নতুন পথে টেলিপাড়ার মেকআপ, আসছে ইউজ অ্যান্ড থ্রো অ্যাপ্লিকেটর, এয়ার ব্রাশ

‘মেকআপ আর্টিস্টদের জায়গা কি নড়বড়ে হল?’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ১৯:৫৮
Share:

দিতিপ্রিয়া এবং ঐন্দ্রিলা।

আড়াই মাস পরে নতুন করে জাগছে টেলিপাড়া। পারবেন অভিনেত্রীরা মাল্টিটাস্কার হতে? যে সমস্ত নির্দেশাবলি আছে তার মধ্যে একটি, নিজেদের মেকআপ কিট থেকে হয়তো নিজেদেরই মেকআপ করতে হবে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। কারণ, সংক্রমণ রুখতে গিয়ে স্পর্শ না করে তিন ফুট দূর থেকে মেকআপ করা সম্ভব নয়। যদিও প্রোডিউসার গিল্ডের সভাপতি শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ৩৫ জনের দলে মেকআপ আর্টিস্টরাও থাকবেন। তাঁদের পারিশ্রমিকও দেওয়া হবে। শুধু মেকআপটা তাঁদের নাও করতে হতে পারে। সেটা আলোচনাসাপেক্ষ।

Advertisement

‘মেকআপ আর্টিস্টদের জায়গা কি নড়বড়ে হল?

‘রাণী রাসমণি’ধারাবাহিকের দিতিপ্রিয়া রায় বলছেন, ‘‘রানির ভূমিকায় অভিনয় শুরুর তিনমাস পর থেকেই নিজে মেকআপ করছি। ফলে, ওটা চিন্তার বিষয় নয়। মেকআপ, ফাইনাল টাচআপ করে এসেছি, করেও নেব। একজন তো ইনস্ট্রাকশনে থাকবেনই। আমার চিন্তা অন্য জায়গায়। মেকআপ আর্টিস্টদের জায়গাটা কি একটু হলেও নড়বড়ে হল? আগে ফ্লোর গমগম করত ওঁদের উপস্থিতিতে। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আলাদা করে মেকআপ আর্টিস্ট। দেখভাল করার জন্য আলাদা ইনস্ট্রাকটার। এবার থেকে নিজেরা মেকআপ করলে, বাড়তি সাবধানতা হিসেবে বাড়ি থেকে সাজ সেরে এলে, ওঁদের কাজ কী থাকল?’’ জোরালো প্রশ্ন তুলেছেন দিতিপ্রিয়া।

Advertisement

মেকআপ কিট কিনছেন আর্যা

‘‘এবার দু’গালে নিজেই দাড়িগোঁফ লাগাব’’, বললেন আর্যা বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে ‘ফিরকি’ধারাবাহিকের লক্ষ্মী। গলায় ভয় নিয়ে জানালেন, তিনি মেকআপ কিট কিনছেন। নির্দেশ জারির পর থেকেই ফোনে আত্মীয়-বন্ধুদের পরামর্শ আসছে ‘এটা কেন ওটা কেন’।

কিন্তু লক্ষ্মীর ওই স্পেশ্যাল লুক! নিজে মেকআপ করে আনতে পারবেন? প্রশ্নটা করতেই বললেন আর্যা, ‘‘আগে শেখার ইচ্ছেয় একগালে হাল্কা দাড়ি-গোঁফ লাগাতাম নিজেই। আর এক গালে মেকআপ আর্টিস্ট। নিজেকে বাঁচাতে এবার থেকে দু’গালে আমাকেই দাড়িগোঁফ লাগাতে হবে! তবে ফাইনাল টাচের পর অবশ্যই দেখিয়ে নেব যিনি দায়িত্বে থাকবেন তাঁকে।’’ মেকআপ নিয়ে ভাবলেও বাড়ি থেকে মেকআপ সেরে ফ্লোরে এসে রুম শেয়ারের বিষয়ে তিনি এখনও ভাবেননি।বললেন, ‘‘আমার সঙ্গে রুম শেয়ার করত শুধু মাহি ওরফে ফিরকি। ওর কাজ আপাতত বন্ধ। ফলে, আমার রুম কার সঙ্গে শেয়ার করতে হবে, এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করছি। তবে নিজেকে বাঁচাতে বাড়ি থেকে মেকআপ করে আসা বিকল্প পথ হতেই পারে।’’

