এ বছর গরমকালে শুভা মুদগল দিল্লির একটা স্টুডিয়োতে গান রেকর্ড করতে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে তাঁর গাড়ির চালক প্রশ্ন করেন, “এটা কোন রেকর্ডিং?” উনি জানান যে, অমুক ছবির গান রেকর্ড করতে তিনি যাচ্ছেন। তা শুনে চালক খুব খুশি। বড় পর্দায় ছবি মুক্তি পেলে অনেক বেশি তার সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন তিনি। শুভার ভাষায়, তাঁর সারথি নাকি এখন সবথেকে বেশি আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন কবে সে ছবি বড় পর্দায় তিনি দেখতে পাবেন।
গল্ফ গার্ডেনের একটা কফি শপে বসে এই গল্পটা করছিলেন পরিচালক স্পন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিনিবাসী স্পন্দন অনেক দিন ধরেই ডকুমেন্টারি ছবি পরিচালনা করছেন। ২০১২তে জাতীয় পুরস্কারে স্পেশাল জুরি মেনশন পেয়েছিলেন ‘ইউ ডোন্ট বিলং’ ছবিটির জন্য। এ বার হাত দিয়েছেন প্রথম বাংলা ফিচার ফিল্ম পরিচালনায়। নাম ‘সিটি অব ডার্ক’। যে ছবির জন্য সুর করছেন ‘ইন্ডিয়ান ওশান’। অর্থাত্ রাহুল রাম আর অমিত কিলম। ছবিটির বিষয় দুই বাঙালি। দু’জনের আলাদা আলাদা জায়গায় দেখা হয়, তৃতীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। এই দেখাসাক্ষাতের মধ্যে গড়ে ওঠে এক সম্পর্ক এবং তাকে ঘিরে যে টানাপড়েন তৈরি হয় তা নিয়েই স্পন্দনের ছবি।
সে ছবির মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। ‘ইন্ডিয়া ওশান’য়ের ড্রামার অমিত থাকছেন এক স্পেশাল ক্যামিওতে। হিন্দি সিনেমায় এর আগে সুর করেছে ‘ইন্ডিয়ান ওশান’। ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’তে সুর করার পরে ওই দলের গান ব্যবহার হয়েছে ‘পিপলি লাইভ’, ‘গুলাল’ ও ‘সত্যাগ্রহ’ ছবিতে। সিনেমায় জনপ্রিয় হয়েছে তাঁদের ‘আরে রুখ যা ইয়ে বন্দে’ আর ‘দেশ মেরে রঙরেজ ইয়ে বাবু’ গানগুলো।
কিন্তু হিন্দি ছেড়ে হঠাত্ বাংলা ছবিতে ‘ইন্ডিয়ান ওশান’য়ের গান কেন? “ছবির গল্পের পটভূমি দিল্লি। চেয়েছিলাম সেটা একটা ব্যান্ড ফিল্মের মিউজিকটা করুক। কোনও একজন সঙ্গীত পরিচালক নন। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে ‘ইন্ডিয়ান ওশান’ দিল্লি শহরটা ভাল চেনে। ওরা আমার সিনেমার ভাষাটা বোঝে। আমি আর সহপ্রযোজক শিলাদিত্য বোরা আর বিনয় মিশ্র মিলে ঠিক করেছি আরও যে ক’টা প্রোজেক্ট আমরা করব প্রত্যেকটাতেই একটু অন্য ধরনের মিউজিক রাখব। পরের বাংলা ছবিতে আমি ‘ইন্ডিয়ান ওশান’য়ের প্রতিষ্ঠাতা- সদস্য সুস্মিত সেনের সঙ্গে কাজ করতে চলেছি,” বলছেন স্পন্দন।
এর আগে পরিচালকের সঙ্গে অনেক ছোট ছোট ফিল্মে কাজ করেছে এই ব্যান্ড। কিছু দিন আগে এমটিভি-র জন্য একগুচ্ছ শর্টফিল্ম বানিয়েছিলেন স্পন্দন। নাম রেখেছিলেন ‘তন্ডানু’। শর্টফিল্মগুলো ছিল বিভিন্ন ঘরানার মিউজিশিয়ানদের কোলাবরেশন। রাহুল স্বীকার করছেন যে, এ ছবির সুর করেছেন শুধুমাত্র পরিচালকের জন্যই। “স্পন্দনকে এত বছর চিনি। আট-ন’ বছর কাজ করেছি একসঙ্গে। এর আগে অভীক মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘ভূমি’তে আমাদের সুর করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। এখন এটা করলাম,” বলছেন রাহুল।
ব্যান্ডের কেউ সুর করলে তা কি প্রচলিত সঙ্গীত পরিচালকদের থেকে আলাদা হয়ে যায়? “হ্যাঁ, যায় তো। অনেক ক্ষেত্রে বলিউড কম্পোজারদের কাজটা একই রকম শুনতে লাগে। ব্যান্ডের কাজটা একটু আলাদা হয়,” উত্তর দেন রাহুল।
‘সিটি অব ডার্ক’য়ের টাইটেল ট্র্যাকটাই হল দিল্লিকে নিয়ে। নাম ‘হ্যয় শহর বেকারার’। শুভা এই গানটা গেয়ে খুব খুশি। বলছেন, “‘ইন্ডিয়ান ওশান’য়ের সঙ্গে আমার র্যাপোটা খুব ভাল। স্পন্দনের সঙ্গেও আমি আগে কাজ করেছি। তাই ওর ছবিতে গান করার কথা বলাতে আমি রাজি হয়ে যাই। গানটা রেকর্ড করার অভিজ্ঞতাটাও বেশ ভাল। কী সুন্দর গানের কথা। ‘হ্যয় শহর বেকারার/ ডুন্ডে হ্যয় সব রফতার/ পাহিয়ো পে কাল সওয়ার/ বস কার হি কার।’” গানটির গীতিকার রূপলীনা বসু, যিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির অধ্যাপিকা।
এ ছাড়াও রাহুল নিজেও গেয়েছেন একটা বাউল গান। নাম ‘কিছুদিন মনে মনে’। রাহুলের মা বাঙালি। “বাংলা বলতে পারি। বুঝতেও পারি। এই গানটার সঙ্গে তেমন ফ্যামিলিয়ার ছিলাম না। তাই সময় দিয়ে গানটা তুলতে হয়েছিল,” জানাচ্ছেন রাহুল।
গানটা রেকর্ড করতে গিয়ে আবার একটা কাণ্ড করেছিলেন রাহুল। একতারার আওয়াজটা গিটারের তারগুলোকে লুজ করে তৈরি করা হয়েছিল।
এই ছবিতে গাড়িকে একটা রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই অমিত আর রাহুল মিলে গেয়েছেন আরও একটি গান। নাম ‘কার কি কার’। ‘ইন্ডিয়ান ওশান’কে কি আরও বাংলা ছবিতে সুর করতে দেখা যাবে? এর উত্তরে আশাবাদী রাহুল বলেন, “জানি না। সবই নির্ভর করছে কী ধরনের প্রজেক্ট আসে তার উপর। ভাল লাগলে নিশ্চয়ই সুর করব।”