বলিউডের আইনের রক্ষক তিনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিনি সৎ নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসার। কখনও বা বিচারক। অভিনয় করেছেন প্রায় ৪০০টির বেশি ছবিতে। অথচ তাঁকে সে ভাবে মনেই রাখল না বলিউড।
গ্ল্যামারের চাকচিক্যে কখন যেন ফিকে হয়ে গেল তাঁর বলিষ্ঠ চোয়াল, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়ের সামনে। ভাইবোন চলে গেল পাকিস্তানে। অথচ ভারতকে ভালবেসে তিনি রয়ে গেলেন এ দেশেই। তিনি ইফতেকার আহমেদ শরীফ। হিন্দি ছবির আদর্শ পুলিশ অফিসার।
পঞ্জাবের জালন্ধরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯২০ সালে জন্ম এই অভিনেতার। পরিবারের সব ভাই-বোনদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড়। লখনউ কলেজ অব আর্টস থেকে ডিপ্লোমা করে ভাগ্যের অন্বেষণে ইফতেকার চলে আসেন কলকাতা।
ইফতেকার চেয়েছিলেন গায়ক হতে। সে সময় মুম্বই নয়। কলকাতাই ছিল ভারতের সাংস্কৃতিক পীঠস্থান। শহরে এসে ইফতেকার পাড়ি জমান বিখ্যাত মিউজিক কম্পোজার কমল দাশগুপ্তের কাছে। ইফতেকারের ক্যারিশ্মায় মুগ্ধ হয়ে কমল তাঁকে বলেন, গায়ক নয়, তিনি জন্মেছেন অভিনেতা হওয়ার জন্য,।
ব্যাস। এর পরেই ১৯৪৪ সালে ‘টকরার’ ছবির মধ্যে দিয়ে ফিল্মি দুনিয়ায় অভিষেক ঘটে তাঁর। মিলতে থাকে আরও বেশ কিছু ছবির অফার। কিন্তু তাদের মধ্যে সব কটিই পার্শ্বচরিত্র। ইতিমধ্যেই বসন্ত আসে ইফতেকারের জীবনে।
হান্না জোসেফ নামে এক ইহুদি মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি। হান্না যদিও পরে ধর্ম পরিবর্তন করেন। নতুন নাম হয় রেহানা আহমেদ।
ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হন ইফতেকার। তাঁর নতুন ঠিকানা হয় বম্বে, অধুনা মুম্বই। ইতিমধ্যেই দুই সন্তানও হয়ে গিয়েছে তাঁর। মুম্বই ফিরে আবারও প্রথম থেকে শুরু করতে হয় ইফতেকারকে।
অভিনেতা অশোক কুমারের সঙ্গে কলকাতা থাকতেই আলাপ হয়েছিল তাঁর। ‘মুকদ্দর’ ছবিতে তিনিই ইফতেকারকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন।
না, নায়কের চরিত্রে কোনও দিনই অভিনয় করেননি তিনি। কিন্তু বলিউডের স্বর্ণযুগ অর্থাৎ সত্তর-আশির দশকে প্রায় ৪০০টির মতো ছবিতে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কখনও তিনি বাবা, কখনও কাকা আবার কখনও বা পুলিশ সুপার। তবে দর্শক তাঁকে মনে রেখেছে নেগেটিভ চরিত্রেও। ‘বন্দিনী’, ‘খেল খেল মে’-তে তিনি ভিলেন।
নেগেটিভ চরিত্রের কথা যখন এলই, তখন ইফতেকার অভিনীত আইকনিক মুল্ক রাজ দাভরের কথা কী ভাবে বাদ দেওয়া যায়? অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘দিওয়ার’য়ে তিনি ঘুষখোর শিল্পপতি। তাঁর সেই অভিনয় আজও ভোলেনি মানুষ।
শুধু ‘দিওয়ার’ই নয়। ‘ডন’, ‘জঞ্জির’ প্রভৃতি ছবিতে কখনও তিনি পুলিশ অফিসার আবার কখনও অন্য কোনও চরিত্র। আমেরিকান টিভি সিরিজ ‘মায়া’তেও অভিনয় করেছেন তিনি।
এত সব ছবিতে অভিনয় করেও বলিউড তাঁকে সে ভাবে মনে রাখেনি। স্বাধীনতার সময় যখন তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য চলে গিয়েছিলেন পাকিস্তানে
ইফতেকার যেতে চাননি। স্ত্রী কন্যা নিয়ে থেকে গিয়েছিলেন এ দেশেই। ১৯৯৫ সালের ৪ মার্চ মুম্বইতেই মারা যান, ‘বলিউডের ভাল পুলিশ।