রাজ-শুভশ্রী
আজ বাদে কাল বিয়ে।
কনেবাড়ির কর্তারা সপ্তাহখানেক আগেই ঠাঁই নিয়েছেন কলকাতার আনন্দপুরে মেয়ের সদ্য কেনা বহুতল আবাসনের ফ্ল্যাটে। তাঁদের মেয়ের বিয়ে হবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজবাড়ি বাওয়ালিতে। আর মেয়ের বিয়ের জন্য বর্ধমান থেকে চলে এসেছে পুরোহিত, নানা রকম দানের সামগ্রী থেকে বিয়ের নানা উপকরণও। কলকাতা থেকে বিয়ের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখার ফাঁকেই কনের বাবা দেবপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “শুধু আমাদের বাড়ির জন্য নয়, ছেলের বাড়ির পুরোহিতও বর্ধমান থেকে নিয়ে এসেছি। ছেলের বাড়ির কর্তারা বার বার ফোন করে বিয়ের নানা উপচারও জানতে চাইছেন!”
পাত্রী হলেন বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুরের শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। টলিউডের নায়িকা। আর পাত্র বাংলা ছবির পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। ‘সেলেব্রিটি’ বিয়ে বলে কথা! আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই বাজেপ্রতাপপুরের বাড়িটিকে আলো দিয়ে সাজানো হবে। অষ্টমঙ্গলা করে নবদম্পতি কলকাতায় ফিরে আসার পর ওই আলো খুলে ফেলবে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী দেবপ্রসাদবাবু বলছিলেন, “আর পাঁচটা বিয়ের মতোই সব রকমের নিয়ম-কানুন মেনে বিয়ে হবে। বরযাত্রী-কনেযাত্রীরা এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যাবেন। নিত কনে হবে আমারই ভাইপোর মেয়ে। পার্থক্য বলতে সিনেমার লোকজন থেকে মন্ত্রীদের আনাগোনা লেগেই থাকবে।” মূল বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে থাকছে সঙ্গীত এবং মেহেন্দির অনুষ্ঠান।
দেবপ্রসাদবাবু জানান, অষ্টমঙ্গলা অনুষ্ঠানকে ঘিরে বর্ধমানের অভিজাত হোটেলে নিমন্ত্রিতদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করা হবে। সেখানে ২২ রকম পদ-সহ নানা স্টল থাকবে। তেমনই অনুষ্ঠানের শেষে শুভশ্রীর আবদারে নদিয়ার একটি দল বাজি-প্রদর্শনী করবে। তবে অষ্টমঙ্গলার ওই অনুষ্ঠানে যে কোনও রকমের ছবি তোলা নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন কনের বাবা। পাশাপাশি মেয়ে-জামাইকে ভিড়ের থেকে আগলে রাখার জন্য বাউন্সারও ঠিক করে রেখেছে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার। তাদের দাবি, ১৭ মে বিকেলে বাজে-প্রতাপপুরের বাড়িতে আসবে মেয়ে আর জামাই।
রাতে মেয়ের জন্য মা বীণাদেবী পেঁয়াজ-পোস্তর বড়া, ছোলার ডাল, অড়হর ডাল, আলু ভাতে, মুরগির মাংস ও মাছ ভাজা করবেন। আর জামাইয়ের জন্য থাকবে ইলিশ মাছ এবং কচি পাঁঠার মাংসের পদ।
১৮ তারিখ বিকেলে তাঁরা হোটেলে চলে যাবেন। সেখান থেকেই পরের দিন সর্বমঙ্গলা বাড়ি ও দুর্গাপুরের ভিরিঙ্গি কালীবাড়িতে পুজো দিতে যাবেন। বীণাদেবী বলছিলেন, “বাড়ির ছোট মেয়ে পরের বাড়ি চলে যাচ্ছে। সেটা ভাবলেই চোখের জল আটকাতে পারছি না। শুধু মনে হচ্ছে, যতই হাতের কাছে থাক, আগের মতো লক্ষ্মীপুজো-কালীপুজোয় বাড়ি আসবে তো?”
গঙ্গোপাধ্যায় দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে দেবশ্রীর বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গিয়েছে। ‘সেলেব্রিটি’ মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে কী বুঝছেন? দম্পতি হেসে বললেন, “কোনও বাড়িতে এক জনকে আসতে বললে বাকিরাও অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য আবদার করছেন। নিমন্ত্রণের চাপ বাড়ছে। তাতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’’