ইন্দ্রাশিস এবং অনিন্দ্য
সুদেষ্ণা রায়-অভিজিৎ গুহ মানেই সম্পর্ক আর টক-ঝাল-মিষ্টি প্রেমের গল্প। কখনও বন্ধুত্ব, কখনও দাম্পত্যের হরেক সুতোয় বোনা তাঁদের সিরিজ, ছবি। ২০১৮-য় তেমনই এক ভালবাসার গল্প ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন পরিচালক-জুটি। নাম ‘আমরা ২গে’দার’। আর কিছু দিনের মধ্যেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘ক্লিক’-এ মুক্তি পেতে চলেছে সেই সিরিজ। কাহিনির কেন্দ্রে এক নয়, দুই জোড়া সমকামী যুগলের ভালবাসা।
আনন্দবাজার অনলাইনকে সুদেষ্ণা বলেছেন, ‘‘এই সিরিজ যখন শ্যুট হয়, শহর কলকাতা তখন সমকামিতা নিয়ে ততটাও সাহসী ছিল না। আইনও পাশ হয়নি। ফলে মনে হয়েছিল, এই ভালবাসারও উদযাপন দরকার। সেই ভাবনা থেকেই এই সিরিজ।’’ পরিচালকের দাবি, বিষয়বস্তু সাহসী। কিন্তু তথাকথিত ভাবে সাহসী নয় সিরিজের কোনও দৃশ্য। তবে এমন বিষয়ে ছবির জন্য আলাদা করে কোনও কর্মশালা হয়নি। আড্ডার মেজাজেই পরিচালক জুটি আলোচনা করেছিলেন ছবির জোড়া যুগল ইন্দ্রাশিস রায়-অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, পূজারিণী ঘোষ-পৌলমী দাসের সঙ্গে। তার পরে সোজা শ্যুটিংয়ে। সিরিজের কথা বলতে গিয়ে সুদেষ্ণা শুনিয়েছেন আরও এর অজানা গল্প। তাঁর কথায়, চেনা শহরেই বাস করে অন্য এক কলকাতা। যেখানে সমকামী ছেলে বা মেয়েকে সমর্থন জানিয়ে স্বামীর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয় সন্তানের মাকে। পরিচালক নিজের চোখে দেখেছেন চোখ ভিজিয়ে দেওয়ার মতো সেই ঘটনা। এই সিরিজের গল্পে রয়েছে তার ছায়াও। ইন্দ্রাশিস-অনিন্দ্যের ভালবাসায় তাই পূর্ণ সমর্থন জানাবেন অনিন্দ্যের পর্দার ‘মা’ পল্লবী চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে দেখা যাবে সুদীপ্তা চক্রবর্তী, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, আরজে সায়ন্তিকা, আরজে শেখর, এবং সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় ওরফে সিধুকে। সিরিজের কাহিনিকার সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়। সম্পাদনায় শান্তনু মুখোপাধ্যায়। সঙ্গীত পরিচালনায় রাহুল তন্ময় শুভ্র।
কেমন লাগল ইন্দ্রাশিসের সঙ্গে প্রেম করে? আনন্দবাজার অনলাইনকে অনিন্দ্য বলেন, ‘‘বিষয়টি খুব সহজ ছিল না। ২০১৮-য় যখন সিরিজের শ্যুট শুরু করি তখনই বাবার ক্যানসার ধরা পড়ে। আমার শ্যুট শেষ, বাবার জীবনও! অভিনেতাদের এ সব নিয়েই কাজ করে যেতে হয়। ফলে, কাজে ফাঁকি দিইনি। অভিনয়ের খাতিরে যা যা করতে হয়েছে সব মসৃণ ভাবেই করেছি।’’ সেই সময়ে অভিনেতা কলকাতায় একা! শ্যুটে ব্যস্ত। বাবা অসুস্থ হয়ে দিল্লিতে। এক দিকে বাবাকে নিয়ে দমচাপা অনুভূতি। অন্য দিকে, অভিনব চরিত্র। শ্যুটিং ফ্লোরই কি তাঁকে টাটকা অক্সিজেন জোগাত? অনিন্দ্যর দাবি, প্রতিটি চরিত্র, প্রত্যেক ফ্লোর আগেও তাঁকে নতুন করে বাঁচার রসদ জুগিয়েছে, এখনও জোগায়।
বিপরীতে ইন্দ্রাশিস। চরিত্র সমকামীর। বাড়তি কোনও চাপ কিন্তু একেবারেই অনুভব করেননি বলে দাবি অভিনেতার। আলাদা করে কোনও কর্মশালাও হয়নি। বরং, ইন্দ্রাশিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বেরই প্রতিফলন ঘটেছে সিরিজে। বাকিটা পূরণ করে দিয়েছে দু’জনের অভিনয় দক্ষতা।
অনিন্দ্য আরও জানিয়েছেন, সমকামীর চরিত্র তিনি সম্ভবত এর আগে করেননি। এই চরিত্রে তাঁর কাজের কথা শোনার পরে পরিচিত অনেকেই নাকি যথেষ্ট বিস্মিতও। তবে অভিনেতা বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। বরং হাসতে হাসতে বলেছেন, ‘‘এক বারও ভাবিনি, যদি সিরিজ জনপ্রিয় হয়, আমার গায়ে সমকামীর তকমা লেগে যাবে। আমায় বার বার হয়তো এমন চরিত্রেই ডাকা হবে। আমার কোনও অস্বস্তি নেই এ সবে।’’ অনিন্দ্যর যুক্তি, একই চরিত্র করলেও কাজের সংখ্যা তো বাড়বে! তিনি তাতেই খুশি।
সুদেষ্ণা-অভিজিতের নতুন সিরিজে চেনা ছকের বাইরে হেঁটে এক জোড়া পুরুষ পরস্পরের প্রেমে অন্ধ। এক রেডিয়ো জকির সঙ্গে তুমুল প্রেম একটি ছেলের! বিষয়টি জকি-র মহিলা সহকর্মীও মেনে নিতে পারেন না। পাশাপাশি, ছেলেটির বাবাও এই প্রেম বা বিয়ের ঘোর বিরোধী। পাশে শুধু মা। গল্প এগোলে জানা যায়, এক জোড়া নারীও একই ভাবে চোখে হারান একে অন্যকে। দু’জোড়া প্রেম কি সফল হবে? মজাদার সংলাপ আর রসিকতায় মোড়া ‘আমরা ২গে’দার’-এর মহিলা পরিচালকের বক্তব্য— সেটা সিরিজ বলবে। কিন্তু এর হাত ধরে যদি সমাজের বন্ধ জানলা খোলে, মন্দ কী?