মেকআপ যাঁরা জানেন না তাঁরা সমস্যায় পড়বেন

অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা সেন আবারভাবছেন যাঁরা মেকআপ জানেন না, তাঁরা কেমন করে সব সামলাবেন? তিনি বললেন, ‘‘আমি চিন্তা করি না। ছোট থেকে কাজের দৌলতে দীর্ঘদিন নিজের মেকআপ নিজে করি। ফলে, আমার কিট আলাদা। করোনা না হলেও মেকআপ কিট সবার আলাদা থাকা উচিত। না হলে ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। আমারই একবার ব্রাশ থেকে র‌্যাশ বেরিয়েছিল। তবে স্পেশ্যাল মেকআপের কথা আলাদা।’’ এরই পাশাপাশি ঐন্দ্রিলা মনে করছেন, ‘‘সমস্যা হবে তাঁদের, যাঁরা মেকআপ করতে পারেন না একেবারেই। তাঁদের ইনস্ট্রাকশন দিলেও মেকআপ করতে পারবেন না। ক্যামেরার চোখ কিন্তু ভীষণ সূক্ষ্ম। সামান্য ত্রুটি বিশাল ভাবে ধরা পড়ে লেন্সে। তাঁদের কী হবে? দুটো দৃশ্যের ফাঁকে অনেক সময়েই আমাদের চুল ঘেঁটে যায়। টাচআপের দরকার পরে। সেগুলো কে করবেন? আমারটা নয় আমি করলাম, অন্যদেরটাও কি আমাকেই করতে দৌড়তে হবে!’’ শুধু মেকআপ আর্টিস্টের দায়িত্ব নয়, রুম শেয়ার আর পোশাক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ঐন্দ্রিলা।

তাঁর কথাতেই জানা গেল, স্টুডিয়োপাড়ায় হাতে গোনা মেকআপ রুম। ছোট হলে ২ জন, বড় হলে ৪ জন যদি হয়, ১০ জন অভিনেতার জন্য ৫টি রুম লাগবে। তার ওপর একাধিক ধারাবাহিকের শিফট তো রয়েইছে। তবে পোশাকের ব্যাপারেঐন্দ্রিলা বললেন, ‘‘পোশাক এতদিন কীভাবে পরিষ্কার হত জানি না, এবার তো রোজেরটা রোজ কাচতে হবে। এমনিতেই বাথরুম আর মেকআপ রুম পরিচ্ছন্ন নয় টালিগঞ্জের। রাতারাতি সেসব কি ভোল বদলাতে পারবে? কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন সবাই নতুন নির্দেশের সঙ্গে? অভিনয়ের সঙ্গে কিন্তু কোনও কম্প্রোমাইজ চলে না।’

‘‘এয়ার ব্রাশ থাকলেই কেল্লাফতে’’

নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পথে নামতে হবে

অভিনেত্রী দেবযানী চট্টোপাধ্যায় আশাবাদী।আগামী কয়েক দিনে কাজে নামার চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে ‘ত্রিনয়নী’ধারাবাহিকের এই অভিনেত্রী। তাই আলোচনার শুরুতেই তাঁর প্রথম কথা, ‘‘অচেনা করোনা যেমন পরিচিত হয়েছে তেমনই তাকে ঠেকাতে নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে কাজে নামার প্রথম দিন থেকে মানিয়ে চলতে হবে যাঁরা কাজে নামবেন। আমরা সিনিয়র অভিনেতারা বেশির ভাগ সময় নিজেরাই বাড়ি থেকে মেকআপ করে আসি। কিন্ত সমস্যা হবে নতুনদের। আর হবে তাঁদের যাঁরা একেবারেই মেকআপ করতে জানেন না। তবে এই বিষয়টি নিয়ে ততটাও মাথা ঘামাচ্ছি না। কারণ, মনে হয় ৩৫ জনের দলে মেকআপ আর্টিস্টও থাকবেন।’’

তিনি বেশি চিন্তা করছেন কসটিউম নিয়ে। ‘‘কটা সেট ব্যবহার করতে পারবেন অভিনেতা? একটা না দুটো? একটা হলে বিষয়টি ভাবনার। কারণ, পরের দিনে যদি আগের দিনের দৃশ্যের কন্টিনিউটি থাকে তাহলে রাত করে শুট শেষের পর পরের দিন সকালে কল থাকলে রাতারাতি ধুয়ে, কেচে, ইস্ত্রি করে নিতে কি পারবেন অভিনেতারা?’’

