হার্ভি ওয়াইনস্টিন। ছবি এপি
গত কালই তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাতে অবশ্য দিন পাল্টে যায়নি হলিউডের প্রাক্তন প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের। ম্যানহাটনের আদালতের কাছাকাছি ফোর সিজ়নস হোটেলে নিজের আইনজীবীদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসেছিলেন দামি কফি সহযোগে। আইনজীবীদের চিন্তা, নিউ ইয়র্কের ‘কুখ্যাত’ রাইকার্স আইল্যান্ড কারাগার নিয়ে। প্রাক্তন প্রযোজকের ভবিষ্যৎ ঠিকানা হয়তো হতে চলছে এই জেলই।
৬৭ বছর বয়সি মক্কেলকে যাতে অন্য অপরাধীদের হিংসার শিকার হতে না হয়, আপাতত সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছেন আইনজীবীরা। তাই ওই জেলের নর্থ ইনফার্মারি কমান্ডে রাখার কথা হচ্ছে হার্ভিকে। এই ভবনটিতে অসুস্থ অপরাধীদের রাখা হয়। তা ছাড়া, যাঁরা ভয়ঙ্কর অপরাধী, রাখা হয় তাঁদেরও, যাতে অন্যদের থেকে সুরক্ষা দেওয়া যায়। হার্ভি ওখানেই থাকবেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেনি নিউ ইয়র্কের সংশোধনাগার দফতর।
হার্ভি দোষী সাব্যস্ত হলেও এখনও তাঁর সাজার মেয়াদ ঘোষণা হয়নি। পরের শুনানি ১১ মার্চ। তার আগে পর্যন্ত জাম্পসুট পরে থাকতে পারবেন হার্ভি। ‘কয়েদি’ হওয়ার পরে তাঁকে অবশ্য কারাগারের সবুজ পোশাক পরতে হবে তাঁকে।
হার্ভি ওয়াইনস্টিন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে খুশি অনেকেই। বিশেষ করে গত দু’বছরে বিনোদন দুনিয়ায় যথেষ্ট ধাক্কা লেগেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, তাতে হলিউড রাতারাতি বদলে গিয়েছে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং, হার্ভি চলে গেলেও তাঁর মতো আরও অনেক মুখ বহাল তবিয়তে রয়ে গিয়েছেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে। একটি মার্কিন দৈনিকের দাবি, মিটু আন্দোলন সাফল্যের মুখ দেখলেও হলিউডে এখনও পুরুষেরই ‘দাপট’। এ বারের অস্কারের উদাহরণ টেনে ওই দৈনিক জানিয়েছে, গত দশ বছরে এই নিয়ে নবম বারেও সেরা পরিচালকের মনোনয়নে কোনও মহিলার নাম ছিল না।
প্রযোজনা সংস্থাগুলোতেও পরিস্থিতি এখনও তেমনই। ২০১৮ সালে আমাজ়ন স্টুডিয়ো-র প্রধানের পদে বসেছিলেন জেনিফার। তাঁর আগে এই পদে থাকা রয় প্রাইসের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় তাঁকে সরিয়ে জেনিফারকে আনা হয় প্রধানের পদে। গত মাসেই সোনি-র প্রাক্তন কর্তা মাইক হপকিন্সকে নিয়ে আসা হয়েছে আমাজ়নের ভিডিয়ো দফতরের ভার দিয়ে। জেনিফার এখন তাঁরই অধীনে। মাইক সরাসরি রিপোর্ট করেন আমাজ়ন-কর্তা জেফ বেজ়োসের কাছে।
হার্ভির মতো অন্য প্রযোজক-পরিচালক-চিত্রনাট্যকার যেমন, ব্রেট রাটলার, জেমস টোব্যাক, চার্লি রোজ় এবং ম্যাট লওয়ারের মতো আরও ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগ মানতে চাননি। এ বার এঁদের ক্ষেত্রে কী ঘটবে, প্রশ্ন তুলেছে মার্কিন দৈনিকটি।
নিউ ইয়র্ক আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে মঙ্গলবার দিল্লিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘‘লোকটিকে কখনওই পছন্দ করতাম না। মিশেল ওবামা আর হিলারি ক্লিন্টন তো ওঁর বড় ভক্ত ছিলেন!’’ ডেমোক্র্যাট দলের বড় সাহায্যকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন হলিউডের এই প্রযোজক। প্রাক্তন মার্কিন ফার্স্ট লেডি তথা প্রাক্তন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন এখন জার্মানিতে। মঙ্গলবার বার্লিনে তিনি বলেন, ‘‘রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি।’’