিন গিয়েছে। তখন ভাবতাম ছবি হিট-ই বা কী। ফ্লপ-ই বা কী।
এ সবের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরেও তো আপনার ‘ফানিম্যান’ ইমেজটা থেকেই গিয়েছে...
হ্যাঁ, তা গিয়েছে। ভগবান অদ্ভুত একটা ক্ষমতা দিয়েছেন আমাকে। শত কষ্টের মধ্যেও আমি হাসতে জানি। মৃত্যু আমাকে শক্ত করে দিয়েছে। জানি, লড়াই করে যেতে হবেই। কুশ চলে যাওয়ার পর আমি তবু কাজ করে গিয়েছি। ‘প্রেম’-এর মতো বড় ছবি পরিচালনা করেছি। মাঝেমধ্যে দোষী মনে হয়েছে নিজেকে। ভেবেছি এত কাজ করার কী মানে আছে? প্রশ্ন এসেছে, তবে কাজ থামাইনি।
আপনার অভিনীত সিরিয়াস রোলের চর্চা খুব বেশি হয় না...
সেটা একদম ঠিক। একটা নাটক করেছিলাম। নাম ‘সেলসম্যান রামলাল’। আজও মনে হয় সেটা ছিল অভিনেতা হিসেবে আমার অন্যতম সেরা পারফর্ম্যান্স। কিন্তু কই, প্রচার হয়নি তো... ব্রিটিশ ছবি ‘ব্রিক লেন’য়ে এক বাংলাদেশি ভদ্রলোকের চরিত্রে অভিনয় করেছি। ছবিটা একেবারেই নারীকেন্দ্রিক। আর তাতে তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়ের কী ভাল অভিনয়! তবু নিজের জায়গাটা ঠিক করে নিয়েছিলাম। টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সে ছবির স্ক্রিনিংয়ের পর আমাকে নিয়ে ও-দেশে কত লেখালিখি! ‘রোড, মুভি’ ছবিতেও আমি কত জটিল একটা চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু কই, এ দেশের মিডিয়া তো ও সব নিয়ে লেখে না। কোন-কোন ভারতীয় অভিনেতা আন্তর্জাতিক ছবিতে অভিনয় করেছেন এ নিয়ে প্রতিবেদন লেখা হলে সেখানে আমার নামটাও লেখা হয় না।
এর কারণটা কী? নিজের ঢাক নিজে না পেটানোর অক্ষমতা?
খানিকটা তাই। আবার আমার পরিচালক সত্তাটা অনেক ক্ষেত্রে আমার অভিনেতা সত্তার উপর ছায়া ফেলে দেয়। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে টাইপকাস্টিং হয়ে থাকে। আমাকে তাই ‘ফানিম্যান’ হিসেবেই বারবার ব্যবহার করা হয়।
যদি টাইম মেশিনে করে ফিরে যেতে পারতেন, কিছু পাল্টাতেন?
শুধু কুশকে ফিরিয়ে আনতাম। তা ছাড়া আর সব কিছু নিয়েই আমি সন্তুষ্ট। আবার একটা কমেডির চিত্রনাট্য লেখার কাজ প্রায় শেষ করেছি। ছবির নাম, ‘হর দিল ডলি পে লাট্টু হ্যায়’। খুব মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি আমি। বাবা ছিলেন সেলসম্যান। মাসে পাঁচশ’ টাকা রোজগার। ছোটবেলায় দিল্লিতে দেড় কামরার ঘরে আট জন মিলে থাকতাম। বাড়িতে একমাত্র আমিই স্বপ্ন দেখতাম একদিন কৌশিক নামটা খবরের কাগজে ছাপার অক্ষরে পড়তে পারব। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে পড়ার সময় অনুপম (খের) ছিল আমার ক্লাসমেট। অবসর সময়ে ফিল্মের বিজ্ঞাপন ডিজাইন করতাম খেলার ছলে। মনে আছে ‘ওয়েজেস অব ফিয়ার’ বলে একটা ছবি এসেছিল। আমি তার বিজ্ঞাপন বানিয়েছিলাম। নাম দিয়েছিলাম, ‘ডর কা তংখা’। নীচে লিখেছিলাম পরিচালনায় সতীশ কৌশিক। স্টারিং অনুপম খের, করণ রাজদান... মুম্বইতে প্রথম যখন পা রাখি, আমি ফিল্ম লাইনের
কারও সঙ্গে এক বছর যোগাযোগ করিনি। বাবা বলেছিলেন মুম্বই শহরটাকে চেনো। তাই একটা টেক্সটাইল মিলে এক বছর কাজ করেছিলাম ক্যাশিয়ার হিসেবে। মাইনে ছিল ৪০০ টাকা। সারা দিন কাজ করে সন্ধ্যাবেলায় থিয়েটার করতাম। আজও সেই মিলের মালিকেরা শাহরুখ আর গৌরীকে নিয়ে বিজ্ঞাপন করেছে। মাঝে মধ্যে বলে হেলিকপ্টার পাঠাচ্ছি আমাদের এই প্রোগ্রামে এসো...কোথা থেকে কোথায় চলে এলাম...
ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে পাশ করে অনেকেই মূলধারার বলিউড ছবির সঙ্গে মেলাতে পারেন না। আপনি ব্যতিক্রমী হলেন কী করে?
আমার সৌভাগ্য যে, অনিল কপূর, জাভেদ আখতার, বনি কপূরের মতো মানুষের সাহচর্য পেয়েছি। আমি সব সময় সব্বাইকে সম্মান করে এসেছি। লোকে বলে আমার সঙ্গে মিশলে তাদের ভাল লাগে। তবে আমি কারও চামচাগিরি করিনি। এমন ভাবে মিশিনি যাতে মনে হয়, আমি তাদের ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছি। এই করে বেশ ভালই কেটেছে। হরিয়ানাতে একটা গ্রাম অ্যাডপ্ট করেছি। সেখানে একটা স্টেডিয়াম বানাব। ‘দ্য রুটস্’ বলে একটা এনজিও করব ঠিক করেছি।
খুদে বংশিকা-ও আপনাদের জীবনে নতুন মানে এনে দিয়েছে...
নিশ্চয়ই। এক বছর আট মাস আগে বংশিকা এসেছে আমাদের জীবনে। কুশ চলে যাওয়ার পরে আমরা একদম ভেঙে পড়েছিলাম। সারোগেসি ব্যবহার করে আবার সন্তান এল আমাদের জীবনে। আমি এই বিষয়ে ওপেনলি কথা বলি। সন্তানহীন দম্পতিদের কাছে এটা বিশাল একটা সুযোগ। লোকে বলে এই বয়সে এত ছোট বাচ্চা। আমি সব কিছুর মধ্যে পজিটিভিটি খুঁজি। ভাবি আমার অন্য বন্ধুদের বাচ্চারা এখন পড়তে বাইরে চলে গিয়েছে। ওদের একাকীত্ব বেড়েছে। আর আমাদের বংশিকাকে নিয়েই দিন কেটে যায়। আই ফিল ইয়াং এগেন।
শেষ প্রশ্ন —ভূতেদের নিয়ে ছবি করলেন। ভূতপ্রেতে ভয় পান?
কে পায় না? প্রথম প্রথম খুব ভয় হয়। তার পর বুঝি পুরোটাই কল্পনা।
টুইটপিক্স
মাধুরীময়: সিমলায় সপরিবার মাধুরী দীক্ষিত
ইন্সট্যাগ্রাম
চুলের যত্ন নিন: শোয়ের আগে শাকিরা