অভিনেত্রী পায়েল সরকারের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ শুরু। ইন্ডাস্ট্রিতে ষোলো বছর। চেহারা, কণ্ঠস্বর সবই আছে, অথচ নায়ক হওয়া হল না! কেন?
নায়ক হওয়ার কোনও ইচ্ছেই নেই আমার। আগে থিয়েটার করতে গিয়ে মনে হত, নায়কদের কিছু করার থাকে না! সেটা একেবারেই ভুল। নায়কদের অনেক কিছু করার থাকে। আমি বুঝিয়ে বলি কেন বলছি এমন। আমরা যে সময় অভিনয় করতে এলাম তখন আমাদের মতো অভিনেতাদের নিয়ে আলাদা করে ছবি করার কথা ভাবাই হতো না। মাঝখানে এল অদ্ভুত নাচ-গানের ছবির জোয়ার, ফলে আমরা যে শিক্ষা নিয়ে বড় হয়েছি সেটা দিয়ে এই ধাঁচের ছবি রিলেট করতে পারতাম না আমি। ভাবতেই পারতাম না দারুণ ব্যায়াম করে শরীর তৈরি করে দুর্ধর্ষ কিছু নেচে ফেলব ছবিতে। আমরা আসলে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অভিযান’ দেখে বড় হয়েছি। আমার নায়ক তখন ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র ধৃতিমান কাকা। তাঁকে আলাদা করে ব্যায়াম করে ছবিতে কাজ করতে হয়নি। আমার কাছে ‘পলাতক’-এর অনুপকুমার নায়ক। ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে এসে দেখলাম চেহারাটা আলাদা!
কিন্তু এই আপনি সন্দীপ রায়ের ‘চার’ করলেন, অরিন্দম শীল-এর ‘এ বার শবর’-এ দারুণ চরিত্র করলেন!
হ্যাঁ। এখন সময় বদলাচ্ছে। অরিন্দমদার ‘ভূমিকন্যা’-য় এক বহুরূপীর চরিত্রে অভিনয় করলাম। দারুণ লেগেছে। এগুলোই অভিজ্ঞতা।
আরও পড়ুন, আলো ঝলমলে অধ্যায় থেকে অন্ধকার জগৎ, নানা অবতারে ‘সঞ্জু’
মুম্বই যেতে চান না?
না, আমি সৌমিত্র জেঠুর একটা কথা বলি এ ক্ষেত্রে। উনি বলেন, বাংলায় এত ট্যালেন্ট আছে। আলাদা করে মুম্বই যাওয়ার কোনও দরকার নেই। আগে তো বাঙালিরাই মুম্বই শাসন করত। জানি না সেটা কেন বদলাল। আমার মনে হয় যে ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন’, ‘নায়ক’ তৈরির জন্য মুম্বই যেতে হয়নি তো সত্যজিৎ রায়কে! আমি অমিতাভ বচ্চনের ফ্যান, কিন্তু ‘মান্ডি’র নাসিরুদ্দিন শাহ-র মতো ছোট চরিত্রই করতে চাই। এ কি ভোলা যাবে!
সফর। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।
এই মানসিকতা নিয়ে ‘বকুলকথা’-র মতো ধারাবাহিক করেন কী করে?
আমি ছোট পর্দা থেকে উঠেছি। ধারাবাহিক মানে খারাপ, এটা কিন্তু নয়। এই যে এত ছবি রোজ রিলিজ হয়, পোস্টার দেখি। সেগুলো তো সব দেখাও যায় না! তা হলে ছোট পর্দা নিয়ে এত সমালোচনা কেন? আমি বিভাসকাকা (চক্রবর্তী), গৌতম হালদার, ব্রাত্য বসুর দলে অভিনয় করেছি। ব্রাত্য বসুর ব্যোমকেশ করেছি। কই, আমার তো মনে হয়নি এই ধারাবাহিক, সিনেমা, নাটক এই তিন মাধ্যমের কোনটা খারাপ! আমার কাছে যে ফর্মে যে চরিত্র আছে সেটাকেই তো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলব আমি। এটাই তো অভিনেতার কাজ। চরিত্র খারাপ-ভাল হয় না, অভিনেতা খারাপ-ভাল হয়। ভাবুন তো ‘গান্ধী’ ছবিতে এক মিনিটের চরিত্রে ওম পুরী যা করে দিয়ে গেলেন!
আরও পড়ুন, বলিউডের এই তারকা-পত্নীদের ‘এক্স বয়ফ্রেন্ড’ কারা জানেন?
পরিচালনায় আসবেন?
বাঙালি ভাল ছবি তৈরি করতে পারে। আমার লেখালেখির অভ্যেস আছে। আমি পরিচালনায় আসতে চাই। এই আত্মবিশ্বাস আছে। চরিত্র নির্বাচন ছবিকে অনেক এগিয়ে দেয়। আর সঙ্গে দরকার পরিচালকের আত্মবিশ্বাস। বাংলা ছবি করতে চাই, মননে বাঙালিয়ানা। মানে প্যানপ্যানে লাল পাড় শাড়ির বাঙালিয়ানা নয়। আর ভাল গল্প বলার জন্য দারুণ টেকনোলজির দরকার নেই কিন্তু। আমি পড়ানো ছেড়ে অভিনয়ে এসেছি। এটা আমার প্যাশনও। এমন কত বার হয়েছে, হয়তো পারিবারিক ঝামেলা, সম্পত্তি নিয়ে অশান্তি হচ্ছে, চারপাশ কেমন কালো কুয়াশায় ঢাকছে। এমন সময় মঞ্চে ‘রক্তকরবী’-র বিশু পাগল হয়ে ঢুকে পড়লাম! উফ্ফ কি যে শান্তি পাই মনে! এই শান্তি অনেক পুরস্কারের চেয়ে দামি।