রাজনীতি আর গুপ্তবিদ্যায় বিশেষ আগ্রহী আমি, ফাঁস করলেন অভিনেতা কৌশিক

ফোন ফোনের মতো বেজে গেছে। হোয়াটসঅ্যাপও নজরে আসেনি ‘খড়কুটো’ আঁকড়ে থাকা কৌশিক রায়ের। তা বলে তাঁর মধ্যে সৌজন্যের অভাব, নিন্দুকেও বলবে না। নিজে ফোন করে আনন্দবাজার ডিজিটালকে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে অজান্তেই মিলেমিশে একাকার মেগার ‘সৌজন্য’ বাস্তবের কৌশিক।ফোন ফোনের মতো বেজে গেছে। হোয়াটসঅ্যাপও নজরে আসেনি ‘খড়কুটো’ আঁকড়ে থাকা কৌশিক রায়ের। তা বলে তাঁর মধ্যে সৌজন্যের অভাব, নিন্দুকেও বলবে না। নিজে ফোন করে আনন্দবাজার ডিজিটালকে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে অজান্তেই মিলেমিশে একাকার মেগার ‘সৌজন্য’ বাস্তবের কৌশিক।

Advertisement

উপালি মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২০ ১৪:৩৪
Share:

কৌশিক।

সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া চলেন কী করে?
কৌশিক: (হেসে ফেলে) কী করব! ব্যাপারটাকে এখনও মুঠোয় পুরতে পারিনি। ফলে, সোশ্যাল মিডিয়া আমায় আকর্ষণ করে না। তাই হয়ত সখ্য গড়ে উঠল না।
‘সৌজন্য’ও এরকম?
কৌশিক: মিল, অমিল দুটোই আছে আমাদের। কৌশিকও বাস্তবে ‘খড়কুটো’র সৌজন্যের মতোই কিছু প্রিন্সিপল মেনে চলে। তবে একটু ‘আনসোশ্যাল’, মানে সোশ্যাল মিডিয়া কম খেয়াল রাখে (হাসি)। ফলে, অনেক কিছুই মিস করি। সৌজন্য এরকম নয়। ভীষণ ঝকঝকে, সপ্রতিভ। জানে, কোনটা, কখন করতে হবে।
তা হলে বোনকে গুণগুণের জন্মদিনের পার্টিতে রিসর্টে যেতে বারণ করছে কেন?
কৌশিক: কারণ, সৌজন্য অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। ও জানে, ওই পরিবেশ এবং পরিস্থিতি ওদের বড় হওয়া এবং মূল্যবোধের সঙ্গে মিলবে না। তাই আগে ভাগেই বোনকে বারণ করেছে।
আপনি যৌথ পরিবারের ছেলে?
কৌশিক: আমি যৌথ পরিবারের ছেলে নই। কিন্তু মামার বাড়ি বিশাল ফ্যামিলির। সেই স্মৃতি মনে আছে সামান্য। তবে এর বাইরে বড় পরিবার দেখিনি।

নতুন ধারাবাহিকে সেই স্বাদটাই পটভূমিকায়। অভিনয়ে আনছেন কী করে?
কৌশিক: দেখুন, ধারাবাহিকের প্রথম থেকে ফ্যামিলি বন্ডিং দেখানো হচ্ছে। অভিনয়ে সেটাই প্রথম দিন থেকে ধরার চেষ্টা করেছি। যাতে কখনওই মনে না হয়, ব্যাপারটা আরোপিত। সিরিয়াল জুড়ে দুলাল লাহিড়ি, চন্দন সেন, সোহিনী সেনগুপ্তের মতো তাবড় তাবড় অভিনেতা। চাইলেও অভিনয়টা খারাপ করতে পারব না।
বড় তারকাদের সঙ্গে কাজের টেনশন, সংক্রমণ এড়িয়ে যৌথ পরিবারের মজা, দুটোই এনজয় করছেন?
কৌশিক: সত্যিই, অভিনয় করতে এসে আমরা একটা পরিবার হয়ে গিয়েছি। এবং সেটা এনজয়ও করছি। তবে সংক্রমণ নিয়ে একটুও ভয় নেই। বাড়ি বসে থেকেও নামী দামি মানুষেরা এই রোগে আক্রান্ত। আমাদের মতো ছা-পোষাদের ঘরে বসার উপায় কই? তা ছাড়া, কোভিড হলে আমার একার থোড়াই হবে। সবার হবে। এটাই বিশাল ভরসা। আর আমার খারাপ অভিনয় যাতে বাকিদের অভিনয় গ্রাফ নামিয়ে না দেয়, এই নিয়ে ভয় হচ্ছে। আসলে, আমি তো ভীষণ লিমিটেড অ্যাক্টর!

Advertisement

তৃণা এবং কৌশিক

এটা বিনয়?
কৌশিক: নাঃ! চালাকি। আমি আমার দর্শককে বেশি চিনতে দিতে চাই না। ধরা দিতে চাই না তাঁদের কাছে। ফ্লুকে চলি। গড়পড়তা মোটামুটি একই ধরনের অভিনয় করি। আর মেঘের আড়ালে থাকতে মানে নিজের ওপর আড়াল টানতে বেশি পছন্দ করি। এটাই আমার মোটো।
আত্ম বিশ্লেষণ করেন নাকি?
কৌশিক: করি তো। অন্য অভিনেতাদের অভিনয় দেখি। আর আফসোস হয়, ভাল থিয়েটার স্কুলিং না থাকার। ভাল হোমওয়র্ক না করার। ফলে, এই আড়াল টানার চেষ্টা আমার সীমাবদ্ধতাকেই ঢাকতে।

