পর্দার মাহির সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা ঝা: সুশান্ত ও দিশা
সত্যি কথাটা প্রথমেই বলে রাখি। ‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ আমার দেখা সেরা স্পোর্টস বায়োপিক। এর আগে যে ক’টা ছবি দেখেছি, কোনওটাই কমপ্লিট লাগেনি। কিন্তু ধোনি শুরু হওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যে মনে হল, আমি কোনও মাল্টিপ্লেক্সে নেই, যেন দাঁড়িয়ে আছি নন-স্ট্রাইকিং এন্ডে, আর ব্যাট হাতে একের পর এক বাউন্ডারি মারছে আমার বন্ধু মাহি। আসলে, সুশান্ত সিংহ রাজপুত।
***
তিন ঘণ্টার ছবিতে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি, আরে এই ছেলেটা তো পেশাদার ক্রিকেটারই নয়। যে ভাবে মাহির ম্যানারিজমগুলো রপ্ত করেছে সুশান্ত, তা দেখে আমার দুই ছেলেও বলল, ‘‘বাবা, এই তো আসল ধোনি।’’ আমি মুচকি হাসলাম শুধু, কারণ ওরা তো আমার মনের কথাটাই বলল। মাহির ওই ব্যাট ঘোরানো, অফুরান এনার্জিটাই স্ক্রিনে সঞ্চারিত করেছে সুশান্ত।
***
আমার বরাবর মনে হতো যে, খেলার ছবিতে ডিটেলিং-এর অভাব থাকে। চরিত্রদের অকারণে গ্লোরিফাই করার একটা চেষ্টা থাকে কোথাও, কিন্তু ‘ধোনি’ সেই পথে হাঁটেনি। প্ৰথম হাফের প্রতিটা শট দেখে মনে হচ্ছিল, আরে, এই তো সেই মাঠটা যেখানে আমরা রেলের হয়ে খেলতে যেতাম। কিংবা, আরে ওই বোলারটা আমাদের ছোটবেলার বন্ধু মিহির দিবাকর না! সিনেমা দেখতে গিয়ে এত নস্টালজিক হইনি আগে।
***
একটা দৃশ্য কিছুতেই ভুলতে পারছি না। ২০০৩-২০০৪য়ে দলীপ ট্রফিতে মাহির টিমমেট ছিল বাংলার কয়েকজন। দেখলাম সুশান্তের পাশে যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে, তার জার্সির লোগোটা ভীষণ চেনা। মুহূর্তে মনে পড়ল, আরে তখন তো আমাদের জার্সিতেও ঠিক এই লোগোটাই থাকত। ব্যাটে লুকোপ্লাস্ট লাগানো হোক, কিংবা স্পনসর জোগাড় করার চেষ্টা—এ সব তো আমরাও করেছি। পর্দায় এই দৃশ্যগুলো যেন এক নিমেষে আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল ফেলে আসা ড্রেসিংরুমটায়।
***
নিজে ক্রিকেটার না হলেও কি একই রকম অনুভূতি হতো? হ্যাঁ, হতো। মাহির জীবনটা তো শুধু একজন ক্রিকেটারের জীবন নয়, একজন সাধারণ মানুষের সুপারস্টার হয়ে ওঠার গল্প। সেটাই তো ভীষণ ইন্সপায়ারিং।
***
প্রিয়াঙ্কা ঝা নামে মাহির যে কোনও গার্লফ্রেন্ড ছিল, সেটা আমি জানতাম না। জানা ছিল না যে ওর মৃত্যু কী ভাবে মাহির জীবনটাই পাল্টে দিয়েছিল। সেটাও ছবির ইউ এস পি।
***
দেখলাম, কয়েকজন দর্শক বলছেন, কোনও বিতর্কই তো দেখানো হল না। কিন্তু কেন দেখানো হবে বলুন তো? যেখানে একজন সাধারণ ছেলের অসাধারণ হয়ে ওঠার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে আগ বাড়িয়ে বিতর্ক তৈরির কোনও মানে নেই।
***
ধোনি দেশের সর্বকালীন সেরা অধিনায়ক কি না, সে নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। কিন্তু মাহির স্ট্রাগল, ডেডিকেশনের গল্পগুলো না জানলে তো মানুষটাকেই চেনা যাবে না। লাস্ট মিনিটের পুজো শপিং সেরে ছবিটা দেখে আসুন। এত ভাল বায়োপিক এর আগে দেখেননি।