আলি ফজল
ওটিটির যুগে কোনও অভিনেতার কেরিয়ারগ্রাফের গতি বাড়াতে একটি সফল ওয়েব সিরিজ়ই যথেষ্ট! অ্যামাজ়ন প্রাইমের ‘মির্জ়াপুর’ অভিনেতা আলি ফজ়লের কাছে তেমন একটি প্রজেক্ট। প্রথম সিজ়নের সাফল্য অভিনেতার কথায় ‘অপ্রত্যাশিত, অভাবনীয়।’ সিরিজ়ের সেকেন্ড সিজ়নেও স্বমহিমায় ফিরছে গুড্ডু ভাইয়া। সেই এন্ট্রি কতটা ধামাকা করবে, তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চান না আলি। ‘‘সেকেন্ড সিজ়নে প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাই আসলে কতটা ধামাকা হচ্ছে, সেটা বিচারের ভার দর্শকের হাতে। আমার চরিত্রটা আরও পরিণত এই সিজ়নে,’’ মন্তব্য তাঁর।
এই সিজ়নে আলির সঙ্গে নেই বিক্রান্ত মেসি এবং শ্রিয়া পিলগাঁওকর। আগের সিজ়নে আলির ভাইয়ের চরিত্রে বিক্রান্ত ও স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলেন শ্রিয়া। এ বার দু’জনকেই মিস করেছেন আলি। ‘‘সিরিজ়ের শুটিং খুব চাপের মধ্যে হয়।
তবে ন’টি পর্বের শুটিংয়ে অনেক স্মৃতি তৈরি হয়। এ বারে একটা লোকেশনে একা শুট করতে গিয়ে বিক্রান্তের কথা মনে পড়ছিল। বাড়ি ফিরে বিক্রান্তকে ফোন করে বলেছিলাম, ‘আজ তেরি বহত ইয়াদ আয়ি...’’ স্মৃতিমেদুর আলি।
‘ফুকরে’ সিরিজ় ছাড়া হিন্দি কোনও ছবিই আলিকে তেমন পরিচিতি দেয়নি, যা ‘মির্জ়াপুর’ তাঁকে দিয়েছে। ‘‘কোনও ছবির কনসেপ্ট ভাল হয়, তবে তার রূপায়ণ খারাপ। আমিও প্রথমদিকে লক্ষ্যহীন ছিলাম। যা পেতাম, তাই করতাম। আর ভালবেসে কাজ করে ফেলি, সেটা একটা সমস্যা বটে,’’ হাসতে হাসতে বললেন আলি। তবে এখন অভিনেতা পরিণত, ‘‘আগে করা ছবিগুলো এখন হলে করতাম কি না, সন্দেহ আছে। কেরিয়ারের শুরুতে ‘রিজেকশন’ সামলাতে শেখানো হয়। কিন্তু ইমেজ তৈরি করা শেখানো হয় না। অনেকেই এখন প্রথম ছবি থেকে সেটা শিখে আসেন। আমি কাজ করতে করতে শিখলাম।’’
শুধু ওয়েব সিরিজ় নয়, এই মুহূর্তে আলির কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট, পরপর হলিউড প্রজেক্ট। ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল’-এর পরে গত বছর আলি শুট করেছেন ‘ডেথ অন দ্য নাইল’-এর। ছবিতে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন কেনেথ ব্রানা, গ্যাল গ্যাডট, রাসেল ব্র্যান্ডের মতো দাপুটে শিল্পীরা। ‘‘এই বছরের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক প্রজেক্টগুলোর মধ্যে এটা একটা। ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি বলে আলাদা আগ্রহ রয়েছে। এখন অনেক ব্লাইন্ড কাস্টিং হয়। প্রতিভা থাকলে আন্তর্জাতিক স্তরেও কাস্টিং হচ্ছে। এবং গ্লোবাল সিনেমার অংশ হওয়া মানে এই বার্তাও দেওয়া হয় যে, দেশ-কাল-পাত্র ভেদে আমরা এক।’’
হলিউডের এই পরিচিতি কি বলিউডে জমি শক্ত করেছে? ‘‘হয়তো কিছুটা। কিন্তু হলিউড আমার বেঞ্চমার্ক নয়। দুটো ইন্ডাস্ট্রি আলাদা, কাজের ধারায় অনেক ফারাক,’’ মন্তব্য তাঁর। নতুন ওয়র ড্রামা ‘কোড নেম: জনি ওয়াকার’-এ মুখ্য ভূমিকায় থাকছেন আলি।
অতিমারির মধ্যেই মাকে হারিয়েছেন আলি। ‘‘ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নিয়ে আমি লিখতে স্বচ্ছন্দ, বলতে নয়। কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখি,’’ অল্প কথায় সারলেন তিনি। আবার রিচা চড্ডার সঙ্গে তাঁর বিয়ে পিছিয়ে গিয়েছে করোনার কারণে। ‘‘আমরা দু’জনেই এই সম্পর্কে খুশি। নিজেদের জন্য মানুষকে বিপদে ফেলা ঠিক নয়। তাই এই অতিমারি পর্ব কাটিয়ে নতুন পৃথিবীতে যখন আমরা পা রাখব, তখনই আমাদেরও নতুন সংসার শুরু হবে।’’ জানালেন, রিচা ও তিনি দু’জনেই রোম্যান্টিক।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকে গত কয়েক মাসে ইন্ডাস্ট্রিতে যে শোরগোল চলছে, তা নিয়ে আলি বিব্রত নন। ‘‘ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি কাটিয়ে উঠতে আমার সময় লেগেছে। শিল্পী হিসেবে কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই। আর টিআরপি সব নয়, এটা সকলকে বুঝতে হবে। অতিমারির মতো সমস্যার সঙ্গে আমরা লড়ছি। পরিযায়ী শ্রমিক, টেকনিশিয়ানরা কাজ হারিয়েছেন! খেতে পান না! আসল সমস্যা এটা। এই কষ্ট লাঘব করা লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের,’’ বললেন আলি।