এত কিছু ‘নেই’, তবু রাজ চক্রবর্তীর হাত ধরে ছোটপর্দায় অভিনয়ে!
কৌশিক: ভয় কম আমার জীবনে। তাই অবাক হবেন না, ভবিষ্যতে যদি এটা ছেড়ে আরও অন্য কিছু এক্সপ্লোর করি। বা এক্সপ্লোর করতে ইচ্ছে করে।
যেমন?
কৌশিকঃ সবচেয়ে বেশি আগ্রহ রাজনীতিতে। ভীষণ পছন্দের বিষয় বলে খুঁটিয়ে খোঁজখবর রাখি। সমাজ সেবা করতেও ভাল লাগে। পয়সা রোজগার বা নাম করার চেয়েও কারোর জন্য, সমাজের জন্য কিছু করতে পারা বেশি আনন্দ, তৃপ্তি দেয়। আরও শুনবেন? গুপ্ত বিদ্যা বা অকাল্ট স্টাডির প্রতিও মারাত্মক আকর্ষণ। ওটা নিয়েও পড়াশোনা করতে পারি ভবিষ্যতে। এই রে, সব গোপন ইচ্ছে ফাঁস করে ফেলছি কথায় কথায়!
এমন এলোমেলো পুরুষের প্রেমেই মেয়েরা বেশি পড়ে। বউ আপনাকে সামলান কী করে?
কৌশিক: মারাত্মক ধৈর্য আছে বলে। ঠান্ডা মাথায় ট্যাকল করতে পারে বলে। আমি শিব আর ও পার্বতী বলে! (বাঁধ ভাঙা হাসি)।
সব প্রেম আপাতত গুণগুণের সঙ্গে? ছোট পর্দার সেরা জুটি হয়ে উঠতে পারবেন?
কৌশিক: গুণগুণের সঙ্গে সৌজন্যের। আর সেরা জুটি কী দেখে বলছেন? রেটিং দেখে? না, সোশ্যাল পেজের ভিউয়ার্স কমেন্টস দেখে? আমি কিন্তু নম্বরে বিশ্বাসী নই। রেটিং-এর কথা হলে বলব, আমার ধারণা একটা সিরিয়াল গল্পে হিট বা ফ্লপ হয়। হিরো-হিরোইনদের জন্য হয় না। সেদিক থেকে বলব, লীনাদির গল্প, লীনাদির তৈরি করে দেওয়া আমাদের কেমিস্ট্রি ক্লিক করে যাবে। আগেও আমাদের কাজ দর্শকেরা দেখেছেন, ভালবেসেছেন।

Advertisement

আমার ধারণা একটা সিরিয়াল গল্পে হিট বা ফ্লপ হয়। হিরো-হিরোইনদের জন্য হয় না।

অনুরাগিনীরা নাকি আপনার ‘ইনটেলেকচ্যুয়াল প্রেমিক’ আর ‘ইনটেলেকচ্যুাল ভিলেন’ অবতারেই মাত?
কৌশিক: তাই? এটা তো জানা ছিল না! আসলে আমার সঙ্গে যোগাযোগের উপায় কম। সোশ্যালে নেই। তবে রাস্তাঘাটে মন্তব্য শুনি। নিজে নেগেটিভ পার্ট করে বেশি তৃপ্তি পেয়েছি। দর্শকেরা সেটা বিশ্বাস করে যখন রি-অ্যাকশন জানান, মজা লাগে। এটাও আমার এক ধরনের চালাকি! নেগেটিভ না থাকলে পজিটিভের গুরুত্ব কমে যাবে। নেগেটিভ ছাড়া গল্পই জমবে না সিরিয়াল, সিনেমার (আবার হাসি)। তা ছাড়া, শুরুতে প্রচুর শুনতে হয়েছে, আমার চোখ নাকি ভীষণ ইনোসেন্ট। ওই একটা শব্দ আমায় এত বোর করে দিয়েছিল যে ইচ্ছে করেই নেগেটিভ চরিত্র বেছেছি। চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি নিজেকে, দেখি তো ইনোসেন্ট চোখে নেগেটিভিটি ফোটাতে পারি কিনা!
রাজ চক্রবর্তীর আগামী ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’তে অভিনয় করেছেন?
কৌশিক: হ্যাঁ, ছোট কিন্তু দারুণ ইন্টারেস্টিং চরিত্র। রাজদা যেমন দেন আর কী। এর বেশি এখন কিছু বলব না। তবে পার্নোর সঙ্গে কাজ করে খুব ভাল লেগেছে। আর রাজদা আমার মেন্টর। ওঁর সব কিছুতেই আছি আমি।
যাতে মেন্টরের হাত মাথায় থাকে? বড় পর্দায় সুযোগ পান?
কৌশিক: এমনিতেই রাজ চক্রবর্তী, লালুদা বিনা কারণে আমায় প্রচুর সাহায্য করেছেন। সুযোগ দিয়েছেন। তাই এই ভাবনা নিয়ে শুধু ওঁরা কেন কারও সঙ্গেই কাজ করি না। নিজেকে ঘষেমেজে বরং আরও তৈরি করছি। যাতে নিজেকে আরও বেশি করে মেলে ধরতে পারি।
‘বহিরাগত’ কৌশিকের কাছে ইন্ডাস্ট্রি ভীষণ ‘আপন’?
কৌশিক: একদম। ভাবতেই পারিনি আমার মতো বহরমপুর থেকে আসা, এমবিএ করা চাকুরেকে ইন্ডাস্ট্রি এত ভালবাসবে, সুযোগ দেবে, আপন করে নেবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement