তৃণা সাহা।
টিকটক ভিডিয়ো থেকে বাস্তবে জাম্পকাট। বিয়ের পিঁড়িতে নীল ভট্টাচার্য-তৃণা সাহা। রিল-রিয়্যালে নিজের বিয়ে মিলিয়ে মহাব্যস্ততা। পর্দার হবু হাজব্যান্ড ‘বাবিন’ কৌশিক রায়ের বায়না, ৪ ফেব্রুয়ারি ‘গুনগুন’-এর সত্যি বিয়ের দিন কিছুতেই শ্যুটিং করবেন না! কেন? নায়িকাকে ফোনে ধরতেই আনন্দবাজার ডিজিটাল জানতে পারল এ টু জেড...
গসিপের চোটে, না গসিপ বন্ধ করতে বিয়ের পিঁড়িতে?
তৃণা: (লাজুক গলায় হাসি) বলতে পারেন দুটোই। একটু যেন বাড়াবাড়িই হয়ে যাচ্ছিল। তা ছাড়া, একে অন্যকে ছেড়ে থাকতেও ভাল লাগছিল না। ফলে, বিয়ের সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম আমরা। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি নীল আর আমি বিয়ে করছি। ১৪ তারিখ গ্র্যান্ড রিসেপশন।
টিম ‘খড়কুটো’ সঙ্গীত, মেহেন্দি, হলদি...সব অনুষ্ঠানের আবার মহড়া দিচ্ছেন?
তৃণা: গোটা টিম লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ছুটির আগাম দরখাস্ত দিয়ে রেখেছেন। আমার বিয়েতে হইচই করবেন বলে। ‘বাবিন’ মানে কৌশিক রায় বলেই দিয়েছেন, আমার বিয়ের দিন শ্যুটিং করবেন না! (হাসি)
আপনার প্রস্তুতি কতদূর?
তৃণা: মা-বাবা নিয়ে গিয়ে লাল বেনারসী আর গয়না কিনে দিয়েছেন। আমিও মাকে শাড়ি কিনে দিয়েছি। ব্যস, ওটুকুই হয়েছে। সঙ্গীত, মেহেন্দি, হলদি-তে কী পরব, কিচ্ছু ঠিক হয়নি। কী করে হবে? আমার যখন কাজ শেষ হয়, ডিজাইনারের বুটিক, শাড়ির দোকান বন্ধ হয়ে যায়। ডিজাইনাররা অনেক ধরনের পোশাকের ছবি তাই পাঠিয়ে রেখেছেন। সেটুকু বাছারও সময় পাচ্ছি না!
ইন্ডাস্ট্রি বিয়েতে না রিসেপশনে?
তৃণা: দুটোতেই। ইন্ডাস্ট্রির খুব সিলেক্টিভ কিছু মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। বাকি আত্মীয়, পরিজন, বন্ধু-বান্ধব-- এঁরাই থাকবেন।
নীলকে কী উপহার দেবেন?
তৃণা: হিরের আংটি। এনগেজমেন্টের দিন। ওই অনুষ্ঠানও আলাদা করে হবে। তবে তারিখ এখনও ঠিক হয়নি।
পছন্দের ডিশগুলো মেনুতে থাকছে তো?
তৃণা: একদম, বিশুদ্ধ বাঙালি খানা আমার বিয়েতে। বাসন্তী পোলাও, চিংড়ি মাছের মালাইকাড়ি, ভাপা মাছ, মটন কষা। মিষ্টির তালিকায় পাটিসাপটা, নলেন গুড়ের সন্দেশ... কিচ্ছু বাকি থাকবে না।
রিল আর রিয়্যালের বিয়ের সময় যেন প্ল্যান করেই হচ্ছে?
তৃণা: পুরোটাই কাকতালীয়। আমার কোনও কিচ্ছু প্ল্যান করে হয় না। সবটাই হয়ে যায়। আমি কোনও দিন প্ল্যানই করিনি অভিনয়ে আসব। ২০১৬-য় অডিশন দিয়েছিলাম ‘খোকাবাবু’র জন্য। ঝোঁকের মাথায়। ফলে, কতদিন ছোট পর্দায় কাজ করব, কবে থেকে বড় পর্দা, ওয়েব সিরিজে কাজ শুরু করব-- ভাবিই না। যখন যা আসছে, ফেস করছি।
‘গুনগুন’-এর সরলতা, স্পষ্টবক্তা ভাব আমায় টেনেছে
হনিমুনের প্ল্যান হয়েছে, নাকি সেটাও...
তৃণা: এটা হয়েছে। গ্রিস আমাদের দু’জনেরই হনিমুন ডেস্টিনেশন। (হো হো হাসি)
আপনি ইক্যুয়াল্টু গুনগুন নাকি! একদম ওই সুরে কথা...
