জাভেদ আলি। ছবি: সংগৃহীত।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন বলিউডের সঙ্গীতশিল্পী জাভেদ আলি। অনুষ্ঠানের আগে কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে। কেকে, পুরনো দিনের গান, নতুন শিল্পী এবং স্বজনপোষণ নিয়ে নিজের মতামত জানালেন শিল্পী।
প্রশ্ন: জাভেদ হোসেন থেকে জাভেদ আলির সফর, ফিরে তাকালে কী মনে হয়?
জাভেদ: অতীতের কথা ভাবলে মনে হয় এটা কী ভাবে হয়ে গেল! কখনও ভাবিনি, এ রকম হবে। ছোটবেলায় নাম বদলে ফেলেছি। উস্তাদ গুলাম আলি খান-কে গুরু মানতাম। ওঁকে অনুসরণ করেই গানের জগতে আসা। ওঁর গান শুনে শিহরন জেগেছিল। তাঁর নামের সঙ্গে মিল রেখেই নিজের এই নাম।
প্রশ্ন: বর্তমানে গানের জগতে রিমেকের ছড়াছড়ি। কী ভাবে দেখেন?
জাভেদ: ঠিক-ভুল বলা মুশকিল। শ্রোতারা পছন্দ করছেন। রিমেকে এমন কোনও ফ্যাক্টর রয়েছে, যে কারণে দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে পারছে। কম্পোজিশনে নতুনত্ব আসাটা খারাপ কিছু নয়।
প্রশ্ন: পুরনো দিনের গানে সুরের মূর্ছনা ছিল। এখনকার গানে তা প্রায় নেই বললেই চলে, সমর্থন করেন?
জাভেদ: না, বিষয়টা ঠিক এ রকম নয়। তখন সকলে একসঙ্গে বসে গান বানাতেন। সময়ের সঙ্গে বদল এসেছে। গানের স্টাইল, প্যাটার্নেও বদল এসেছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। না হলে এক জায়গায় আটকে পড়ে থাকতে হবে। এখনও অনেক ভাল কম্পোজিশন হচ্ছে। প্রীতমদা, এআর রহমান স্যর, অমিত ত্রিবেদী, মিঠুন, বিশাল, শেখর, শঙ্কর-এহসান ভাই ভাল করছেন। সব গান তো একই রকমের হবে না। গানের নানা স্বাদ রয়েছে। খুব অল্প সময়ে অনেক গান আসছে। একটা গান ঠিক করে শুনতে না শুনতেই নতুন গান চলে আসছে। গানের সংখ্যা অত্যধিক হওয়ার ফলে গানের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে না।
প্রশ্ন: বর্তমানে রিয়্যালিটি শোয়ের দৌলতে অল্প সময়ে পরিচিতি পেয়ে যাচ্ছেন নতুন শিল্পীরা। কিন্তু সেই জনপ্রিয়তার মেয়াদ এক বছর। তার পরে আর দেখা যায় না কেন তাঁদের?
জাভেদ: সব কিছুর একটা উপযুক্ত সময় আছে। সঠিক সময়ের আগেই সব কিছু পেয়ে গেলে আগামী দিনে কী করবেন তাঁরা? ধাপে ধাপে সব কিছু পেতে হবে। তারকা হয়ে গেলে সবার আগে যেটা হয়, অনুশীলন বন্ধ হয়ে যায়। এটা করা যাবে না। অনুশীলন বন্ধ হয়ে গেলে উন্নতি হবে কী করে! এক দিনে সব পেয়ে গেলে মুশকিল! এমন অনেক শিল্পীকে দেখেছি, যাঁরা এক বছরে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে গিয়েছেন। কিন্তু পরের বছর কোনও কাজ পাননি। মাটিতে পা রাখতে হবে, কাজে নতুন ভাবনা নিয়ে আসতে হবে।
প্রশ্ন: একটা সময়ের পরে অন্য শিল্পীদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়, আপনি এটা মেনে চলেন?
জাভেদ: দর্শক বা শ্রোতাদের টানা একই সুর, একই কণ্ঠ ভাল লাগে না। সে ক্ষেত্রে জায়গা দিতেই হয়। তবে হ্যাঁ, যদি কোনও শিল্পী সময়ের সঙ্গে নিজের গানের মধ্যে বিবর্তন নিয়ে আসেন, তা হলে তিনি লম্বা সময় ধরে থাকতে পারবেন।
প্রশ্ন: গান অনুযায়ী এক্সপ্রেশনের বদল কতটা জরুরি?
জাভেদ: ওটা আপনা থেকেই অনুভবের কারণে চলে আসে। আলাদা করে সচেতন ভাবে করতে হয় না।
প্রশ্ন: এক জন শিল্পীর মনে বিচ্ছেদ বা অন্য আঘাত থাকে…
জাভেদ: এক জন শিল্পীর মনে কোথাও না কোথাও একটা দুঃখ থাকেই, যা তাঁরা ব্যক্ত করতে পারেন না। কিন্তু তাঁর গানের মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। যা সহজেই অনুভব করা যায়।
প্রশ্ন: স্বজনপোষণ নিয়ে কী বলবেন?
জাভেদ: আমি এখনও নিজে স্বজনপোষণের মুখোমুখি হইনি। সুতরাং, এ বিষয়ে বলতে পারব না।
প্রশ্ন: নতুন শিল্পীদের কী পরামর্শ দেবেন?
জাভেদ: ছবির গানের বাইরে স্বতন্ত্র গান করা উচিত। নিজের গানে কী কী নতুনত্ব আনা যায়, কী ভাবে গাইলে অন্য রকম শুনতে লাগবে ইত্যাদি নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবতে হবে। তা ছাড়া আমি জ্ঞানী ব্যক্তি নই যে, সকলকে জ্ঞান দেব। আমি নিজেই রোজ কিছু না কিছু শিখি।
প্রশ্ন: মানুষ গান শোনার থেকে কি শিল্পীকে বেশি দেখেন?
জাভেদ: গায়ক কী জামা পরল, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ সে গানটা কেমন গাইল। গান অসাধারণ হলে চপ্পল পরে মঞ্চে উঠলেও কোনও ব্যাপার নয়। জুতো, জ্যাকেট নয়, আপনার কাজটাই পরিচিতি এনে দেবে আপনাকে।
প্রশ্ন: ইউটিউবের দৌলতে সহজেই গান মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু গানের মান পড়ে যাচ্ছে। কী মনে হয়?
জাভেদ: শ্রোতারা কী চাইছেন, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সমাজমাধ্যমে থাকা জরুরি। দর্শকের সঙ্গে জুড়ে থাকতে হবে।
প্রশ্ন: কলকাতায় এসে কেকে-কে কতটা মিস্ করছেন?
জাভেদ: ভীষণ মিস্ করছি। কেকে প্রাণবন্ত সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। আজও নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে গেলেই ওঁর কথা মনে পড়ে। তিনি যে ভাল মনের মানুষ, তাঁর গানেও তার প্রতিফলন মিলত। আমাদের খুব বেশি দেখা হয়নি। কিন্তু যত বার দেখা হয়েছে, মনে রাখার মতো। কেকের গান ভোলার মতো নয়।