কিছু ছবি কয়েক প্রজন্মের শৈশবের সুখস্মৃতি হয়ে থাকে। ‘বেবিজ ডে আউট’ সেরকমই একটি ছবি। নয়ের দশকে বড় হয়েছেন যারা, তাঁদের ছোটবেলার অনেকটা জুড়ে ছিল এই ছবি। তাদের পরের প্রজন্মও এখন সমান আনন্দ পায় বেবি বিঙ্ক-এর কাছে অপহরণকারীদের নাস্তানাবুদ হওয়া দেখে।
অথচ আশ্চর্যজনক তথ্য হল, ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবি তার নিজের দেশ আমেরিকা তথা হলিউডে বাণিজ্যিকভাবে চরম ব্যর্থ। কিন্তু তুমুল সফল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, বিশেষত ভারতের বক্সঅফিসে।
প্যাট্রিক রিড জনসনের পরিচালনায় এই ছবি বেবি বিঙ্ক-কে ঘিরে। ছবিতে তার পোশাকি নাম ও পরিচয় চতুর্থ বেনিংটন অস্টিন কটওয়েল। বাড়িতে সবার কাছে আদরের বিঙ্ক। অত্যন্ত সম্পদশালী ও অভিজাত পরিবারের এই শিশুকে অপহরণ করে তিন দুষ্কৃতী। তারপর খুদে বিঙ্কের হাতে নাকাল হয়েই তিন দুষ্কৃতী শেষে ধরা পড়ে পুলিশের জালে।
অনেকেই জানেন না, ছোট্ট বিঙ্কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন দুই যমজ ভাই। কারণ দুধের শিশুকে একাটানা অভিনয় করানো অসম্ভব। তাই বেছে নেওয়া হয়েছিল যমজ শিশু, অ্যাডম রবার্ট ওয়ার্টন এবং জ্যাকব জোসেফ ওয়ার্টনকে। দু’ ভাইকেই দেখতে হুবহু এক। জন্মগত সাদৃশ্য এবং হলিউডি প্রযু্ক্তির সাহায্যে ছবিতে বোঝাই যায়নি বিঙ্কের ভূমিকায় আছে দু’জন শিশু।
অ্যাডম ও জ্যাকবের জন্ম ১৯৯১ সালের নভেম্বরে। আমেরিকার নিউইয়র্কের নেওয়ার্ক শহরে। তাঁদের বাবা মায়ের নাম জো এবং সুজান ওয়ার্টন। দুই ভাইয়েরই প্রথম ও এখনও অবধি একমাত্র ছবি ‘বেবিজ ডে আউট’। ২৭ বছর বয়সি দুই ভাইয়ের জীবন এখন অভিনয় থেকে বহুদূরে।
দুই ভাইয়ের মধ্যে জ্যাকব সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক বেশি পরিচিত। অ্যাডম নিজের সম্বন্ধে তথ্য খুব বেশি প্রকাশ্যে আনেন না। জানা যায়, তিনি বর্তমানে অন্টারিও শহরে থাকেন। জ্যাকব পড়াশোনা করেন ইউনিভার্সিটি অব ডেলওয়ার-লার্নার কলেজ অব বিজনেস অ্যান্ড ইকনমিক্স থেকে। পরে তিনি হোটেল ম্যানেজমেন্টে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতকোত্তর স্তরে প্রশিক্ষণ নেন কালিনারি ম্যানেজমেন্টে।
জ্যাকব বিভিন্ন রকমের চাকরি করেছেন। সেলস থেকে বেকারি। পাশাপাশি নামী সংস্থার রন্ধনশিল্পীও ছিলেন। কাজ করেছেন বিভিন্ন ভূমিকায়। তবে তাঁর ধ্যানজ্ঞান হল গানবাজনা। তিনি একটি ব্যান্ডের স্যাক্সোফোন শিল্পী।
‘বেবিজ ডে আউট’ নিয়ে আরও একটি চমকপ্রদ দিক হল বেবি বিঙ্ক-এর স্টান্ট ডাবল। বিশেষ বিশেষ দৃশ্যে শিশু অভিনেতার বদলে দুঃসাহসী স্টান্টের কাজ করেছিলেন স্টান্টম্যান ভার্ন ট্রয়ার।
জটিল জিনগত অসুখ কার্টিলেজ-হেয়ার হাইপ্লোপেসিয়ায় আক্রান্ত ভার্নের উচ্চতা ছিল মাত্র ২ ফিট ৮ ইঞ্চি। তিনি ছিলেন বিশ্বের খর্বকায়তম মানুষের মধ্যে অন্যতম। ‘ডানস্টন চেকস ইন’, জিঙ্গল অল দ্য ওয়ে’, ‘মেন ইন ব্ল্যাক’ এবং ‘মাই জায়ান্ট’ ছবিতেও তিনি স্টান্ট ডাবলের কাজ করেছেন। দেখা গিয়েছে ছোটখাটো ভূমিকাতেও।
২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল তাঁর রহস্যমৃত্যু হয়। পরে পুলিশি তদন্তে একে ‘আত্মহত্যা’ বলে চিহ্নিত করা হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয় ‘অ্যালকোহল পয়জনিং’। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে প্রয়াত হন স্টান্ট ডাবল ভার্ন ট্রয়ার। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)