অজন্তা প্রেক্ষাগৃহের মালিক শতদীপ সাহা অনেক ভেবেও এমন কোনও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন না। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এটা বাণিজ্য না নোংরামো? ছবি মুক্তির নামে অসুস্থ প্রতিযোগিতা! পরিচালকেরা ছবি-মুক্তির আগে এক বারও এ কথা ভাবছেন না যে আমরা প্রেক্ষাগৃহ দেব কোথা থেকে!’’
আগামী বাংলা ছবি
মে মাস মানেই বাইরে গরমের দাপট। সেই দাবদাহ নাকি ম্লান হবে এক ঝাঁক বাংলা ছবির দাপটে। একের পর এক ঘোষণা বলছে, মাস জুড়ে প্রেক্ষাগৃহে দাপট দেখাবে নানা স্বাদের তারকাখচিত বাংলা ছবি। তালিকায় মিমি চক্রবর্তী, সোহম চক্রবর্তী, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অনীক দত্ত, যশ দাশগুপ্ত, এনা সাহা, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-- কে নেই! দক্ষিণের ছবিকে ধরাশায়ী করতেই কি এ ভাবে কোমর বেঁধে নামছে বাংলা বিনোদন দুনিয়া? এতে আখেরে লাভ হবে তো টলিউডের?
২৭ মে মুক্তি পাচ্ছে শৌভিক কুন্ডুর দ্বিতীয় ছবি ‘আয় খুকু আয়’। একই দিনে প্রেক্ষাগৃহে অরিন্দম শীল ফিরিয়ে নিয়ে আসছেন গোয়েন্দা ‘শবর’কে। এনা সাহা নিয়ে আসছেন তাঁর ‘চিনেবাদাম’। শিলাদিত্য মৌলিকের এই ছবিতে তিনি যশ দাশগুপ্তের নায়িকা। দর্শক কাকে ছেড়ে কাকে দেখবেন? আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রেখেছিল শৌভিকের কাছে। পরিচালকের দাবি, ‘‘এক, অতিমারির কারণে প্রায় দু’বছর মুক্তি আটকে ছিল একাধিক ছবির। এ বার সে গুলো মুক্তি পাবেই। ফলে, আমাদের সবারই হাত-পা বাঁধা। তাই ভাগ্যনিয়ন্তা দর্শক। তাঁরা ভালবেসে যে ছবি দেখবেন, সেটাই বাণিজ্য করবে।’’ একই সঙ্গে পরিচালকের চাওয়া, সব ছবিই যেন ভাল ব্যবসা করে।
সত্যিই কি তাই করবে? অজন্তা প্রেক্ষাগৃহের মালিক শতদীপ সাহা কিন্তু অনেক ভেবেও এমন কোনও সম্ভাবনাই দেখতে পাচ্ছেন না। বিরক্ত শতদীপের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এটা বাণিজ্য না নোংরামো? ছবি মুক্তির নামে অসুস্থ প্রতিযোগিতা! পরিচালকেরা মুক্তির আগে এক বারও ভাবছেন না, আমরা প্রেক্ষাগৃহ দেব কোথা থেকে! কারণ, ছবির সংখ্যা বাড়লেও হলের সংখ্যা তো বাড়ছে না! কোনও ছবি জনপ্রিয় হলেও তাকে হল থেকে নামিয়ে নিতে হবে। পরের ছবিকে জায়গা ছাড়ার জন্য।’’ শতদীপের আরও যুক্তি, এর সঙ্গে রয়েছে হিন্দি, ইংরেজি, দক্ষিণী ছবি। কাকে ছেড়ে কাকে জায়গা দেবেন হল মালিকেরা! অজন্তা প্রেক্ষাগৃহের মালিকের কথায়, প্রতি সপ্তাহে একটি বা দু’টি করে বাংলা ছবি মুক্তি পেলে দর্শকও বিভ্রান্ত হন না। সেটাও হওয়ার নয়। শতদীপের হিসেবে, ‘কলকাতার হ্যারি’, ‘মিনি’, ‘এক্স ইক্যুয়ালটু প্রেম’, ‘অপরাজিত’, ‘বেলাশুরু’, ‘জালবন্দি’, ‘আয় খুকু আয়’, ‘শবর’, ‘চিনেবাদাম’-সহ মে মাসে মুক্তি পেতে চলেছে আট থেকে দশটি বাংলা ছবি!
টলিউডের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রযোজক এনা সাহা। প্রথম ছবি ‘এসওএস কলকাতা’ প্রযোজনা করে করে ভাল সাড়া ফেলেছিলেন বাংলা ছবির দুনিয়ায়। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘চিনেবাদাম’ মুক্তি পেতে চলেছে ২৭ মে। অরিন্দমের ‘শবর’ এবং প্রসেনজিতে ‘আয় খুকু আয়’-এর সঙ্গে। প্রযোজক এনা এক বারও ভাবেননি বাণিজ্যের কথা? নাকি বাকিদের মতো তিনিও আশ্বস্ত ইতিবাচক ফলাফলের উপরে? এনার সাফ জবাব, ‘‘ইচ্ছে থাকলেও সব সময় উপায় থাকে না। সব জেনেবুঝেই পা ফেলতে হয়। জানি, মাসে চারটি বা ছ’টি বাংলা ছবি মুক্তি পেলে বেশি ভাল বাণিজ্য করবে। কিন্তু অনেক সময়েই সেটা হয়ে ওঠে না। তাই, পুরোটাই ছেড়ে দিয়েছি দর্শকদের উপরে। ওঁরা যে ছবির পাশে দাঁড়াবেন, সেই ছবিই বাণিজ্য করবে।’’
আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল টলিউডের বাণিজ্য বিশ্লেষক পঙ্কজ লাডিয়ার সঙ্গেও। তাঁর কথাতেও স্পষ্ট হতাশার ছাপ। দাবি, ‘‘বলিউডের মতো টলিউডের প্রযোজকেরাও যদি পরস্পর আলোচনা করে ছবি-মুক্তির দিন ঘোষণা করেন তা হলে এই সমস্যা হয় না। কলকাতার সমস্ত বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলো মুখোমুখি বসুক। ভাগ করে নিক মুক্তির দিন। প্রতি সপ্তাহে দুটো করে বাংলা ছবি মুক্তি পাক। তবেই না ঠিকঠাক টক্কর দিতে পারবে। বলিউড এই জন্য সপ্তাহে একটি করে ছবি-মুক্তি ঘটায়। ফলে, বাণিজ্যও করে ভাল।’’