তৃণা: ওই জন্যেই এই চরিত্রের অফার আসতেই এক কথায় রাজি হয়েছি। ‘গুনগুন’-এর সরলতা, স্পষ্টবক্তা ভাব আমায় টেনেছে। এগুলো আজকের দিনে ভীষণ দুর্লভ। আমরা যেন বড্ড জটিল ইদানিং। আমিও আমার কাছের মানুষদের সঙ্গে এতটাই খোলামেলা। তবে ‘গুনগুন’-এর মতো সবার সঙ্গে নয়।
পর্দার শ্বশুরবাড়ি আর আপনার পরিবার নাকি একদম এক?
তৃণা: একদম। সৌজন্য যেমন যৌথ পরিবারে বড় হয়েছে, তেমনি আমিও। আমার বাড়িতেও ঠাকুমা, দাদু, জেঠু, কাকার ভিড়। ফলে, সেটে অভিনয় কম করতে হয়। যৌথ পরিবারের অনুভূতিটাও ফিল করতে পারি। আমাদের বাড়িতেও কোনও উৎসব এলে সবাই মিলে এ রকমই হাসি-ঠাট্টা, লেগ পুলিং করি একে অন্যের।
নীলের বাড়ি?
তৃণা: ছোট, অনু পরিবার। নীল ওর মা-বাবার সঙ্গে ভীষণ শান্তিতে, আনন্দে থাকে। সেটে যা হচ্ছে বাস্তবে একদম উল্টো।
‘খড়কুটো’য় আপনার হবু বরের সঙ্গে বিয়ে, আলাপ পুরোটাই একটা ডিল। বাস্তবে?
তৃণা: আমরা ২০১১-য় এমবিএ-র জন্য ক্যাট ক্লাস করতাম। নীল আর আমি তখন একে অন্যকে চিনতামই না। একবার ক্লাসে হলুদ ড্রেসে নীল নাকি আমায় দেখেছিল। তখনই নাকি ওর ভাল লাগতে শুরু করে। আমার ওসব হয়-টয়নি। পাত্তাই দিতাম না তখন ওকে। আমার গ্রুপ ছিল আলাদা। তাদের সঙ্গেই ব্যস্ত থাকতাম। একবার বন্ধুরা আসেনি। ভীষণ বোর হচ্ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম হাসিমুখে আমার দেখে তাকিয়ে নীল। সেদিনই প্রথম ভাল করে দেখেছিলাম। বোরডম কাটাতে ওর পাশে বসেওছিলাম প্রথম।
তখন আপনি ওজনদার ছিলেন... প্রায় ৭০-৭২ কেজির!
তৃণা: একদম। প্রথম অডিশনে যখন ওজন ঝরানোর কথা বলেছিলেন প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তী, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম বিষয়টা। সেই থেকেই ওজন কমিয়ে টোনড আমি।
এর আগে আনন্দবাজার ডিজিটাল আপনাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন রেখেছিল নীলের কাছে। নীল সটান বলেছিলেন, আপনাদের মধ্যে কিচ্ছু নেই...! শুধুই ‘ভাল বন্ধু’ আপনারা।
তৃণা: (হেসে ফেলে) আরে, আমরা আমাদের মা-বাবাদের কাছেও বলতে পারিনি অনেক দিন। যদিও ওঁরা মোটেই বিশ্বাস করতেন না আমাদের কথা। খালি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন করতেন সম্পর্ক নিয়ে। শেষে একদিন স্বীকার করলাম। সবটা শুনে নীলের মা-বাবা খুব খুশি। ওঁদের সঙ্গে নিয়মিত কথা হত। পছন্দও করেন আমায়। আমার মা-ও খুশির গলায় নীলকে বলেছেন, "বুঝতাম সবই। তোমরা যতই লুকোনোর চেষ্টা কর।"
আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি নীল আর আমি বিয়ে করছি
প্রেম, বিয়ের প্রপোজ কে আগে করেছিল?
তৃণা: এখানে ছোট্ট টুইস্ট আছে। ২০১১-র ফ্রেন্ডশিপ ডে-তে আমাদের বন্ধুত্ব শুরু। তখনও প্রেম নেই। ওই বছরের অক্টোবরেই আমি দিল্লিতে চলে যাই। নীল কলকাতায়। ২০১৫-য় ফিরলাম শহরে। আবার যোগাযোগ। এবার যেন একটু অন্য রকম অনুভূতি! শেষে ২০১৬-র ৮ জুন নীলের জন্মদিনে আমি সোজাসুজি জানিয়ে দিলাম, ওর প্রতি আমি দুর্বল। নীল কিন্তু সেদিন আমায় কোনও উত্তর দেয়নি।
তার পর?
তৃণা: ২০১৭-র ২১ জানুয়ারি আমার জন্মদিনে নীল প্রপোজ করল। এর পর আর দেরি করিনি কেউই। আর বিয়ের কথা এই তো এক রবিবারে ভিডিয়ো কলে নীল বলল। বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলে আমি সায় দিলাম।
পর্দার ‘গুনগুন’-এর কী হবে?
তৃণা: সৌজন্যকে বিয়ে করবে। চিত্রনাট্যে যা যা থাকবে, হবে-- সবটাই করবে। (হাসতে হাসতে) শো মাস্ট গো অন। যেমন চলছিল, ঠিক তেমনি ভাবেই। বিয়ে কাজ থামাবে না।