তরুণ। ছবি: সন্দীপ দাস
ফ্যাশন নয়, বরং বিজ়নেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন বিদেশে। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ায় পড়ার সময়েই তাঁর আলাপ হয় শৈলজার সঙ্গে। ভারতে ফিরে বিয়ে করেন। তখন পারিবারিক ব্যবসা সামলাচ্ছেন তরুণ তাহিলিয়ানি। কাজে সন্তুষ্টি নেই। পরে স্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে প্রথম মাল্টিডিজ়াইনার বুটিক। সেই পদার্পণ ফ্যাশন জগতে। এর পরে ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা, শুরু করেন পোশাক ডিজ়াইন।
কলকাতায় তাঁর ডিজ়াইনার স্টোরের উদ্বোধন হল। পার্ক স্ট্রিট চত্বরে ঝাঁ চকচকে এই স্টোরে থাকছে সব রকমের পোশাক। প্রত্যেক দিনের কর্মব্যস্ত জীবনের জন্য যেমন থাকছে রেডি টু ওয়্যার, পাশাপাশি মিলবে ব্রাইডালওয়্যারও। আবার ক্রেতার পছন্দসই বিশেষ কালেকশনও পাওয়া যাবে। তরুণ বললেন, “স্প্রিং সামার কালেকশন প্রথম কলকাতায় লঞ্চ করলাম। এর পরে দিল্লি ও মুম্বইয়েও লঞ্চ করা হবে।’’ আরও বললেন, “প্রত্যেকটা ব্র্যান্ডের মতো আমরাও নতুন পোশাকের সম্ভার নিয়ে আসব। সারা বছরে দু’বার সেল চলবে, যে ভাবে অন্যান্য ব্র্যান্ড ব্যবসা চালায়। তা ছাড়া যাঁরা হাই-এন্ড ফ্যাশনে খরচ করেন, ফ্রেশ কালেকশন চান, তাঁদের জন্যও নতুন ডিজ়াইন রাখার চেষ্টা করব।“
কলকাতায় প্রথম স্টোর খুললেও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁর বহু দিনের। এখানকার সংস্কৃতি, মানুষের চিন্তাধারা বরাবর আকর্ষণ করেছে তরুণকে। বাঙালিদের ড্রেপিং করার স্টাইলও তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। “শাড়ি পরার বাঙালি ধরন আমার খুব পছন্দ। ভারি সুন্দর ও স্বতন্ত্র। এখন কলকাতায় আসি, ক্লাবে যাই। কোথাও সে ভাবে শাড়ি পরতে দেখি না। সকলেই ওয়েস্টার্ন পরছে,” বললেন ডিজ়াইনার।
বাংলার সূচিশিল্প নিয়েও তরুণ আগ্রহী। এর পরে তাঁর কাজে বাংলার বিভিন্ন রকম সেলাই ও নকশা ফুটে উঠবে। তার জন্য বাঙালি শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। আর বাংলার টেক্সটাইল? “খাদি ও মলমল নিয়ে কাজ শুরু করব। কিন্তু বাংলার এমন অনেক টেক্সটাইল আছে, যা জামদানি-বালুচরির মতো হাতে বোনা, সে সব কেটে পোশাক বানানোটা আমার কাছে বোকামি। এই ধরনের কাপড় এত ডেলিকেট, তার কাজ এত সূক্ষ্ম, তা কেটে নষ্ট করার মানে হয় না। বরং শাড়ি বা ওড়নাতেই এর ব্যবহার সুন্দর।’’ বিহারের ভাগলপুরি সিল্ক নিয়েও কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন।
শুধু এ দেশই নয়, বিদেশের তারকাদের ফ্যাশনও তাঁকে প্রভাবিত করে। ম্যাডোনা, রিহানার ফ্যাশন সেন্স বেশ ভাল লাগে তরুণের। তবে এ দেশের তারকাজগতের দিকে চোখ ফেরালে তাঁর মনে হয়, ‘‘সকলে স্টাইলিস্ট ও ডিজ়াইনারদের কথা মতো পোশাক পরে। নিজস্ব কোনও ফ্যাশন সেন্স ফুটে ওঠে না। বরং রেখা ও সিমির (গারেওয়াল) সাজপোশাক আমার ভাল লাগে। রেখা তো সব সময়েই ভারতীয় পোশাক পরে। কিন্তু ওর সাজ কত সুন্দর ও স্বতন্ত্র! আর এখনকার মধ্যে অদিতি রাও হায়দরিকে ভাল লাগে। যেমন সাদামাঠা, তেমনই সম্ভ্রান্ত।’’
শুধু ফ্যাশন ডিজ়াইনই নয়, গোয়া ও দিল্লিতে কিছু বাড়ির ইন্টিরিয়রও করেছেন তিনি। এত ক্রিয়েটিভ কাজের মাঝে ব্যবসাও সামলান। তাঁর দুই ছেলে আনন্দ ও জাহান বাবার ব্যবসাই সামলায়। তবে ছেলেদের ফ্যাশন সেন্স নিয়ে ডিজ়াইনার বাবা মোটেই সন্তুষ্ট নন। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘জাহান একটু সচেতন। ডিসেন্ট জামা পরে। ব্যস, ওই পর্যন্তই।’’