মিলান এয়ারপোর্টের ঘটনা। ‘রংবাজ’য়ের শ্যুটিং শেষে এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে দাঁড়িয়ে সামনের হোর্ডিংগুলোর দিকে একদৃষ্টিতে কোয়েল তাকিয়ে। দারুণ সব বিজ্ঞাপন। এক্সপেরিমেন্টাল। আর খানিকটা অন্য ধরনের। “এ ভাবে শ্যুট করার প্রস্তাব এলে আমিও করতে রাজি হব। কিন্তু আমাকে নিয়ে তো কেউ এ রকম ভাবে না!” আক্ষেপ করে বলছিলেন।
কথাটা মনে থেকে গিয়েছিল। সত্যি তো, সিনেমার পর্দায় বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া মেয়ে আর সিনেমার বাইরে একদম ঘরোয়া সাবেকি সাজ ছাড়া তো কোয়েলকে বেশি একটা দেখা যায় না। বত্রিশে পা দিলেন আজ। আজই মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘অরুন্ধতী’র ট্রেলর। এ রকম নারীকেন্দ্রিক ছবিতে এর আগে কোয়েলকে দেখা যায়নি। পর্দার ধনী বাবার আবদেরে মেয়ে কি হঠাৎ করে বড় হয়ে গেল না কি? হয়তো তাই। বিয়ের পর নতুন অনেক জানালা খুলে গিয়েছে যে। নতুন ভাবে নিজেকে মেলে ধরতে চাইছেন তিনি। জন্মদিনের চব্বিশ ঘণ্টা আগে এ সব নিয়েই আড্ডা দিতে বসলেন কোয়েল মল্লিক।
জন্মদিনে কি রানে হিরের আংটি দিচ্ছেন? না কি আরও একটা ফিল্ম?
(হাসি) না না। আমি মোটেও অত মেটেরিয়ালিস্টিক নই। ওর কাছে শুধু হ্যাপিনেস চাই। কলকাতায় আছি এ বার। বাড়ির সবার সঙ্গে এনজয় করব।
বত্রিশতম জন্মদিনে নিজের জন্য কী চাইছেন?
আমার যে শিশুসুলভ মনটা রয়েছে, তা যেন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে।
শিশুসুলভ? আপনি? আপনি তো খুব পরিণত... অনেকে বলেন ডিপ্লোম্যাটিক, পলিটিক্যালি কারেক্ট...
আমি ম্যাচিওর্ড ঠিকই। তবে আই অ্যাম মোর অব আ চাইল্ড ওম্যান। তবে আমি ‘গালিবল’ নই।
মাথায় হাত বুলিয়ে কেউ আপনাকে দিয়ে কিছু করাতে পারবে না?
(হাসি) না। আই উইল জাস্ট গিভ আ স্মাইল। আমি একদম ‘জাজ’ করি না। কেউ যদি আমার প্রতি নির্দয় হয়, আমি ভাবতে চেষ্টা করি কেন সে ওটা করছে। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে এ ভাল না ও, আমি বলি দু’জনেই ভাল। কারণ আমি জানি দু’জনেরই কিছু ভাল গুণ আছে। আর লোকে এটাকেই বলে পলিটিক্যালি কারেক্ট। আমার বন্ধুরা তো বলে লোকে এত কিছু বলল। আর তুই কিছু বললি না? আমি বলি ‘না’। তার মানে এই নয় যে আমার চামড়া মোটা। এর মানে আমার আত্মবিশ্বাসটা প্রবল। আমি খুব বাছাই করে লোকের কথা শুনি। আই হিয়ার এভরিওয়ান। বাট আই ডোন্ট নো হাউ মাচ আই লিসন টু হোয়াট দে সে। মনে হয় কেন মানুষ অন্যের ব্যাপারে এত মতামত দেয়? হোয়াই কান্ট দে মাইন্ড দেয়ার ওন বিজনেস? বিনয় না দেখিয়েই বলছি, অনেকেই বলেন যে, তাঁরা তাঁদের মেয়েদের কোয়েলের মতো তৈরি করতে চান। তাই আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে যে, নিজেকে এক ভাবে কনডাক্ট করা। তার মানে কিন্তু এটা নয় যে আমি খাঁচার মধ্যে আটকে থাকলাম।
অনেকে আপনাকে খুব রক্ষণশীল মনে করেন...
