ছবির দৃশ্যে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং শ্রীলা মজুমদার।
সংবাদ কি কাব্য? তাকে যেমন খুশি স্বার্থ আর ক্ষমতার জন্য ব্যবহার করা যায়? সম্পর্ক কি এক পথের? কমিটেড রিলেশনে দুই মানুষের মাঝে যদি অন্য এক ভাললাগার মানুষ আসে? সেই অবস্থানের যথার্থতা?
ইন্দ্রনীল ঘোষের পরিচালনায় ‘শিরোনাম’ এই দুই বিষয়ের মধ্যে তৈরি করেছে দৃশ্য, ঘটনা, সুর। এই ছবির অভিনয়ের স্বরও বেশ জোরালো— যিশু সেনগুপ্ত, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অঙ্কিতা চট্টোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। ‘শিরোনাম’ প্রথম প্রকাশ্যে আসছে হায়দরাবাদ বেঙ্গলি ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার’ বিভাগে।
‘‘আমার প্রথম ছবি হায়দরাবাদ বেঙ্গলি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হবে। ওখানে সিনেমার আরও মানুষজন থাকবেন। আলোচনা হবে। ছবি নিয়ে চর্চার জায়গা ওটা। আমার ছবিটা অনেক দিন থেকেই দেখানোর অপেক্ষায় ছিল। হায়দরাবাদ থেকে পার্থ চাইলেন ছবিটা। আমি সত্যি ওর কাছে কৃতজ্ঞ,’’ বললেন ইন্দ্রনীল।
পরিচালক ইন্দ্রনীল ঘোষ তাঁর ছবি তৈরির গোড়ার কথায় চলে গেলেন।
সে এমন এক দিন ছিল যখন তাঁরা দুই ভাই মুখোমুখি। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ আর আর্ট ডিরেক্টর ইন্দ্রনীল ঘোষ নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন।
আরও পড়ুন, কয়েক কিলো ওজন কমালেন রাম কপূর, লজ্জায় পড়বেন সোনম-সোনাক্ষীরাও
কথোপকথন কিছুটা এ রকম...
ঋতুপর্ণ: ‘তুমি ছবি করছ? লিখছে কে? তুমি তো আর লিখবে না।’
ইন্দ্রনীল: ‘আমি কেন লিখতে যাব?’
ঋতুপর্ণ: ‘দীপান্বিতা লিখছে তো? আচ্ছা কী ব্যাপার? আমি তো কিছুই জানি না! কাল দুপুরে যাচ্ছি আমি চিত্রনাট্য শুনতে। ওখানে খাব।’
কথামতো তিনি এসেছিলেন। ‘‘দীপান্বিতা দাদাকে চিত্রনাট্য পড়ে শুনিয়েছিল। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম,’’ বললেন ইন্দ্রনীল।
চিত্রনাট্য শোনার পরে পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ দাদাসুলভ ভঙ্গিতেই বলেছিলেন, ‘‘তুমি প্রথম ছবি করছ। সেখানে এত শক্ত বিষয় কেন? দীপান্বিতার ‘ময়নামতীর বিয়ে’-ই তো আছে। চমৎকার গল্প। সেটা নিয়ে ছবি কর।’’
শুটিংযে ব্যস্ত ইন্দ্রনীল।
দাদার থেকে ভাই কোনও কিছুতেই কম যান না, ‘‘আমার কাছে এটা কোনও শক্ত বিষয় নয়। এটাই সোজা। আমি এ ছবিটাই করব,’’ সাফ জবাব ইন্দ্রনীলের।
সেই থেকে শুরু ‘শিরোনাম’।
প্রযোজক কৌস্তভ রায়ও গল্প শুনেই ছবিটা করতে চান। ইতিমধ্যেই ‘শিরোনাম’ লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল মোশন পিকচারস্ অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হয়েছে। মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও মনোনয়ন পেয়েছে।
ইন্দ্রনীলের কথায়: ‘‘আমি আমার প্রথম ছবিতে কোনও জ্ঞান দিতে চাইনি। দীপান্বিতাই গল্প লিখেছে। যিশু আর স্বস্তিকা অসাধারণ অভিনয় করেছে। আর শীর্ষ তো ক্যামেরা থেকে প্রোডাকশন নিজের ইচ্ছায় সব সামলেছে। আমি অভিভূত।’’
কেমন ছিল অভিনয়ের জায়গা?
জানা গেল, স্বস্তিকা একটা কটন পোশাক পরে মেকআপ ছাড়া দুর্ধর্ষ অভিনয় করেছেন এই ছবিতে। ‘‘স্বস্তিকাকে বলেছি, জল দিয়ে মুখ ধুয়ে আয়। ও তাই করেছে। বলেছি, চুলটা নিজে হাতে ঘেঁটে দে তো, যাতে উস্কোখুস্কো দেখায় ও সেটা করেই ফ্লোরে এসছে,’’ বললেন ইন্দ্রনীল।
আরও পড়ুন, জামা পরা আর খোলা দিয়ে অভিনেত্রীর সাহস বিচার করবেন না: ঋ
সবাই আসলে গল্পের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। ‘‘ইলেকট্রনিক মিডিয়া আমাদের ভাবনাচিন্তা, বুদ্ধি, সামাজিক অবস্থান— সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এর বাইরে আলাদা করে আমরা আর কিছু ভাবতে পারি না। এই জায়গাটাই ছবি ধরতে চেয়েছে। শুধু যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দিকে আঙুল তোলা হয়েছে তা নয়। তার ভেতরকার ভালকেও এ ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। বললেন লেখক দীপান্বিতা ঘোষ মুখোপাধ্যায়। এই প্রেক্ষিতে এসেছে কমিটেড রিলেশনে হঠাৎ আসা ভাললাগার কথা।
ছবির আর্ট ডিরেকশন, পরিচালনা, পোশাক, সাউন্ড— সব কিছুর দায়িত্বেই আছেন ইন্দ্রনীল। ছবিতে ফলিও সাউন্ডের ব্যবহারের সময়ও ইন্দ্রনীল সারা রাত ফলিও সাউন্ড আর্টিস্টের সঙ্গে কাজ করেছেন। রাজা নারায়ণ দেব ছবির ভাবনা অনুযায়ী মিউজিকের ব্যবহার করেছেন। কোনও কৃত্রিম শব্দ এ ছবিতে শোনা যাবে না।
‘‘বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। সব নিজের ঘাড়ে নিয়েছি। কস্টিউমের সময় ঠিকমতো লোক পাচ্ছি না... খুব মনে হয়েছে দাদাকে। খুব মিস করি আমি দাদাকে। এতগুলো দিন চলে গেল। আজও ওর ছবিগুলো ইচ্ছে থাকলেও দেখতে পারি না...!’’ নিজের ছবির কথা বলতে গিয়ে বেরিয়ে আসে দাদার কথা...
তাঁর কাছেই আছে ঋতুপর্ণ ঘোষের চিত্রনাট্য।
নাহ্, তিনি সেই শব্দরাশির কাছে আজও যেতে পারেন না... হয়তো পারা যায় না!
কিন্তু ‘শিরোনাম’ এ বার হায়দরাবাদে সিনেমাপ্রিয় মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। সঙ্গে থাকবেন ছবির নায়িকা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। পরিচালক আর চিত্রনাট্যের লেখক।
(সিনেমার প্রথম ঝলক থেকে টাটকা ফিল্ম সমালোচনা - রুপোলি পর্দার বাছাই করা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগ।)
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।