মেকআপ, মেকআপ রুম এবং কস্টিউমের জন্য বড় বদল আর যেখানে আনতে হবে তা হল চিত্রনাট্যে। এখন এটাই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ চিত্রনাট্যকারদের কাছে।

যন্ত্রনির্ভর সাজ

‘‘এয়ার ব্রাশ থাকলেই কেল্লাফতে’’, মেকআপ আর্টস্ট সোমনাথ কুণ্ডু বললেন। তিনি জানেন, না ছুঁয়ে মেকআপ সম্ভব নয়। তাই সংক্রমণের ভয় তাঁদের দিক থেকে বেশি।তবে বাঁচার পথ আছে। সোমনাথ বললেন, ‘‘এটুকুও এড়ানো যায় এয়ার ব্রাশ থাকলে। একটু খরচসাপেক্ষ। ছোট্ট যন্ত্রটির দাম আনুমানিক ৪৫ হাজার টাকা। গাড়ি যেভাবে রং করে সেভাবেই এটি মুখে রং করতে ব্যবহার করা হয়। তবে সবাই এর ব্যবহার জানেন না। আমি প্রস্থেটিক মেকআপ করার সময় বহুদিন ধরে ব্যবহার করছি।’’ সোমনাথ জানান, দামি কাজল হলে প্রতিবার ব্যবহারের পর শিস ভেঙে নেওয়া হবে। আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেটর হবে ইউজ অ্যান্ড থ্রো। ‘‘সবটাই যদিও খরচসাপেক্ষ। তবু সুরক্ষার খাতিরে এটুকু তো করতেই হবে। আর এগুলো দিয়ে যাঁরা মেকআপ করতে একেবারেই পারেন না তাঁদেরকেও আমরা সাজিয়ে দিতে পারব। মেকআপ তুলতে হবে বাড়ি গিয়ে। না হলে, রুমে টিস্যুপেপারের পাহাড় জমবে। সেটা পরিষ্কার করাও চাট্টিখানি কথা নয়। আর অভিনেত্রীরা যতই মেকআপ করুন নিজে, আমাদের হাতের ছোঁয়া না থাকলে সে মেকআপে সামান্য হলেও ত্রুটি রয়েই যাবে। ওঁরা নিজেরাই সব করে নিলে আমরা করব কী’’, প্রশ্ন সোমনাথের।

মেকআপ আর্টিস্টদের চ্যালেঞ্জটা বড় হলেও যাঁরা হেয়ার ড্রেসার তাঁদের বেশি স্পর্শ করতে হয় না। হেয়ার ড্রেসার হেমা মুন্সী বললেন, ‘‘আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে কাজ। আর মাথা থেকে কোনও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না। তবু বাড়তি সাবধানতার জন্য আমরা উইগ শ্যাম্পু, স্যানিটাইজড করে, শুকিয়ে ব্যবহার করব। টেলকম আর স্ট্রেটনার পেলে হাত দিয়েও চুল সেট করতে হবে না। তবে চুল অভিনেত্রীদের নিজেদের আঁচড়ে নিতে হবে। আর তার আগে শ্যাম্পু মাস্ট। দরকারে তাঁরা মাথায় টাওয়েল বেঁধে এসে ফ্লোরে শ্যাম্পু করে নেবেন। আমরাও তো কেউ মাস্ক, গ্লাভস, ফেস শিল্ড ছাড়া থাকব না। এভাবেই তো পার্লারে কাজ চলছে। এখনও করোনা ছড়ানোর কোনও খবর মিলেছে?’’

নতুন ভাবনায় প্রস্তুত হচ্ছে টলিপাড়া।হাতে রয়েছে আরমাত্র চার দিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement