সাঁঝবাতি ছবির একটি দৃশ্যে দেব ও পাওলি দাম।
শরীরে ফুটবল। মনে ‘সাঁঝবাতি’।
কী করছেন দেব?
ভোর ছ’টায় চার ঘণ্টা ফুটবল প্র্যাক্টিস। সারাদিন ‘সাঁঝবাতি’র প্রমোশন। রাতে আবার জোর কদমে প্র্যাক্টিস। নো সল্ট নো সুগার ডায়েট। ফুটবলার নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর চরিত্রে এ বার দেব। ওজন কমানো থেকে ফুটবল প্র্যাক্টিস। ছবির নাম ‘গোলন্দাজ’। মুখ্য চরিত্রেই দেব। তাই কসরত করতে হচ্ছে জোরকদমে।
এর মাঝেই আনন্দবাজার ডিজিটালের মুখোমুখি দেব। সঙ্গে ‘সাঁঝবাতি’র পরিচালক লেখক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।
‘সাঁঝবাতি’র পরের ছবি কী?
দেব: মানে?
রুক্মিণী আছে না নেই?
দেব: ‘সাঁঝবাতি’ নিয়ে আগে কথা হোক। তারপর রুক্মিণী।
আগে বলুন আপনি আবার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে নতুন ছবিতে কাজ করছেন তো?
দেব: আরে, আমার তো এখন লীনাদির সঙ্গে ভাই-দিদির সম্পর্ক। লীনাদির ছবি আমার ছবি। আমার ছবি লীনাদির ছবি। সোজা হিসেব।
মানে, করছেন তো?
লীনা: ইচ্ছে তো আছে একসঙ্গে খুব শিগগিরি কাজ করার। হবে নিশ্চয়ই।
দেব: আরে দিদি-ভাইয়ের ছবি এক। ভাগাভাগির কী দরকার?
হিসেবটা এত সোজাও ছিল কি? লীনাদিকে তো চিনতেনই না!
দেব: হ্যাঁ। প্রথমে তো মনে হয়েছিল রাশভারী মহিলা। কমিশনের চেয়ারপার্সন। কাজ করতে গিয়ে ওনার কলম ভাবনা— সব কিছুর সঙ্গে সহজে মিলমিশ হয়েছে। শৈবালদাও এমনিতে চুপ কিন্তু কাজের মানুষ। তবে লীনাদি রাজি ছিল না কিন্তু প্রথমে আমায় চাঁদু হিসেবে নিতে। কি লীনাদি, বল...
লীনা: আচ্ছা, দেবের মতো সুপারহিরো কেনই বা আমাদের মতো নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করবে? আমাদের কথা ঠিকমতো শুনবে কি? এ প্রশ্ন তো আসবেই মাথাতে। তাই বলেছিলাম অতনুকে অন্য কারও কথা ভাবতে। তবে ছবিটা শেষ হওয়ার পর যখন দেখেছি বলতে বাধ্য হচ্ছি, দেবের কিছু অংশের অভিনয় কাঁদিয়ে দিয়েছে। পাশে তাকিয়ে দেখি শৈবালও কাঁদছে। দেব আসলে ছবি নিয়ে থাকে। ছবিতেই ঘুমোয়। যতই সাংসদ হোক, ওর ছবিই জীবন। নিজের বেস্টটা তাই বের করে আনে যে কোনও চরিত্রে।
প্রথম দিকে সময়ে আসা নিয়েও তো পরিচালক আর অভিনেতার মধ্যে রাগারাগি হয়েছিল?
দেব: আরে, লীনাদি তো সময়ে আসবে না। অপেক্ষা করাবে। সবাই ওর জন্য বসে থাকবে। (হাসি)
লীনা: দেব সারাক্ষণ শুটে এ ভাবে ইয়ার্কি করে ইউনিটকে জাগিয়ে রাখত। তবে এটা ঠিক, দেবও বেশ কয়েক বার আমাদের অপেক্ষা করিয়েছে! এখন বলছে না। আসলে প্রথম দিকে আমাদের পরস্পরের প্রতি যদি কোনও রাগ তৈরি হয়ে থাকে অতনু সেটা ব্যালান্স করে দিত। দেবেরটা আমায় বলত না। আমারটা দেবকে বলত না।
‘সাঁঝবাতি’ ছবির একটি দৃশ্য।
লীনা, আপনাকে অতনু রায়চৌধুরী এই ছবি করার কথা বলেন?
লীনা: পুজোর পরে একটা ফোন এসেছিল। এমন একটা সময় যখন আমার মাথা খারাপ কাজের চাপে। ‘শ্রীময়ী’ লঞ্চ হবে। ওপারের ফোনে কেউ বললেন, আমি অতনু রায়চৌধুরী। বুঝতেই পারিনি! উনি আবার বলেন, আমি অতনু রায়চৌধুরী, ‘পোস্ত’, ‘হামি’...। উনি দেখা করতে চেয়েছিলেন। আমি সচরাচর কোথাও পৌঁছে যেতে পারি না। বলেছিলাম যাব না। উনি নাছোড়বান্দা। অবশেষে উনি-ই আসেন। কথা হয়। অতনু রায়চৌধুরীকে চিনলাম। আমার কাছে বরাবর আগে মানুষ। সম্পর্ক। তারপরে কাজ। আলাপ হয়ে ভাল লাগল।রাজি হলাম কাজ করতে।
একটা কথা বলুন তো, ‘গোত্র’ আর এই ‘সাঁঝবাতি’ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল এক সময়। দুটোর গল্প কি এক?
দেব: এই বিতর্ক নিয়ে আগে কিছু বলিনি। আজ বলছি, ছবিটা দেখুন কুড়ি তারিখে। যাঁরা লিখেছেন এক ছবি, তাঁদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। দেখে কী মনে হল প্লিজ লিখবেন। এক না লাগলে সেটাও লিখবেন কিন্তু। একটা বাড়িতে একটা বয়স্ক লোক একা, এ নিয়ে তো হাজারটা গল্প হতে পারে। আমরা জানুয়ারিতে তো আগেই প্রেস কনফারেন্স করে বিষয় জানিয়েছিলাম। তারপর ‘গোত্র’ এসেছে। দর্শক নিজে দেখে বলুক না!
লীনা: ‘গোত্র’ একটা জায়গায় বসে লেখা হয়েছে। ‘সাঁঝবাতি’ আর একটা জায়গায়। আমি জানবটা কী করে? তাই যদি হত, সব জেনে গোত্র-র নায়িকাকে যে কি না আমার ধারাবাহিকের নায়িকা তাকে আমি ‘গোত্র’ শুট করার জন্য ছেড়ে দিতাম না! মানালি করে এল কাজটা। আর এত বছর ধরে লিখছি। এত খারাপ অবস্থা হয়নি যে কারও গল্প থেকে কাজ করার প্রয়োজন হবে। কাজ করব না তার চেয়ে! কুড়ি তারিখ আসছে ছবি। দর্শক দেখে জানবে সবটা।
‘সাঁঝবাতি’র পরিচালক লেখক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।
এই ছবির বিষয়ে কান্না কথাটা বার বার আসছে... ‘সাঁঝবাতি’ কি কান্নার ছবি?
দেব: ‘সাঁঝবাতি’ অনেক সম্পর্কের ছবি। আমি আর সৌমিত্রদা একটা সম্পর্ক। আমি আর পাওলি আর একটা সম্পর্ক। লিলিদি ও সোহিনী আর একটা সম্পর্ক। এগুলোর মধ্যে কোনও জটিলতা তো নেই! বরং চারপাশের দেখা মানুষের গল্প আছে। দর্শক নিজেদের খুঁজে পাবে এই ছবিতে।
বাংলা ছবির দর্শক কি এখন ছবি দেখেন নিজেদের সমস্যা দেখার জন্য?
দেব: লীনাদি আগে বলুক। রোজ এত মানুষের সমস্যা নিয়ে কাজ করছে...
লীনা: অনেকটাই তাই। ছবিতে নিজেকে খোঁজার, সমস্যা সমাধানের সূত্র বোঝার জন্য দর্শক এখন হলে যায়। ‘সাঁঝবাতি’-ও সেই জায়গাটা ধরতে চাইছে।
দেব: সিনেমার ভাষা সময়ের সঙ্গে বদলাচ্ছে। মানুষ রিলেটেবল বিষয় খুঁজছে সিনেমায়। আগে নাচ-গানের ছবি চলত। হয়তো সেটার ওভারডোজ হয়েছে। তাই এই ভাষা বদল। কিছু দিন পরে এই বিষয়ও হয়তো মানুষ আর দেখবে না। বলবে হলে গিয়ে দুঃখ দেখব না। তখন নতুন করে ভাবতে হবে। ‘সাঁঝবাতি’ একাকিত্ব। বয়সকালে মানুষের একলা থাকার গল্প বলে। আমরা সকলেই সেই জায়গায় একদিন পৌঁছব।
তাই বলে দেবের মতো নায়ক ভৃত্যের চরিত্রে? কতটা রিস্ক?
দেব: আমার প্রযোজনায় ‘পাসওয়ার্ড’-এর চেয়েও বেশি রিস্ক। ওখানে তো শুধু ফিনান্সিয়াল রিস্ক ছিল। এখানে তো অভিনেতা দেবের রিস্ক! ভাবুন তো, আমার ভক্তরা আমায় সুপারহিরো হিসেবে দেখে। হঠাৎ ভৃত্যের চরিত্রে নেবে কি না? জানি না আমি। তবে ওই যে বললাম, আজকাল মানুষ দেখছি সিনেমা হলে কাঁদতে চায়। তাই এই ধরনের চরিত্রও করে দেখি কী হয়!
‘সাঁঝবাতি’ কি দেব আর পাওলি নতুন জুটিকে আনল?
দেব: আমি ব্যক্তিগত ভাবে জুটি বিষয়টা পছন্দ করি না। আমার মনে হয় অভিনেতার জুটি তৈরি হলে সে আটকে যাবে। একসময় আমি আর শুভশ্রী জুটি ছিলাম। আমি ও শ্রাবন্তী জুটি হয়েছি। কোয়েলের সঙ্গে দীর্ঘ দিন কাজ করেছি। রুক্মিণীর সঙ্গেও কাজ করছি। এ বার পাওলি। তার মানে তো এ রকম নয় যে আমি পাওলি ছাড়া এর পর কারোর সঙ্গে কাজ করব না।তবে এই ছবিতে অভিনেতা পাওলিকে নতুন করে চিনলাম। ও একটা ছবির জন্য মার্ডার ও করতে পারে। এতটাই প্যাশন ওর মধ্যে আছে। চিত্রনাট্য থেকে একটা ওর লাইন বাদ গেলে ও ঝগড়া করবে। এবং সেই লাইনটা এমন ভাবে বলবে, পরে পরিচালকেরা বুঝতে পারবেন এই লাইনটা বাদ গেলে ছবির জন্য কি খারাপটাই না হত! আমি আর পাওলি দু’জনেই দু’জনের সাইলেন্ট অ্যাডমায়ারার। ওর অভিনয়ের খিদেকে আমি শ্রদ্ধা করি। ‘সাঁঝবাতি’-তে মানুষ চাঁদু আর ফুলির অন্য এক রোম্যান্স দেখতে পাবে।
কেমন রোম্যান্স?
দেব: ছবিতে আমি বলছি না পাওলি আমায় বিয়ে কর। চাঁদু আর ফুলি রোজ ঝগড়া করে। একদিন তাদের ঝগড়া থেমে যায়। কেন চুপ তারা? ‘সাঁঝবাতি’ না বলা প্রেমের কথা বলে। দর্শক ছবিটা দেখলে সেটা বুঝবে।
লীনা আপনার গল্পে না বলা প্রেম বার বার এসেছে।
লীনা: প্রেমের উচ্চকিত কলরব আমার পছন্দ নয়। আমি সে সময়ের মানুষ যে সময়ে চিঠি লেখা হত। প্রেমপত্রের অপেক্ষা ছিল... সেই সময় আজও কোথাও কোথাও থেকে গিয়েছে।
দেব আপনি?
দেব: ভাললাগার অনুভূতিটাই আলাদা। সেটা ভাষায় প্রকাশ করেই বোঝাতে হবে কেন?
লীনা: তার মানেই তো না বলা প্রেম।
দেব আপনি তা হলে বিয়ের চেয়ে না বলা প্রেমে সহজ?
দেব: এখানে আবার বিয়ে কোথা থেকে এল? আরে, আমার বিয়ের বয়স হয়নি এখনও! অনেক কাজ বাকি আমার!