যা করি সেটা স্বাধীন ইচ্ছে থেকে।
তবে আপনি বিয়ের পরেও অনেক রিচ্যুয়াল মেনে চলেন, যেটা অনেক মেয়েই করবে না...
হ্যাঁ, মানি। কারণ আমার সেগুলো মানতে ভাল লাগে। বিয়ের পর পঞ্জাবিদের লাল-সাদা চুড়ি (চুড়া) পরতে হয়। ওটা এগারো দিন পরেই খুলে রাখা যায়। কিন্তু আমি বলেছিলাম যে রেওয়াজ মতো টানা একচল্লিশ দিন ওটা পরব। এমনকী ‘ঝলক দিখলা যা’র শো-এর প্রথম দিনের শ্যুটিংয়ে আমি ওটা পরেছিলাম।
অনেকেই বলবেন ওটা ফলো না করেই ক্ষমতা জাহির করা যায়...
বিশ্বাস করি না। যারা বলে সমাজের এটা মানব না, তার মানে এটাও বোঝায় যে তাদের মনের মধ্যে কোথাও সমাজ ব্যাপারটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট। মহিলাদের ক্ষমতা এ সবের বাইরে। শাঁখা-পলা পরেও আমি মানসিক দিক থেকে দারুণ পাওয়ারফুল হতে পারি।
পাসপোর্টে নিজের পদবিটা কি পাল্টেছেন? না কি এখনও রুক্মিণী মল্লিক-ই রয়েছে?
হ্যাঁ, রুক্মিণী মল্লিকই রয়েছে পাসপোর্টে। বাইরে গেলে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটটা সঙ্গে নিয়ে যাই।
যাঁরা আপনার সপক্ষে যুক্তি দেন তাঁরা বলেন রক্ষণশীল হলে তো আপনি বাঙালিকেই বিয়ে করতেন....
রাইট। আমি গোঁড়া নই। আমার জীবনের মূল উদ্দেশ্য হল মিষ্টি হাসি দিয়ে এগিয়ে যাও।
অনেক সময় তো এই মিষ্টি হাসিটা হাসতে পারাটাও সহজ হয় না....
ছোটবেলার থেকে আমি খুব সুখী ব্যাকগ্রাউন্ডে বড় হয়েছি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে এসে একদম আউট অব দ্য বক্স লাগত নিজেকে। জোকস বুঝতে পারতাম না। প্রথম প্রথম উঠে চলে যেতাম। পরে মনে হয়েছে যে আমার ওটা করা উচিত নয়। আমারও ও তো সব ঠিক নয়।
এই যে পার্টিতে যান না, হুল্লোড় করেন না, সেটা নিয়েও তো লোকে বলতে পারে যে আপনি ভীষণ ঘরকুনো, খানিকটা নাক উঁচু আর গুডি গুডি...
(হাসি) নারীশক্তি দিনে পাঁচ প্যাকেট সিগারেট খাওয়া, মদ খাওয়া, কথায় কথায় স্ল্যাং ইউজ করা, রাত তিনটেয় বাড়ি ফেরা বা প্লাঞ্জিং নেক লাইন থেকে আসে না। আমি জানি এ সবকে স্ট্যাটাস সিম্বল হিসেবেও কেউ কেউ দেখে। যারা দেখে বা ভাবে তাদের সেটা পার্সোনাল চয়েজ।
আমার কাছে নারীশক্তির সংজ্ঞাটা হল পাওয়ার ইজ ইন ইওর হেড। নিজের মননে, নিজের অ্যাটিটিউডে। তুমি জানো যে জীবনে কী চাও। কোথায় তোমার প্রায়োরিটি। “অরুন্ধতী’র মূল কথা হল প্রত্যেক মহিলার মধ্যেই একটা শক্তি আছে। সেটা হয়তো তাঁরা বোঝেন না। ছেলেরা সিগারেট খায় বলে মেয়েরাও খাবে—আমার কাছে এটা করাটা পাওয়ার নয়। মেয়েদের পাওয়ার আসে যখন তার নিজস্ব একটা ভয়েস থাকে। তাকে সেটা চিৎকার করে বোঝাতে হয় না। যাঁরা চিৎকার করে তাঁরা শুধুমাত্র নয়েজ তৈরি করে। আমি নিজে যদি কিছু করতে না চাই সেটা আমি চিৎকার করে বোঝাই না। তবে সেই পরিণত বুদ্ধি আছে এটা বোঝার যে সবাই এক রকম হয় না।
কোনও দিন এই ভুল বোঝার জন্য খুব বড় ধাক্কা খেয়েছেন?
আমি কোনও দিন খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী নই। পেশাগত ব্যাপার আমাকে কখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায় না। অনিশ্চয়তা আসে যখন আমার কাছের মানুষের কাছ থেকে আঘাত পাই। আমি খুব খেটে কাজ করি। আর ভাগ্যতে বিশ্বাস করি। আমার ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ স্মুদ জার্নি ছিল। আমি যখন দেব আর জিতের স্ট্রাগলের গল্প শুনি তখন ভাবি, ওঁদের জার্নিতে কত কিছু আছে।
আপনার জার্নিটা মসৃণ না হলেও এটাও তো ঠিক যে কথা কম শুনতে হয়নি আপনাকেও। রঞ্জিত মল্লিকের মেয়ে, ভেঙ্কটেশের নায়িকা, রানের স্ত্রী বলে অনেক কিছুই আপনি নাকি সহজে পেয়ে যাচ্ছেন...
ওই যে বললাম আমার ফিল্টারিং হয়। একটা অ্যাটাচমেন্ট-ডিটাচমেন্ট সিন্ড্রোম। আমি খুব ইন্ট্রোভার্ট আর শাই। একটা সময় ছিল যখন আমি পাঁচ ঘণ্টা বসেছিলাম বেডরুমে কারণ বাবা বাইরের ঘরে মিটিং করছিলেন। লজ্জায় সামনে বেরোতেই পারিনি। আজও খানিকটা সেই রকমই। রেস্তোরাঁয় গেলে কোণের টেবিলে বসি।
এটা কি নায়িকা হিসেবে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে বলে?
না। ছোটবেলায় মল্লিকবাড়ির থিয়েটারে প্রথম অভিনয় করেছিলাম। তা-ও আবার বাঁদরের রোলে! রেগে গিয়ে ডায়লগটাও বলিনি। প্রথম যেদিন শ্যুটিং করতে গিয়েছি মা বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন তুই পারবি তো? কিন্তু ক্যামেরার সামনে সব পাল্টে যায়। বাড়িতে পঞ্চাশটা লোকের সামনে এসে কথা বলতে আজও লজ্জা পাব। কিন্তু ৫০,০০০ লোকের সামনে ‘পাগলু’ ডান্স নেচে দিতে পারি। আমার মধ্যে একটা ইন্টারেস্টিং দ্বৈত সত্তা আছে।
তা হলে কি কোয়েল- ১ আর কোয়েল- ২ আছে আপনার মধ্যে?
হ্যাঁ কোয়েল-১ হল যে লাজুক, যে ঘরে বসে থাকে। আর কোয়েল-২ হল অভিনেত্রী। যে ৫০,০০০ লোকের সামনে স্টেজে উঠে নাচতে পারবে। ক্যামেরার সামনে আমি কোয়েল-১কে সুইচ অফ করে চরিত্রে ঢুকে যাই। যে চরিত্রটার সব কিছুই ফল্স। তবে ক্যামেরার বাইরে, মানুষ হিসেবে আমি একদম আনকোটেড।
এই দ্বৈত ব্যক্তিত্বের ব্যাপারটা তো বেশ ইন্টারেস্টিং...
বেশির ভাগ অভিনেত্রীই তো তাই। কিন্তু যেটা আলাদা, তা হল ওঁদের দুই সত্তার মধ্যে অতটা তফাত নেই হয়তো। তবে এটা বলব স্ক্রু-টা হাল্কা ঢিলে না থাকলে অভিনয় করা সম্ভব নাকি? আমার মতো লাজুক মানুষ কী করে অত লোকের সামনে নাচে?
যে দৈর্ঘ্যের ড্রেস পরে আপনি অভিনয় করেন, বাস্তব জীবনে তো সেটা আপনি পরেন না। আর লোকে ডাবল স্ট্যান্ডার্ডস নিয়ে প্রশ্ন করে...
এমন অনেক ব্যাপার আছে, যা আমি পর্দায় করেছি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে করব না। মনে পড়ছে ক্লাস ফাইভ-সিক্স এর একটা ঘটনা। পিসিরা আমাকে আজও খেপায় এটা নিয়ে। একদম স্ট্রেট ফেসে বলেছিলাম যে এখনই আমি ট্রাম, বাস চড়ে নিতে চাই, কারণ এর পর তো আমি ফেমাস হয়ে যাব! তখন আমি ভাবিনি যে অভিনয় করব। পরে গাড়ি থাকলেও কত বার বাস-রিকশাতে তো চড়েছি।
কিন্তু লোকে এটা শুনলে বলবে সেই ক্লাস ফাইভ থেকেই এ নিয়ে স্কিম করেছেন আপনি!
বিশ্বাস করুন, আমি একদম ভাবিনি। একজন আমার ছবি দেখে আমাকে বলেছিলেন আপনার বেডরুম বোধহয় বার্বি ডল-এ ভর্তি! আমি তো হতবাক। ভুল ইমপ্রেশন হলে কী করব? আমি যদি অভিনেত্রী হওয়া নিয়ে খুব অ্যাম্বিশাস হতাম, তা হলে তো বলিউডের ছবি রিজেক্ট করতাম না। বেসিক্যালি আমি একটু ল্যাবা।
এটা কেউ বিশ্বাস করবেই না...
তা হলে শুনুন একবার মুম্বই থেকে কলকাতাতে ফিরছি। মুম্বই এয়ারপোর্টে এসে ফোন করে বাবাকে জানিয়েও দিয়েছিলাম যে আমি পৌঁছে গিয়েছি। কিন্তু এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে খেতে বসে ভুলেই গিয়েছি কখন প্লেন ছেড়ে চলে গিয়েছে! বাবাকে ভয়ে কোনও দিন এটা বলতে পারিনি যে খেতে গিয়ে ফ্লাইট মিস করেছি। বলেছিলাম ফ্লাইট ক্যানসেলড!
তার পর রানেকে কলকাতায় ফোন করে বলি ঘটনাটা। ও তখন মুম্বইতে একটা হোটেলের ব্যবস্থা করেছিল। আর পরের দিনের টিকিটটাও। আমার মতো একটা ল্যাবা না হলে এটা কখনও কারও হয় নাকি? প্রথম ছবির শ্যুটিংয়ের পরে আমি সবাইকে সেটে ওয়েভ করেছিলাম। কারণ ভেবেছিলাম, আর কোনও দিন শ্যুটিং করব না!
ফার্স্ট ফিল্মে বাই-বাই করেছিলেন। বিয়ের পরে বলেছিলেন ফিল্ম করবেন না। কোনও কথাই রাখেননি! ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার সম্পর্কে দু’টো পারসেপশন আছে। ১) আপনি খুব ওয়ার্ম ২) আপনি ভীষণ ক্যালকুলেটিভ। ইন্ডাস্ট্রির সব থেকে অ্যাম্বিশাস নায়িকা আপনি। এদের কেউ বিশ্বাস করবে না, আপনি ফ্লাইট মিস করেন খেতে গিয়ে...
(হাসি) ওঁরা যদি বিশ্বাস না করে আনন্দ পান, তা হলে সেটা ওঁদের ব্যাপার। আমার জন্য শুধু আমার ঘনিষ্ঠ লোকেদের খুশি থাকাটাই জরুরি। প্রচুর মানুষ অনেক কিছু বলা সত্ত্বেও আমাকে ভালবেসে গিয়েছেন। সাফল্য কখনও ক্যালকুলেশন করে আসে না। দর্শকদের ভালবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবু জানি যে, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমার পরিবার আমার সঙ্গে থাকবেন। আমি এটা ভেবেই খুশি যে আমি ওয়ান অব গড’স ফেভারিট চিলড্রেন।
যাঁরা তা নন, তাঁরাই কি এ সব কথা বলেন আপনাকে নিয়ে?
হতে পারে। আমি তো সবার নামে উল্টোপাল্টা বলে শকিং হেডলাইন তৈরি করি না!
আপনি নিজে বোঝেন যে, মানুষ আপনাকে ভুল বোঝে?
হ্যাঁ। বাবা যখন কথা বলেন না তখন লোকে বলে, উনি কী অমায়িক। আর আমি কথা না বললেই লোকে ভাবে আমি অ্যারোগ্যান্ট, স্নুটি! বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এটা কেন হয়, উনি শুধু বলেছিলেন, ‘ছাড় না...’। যারা এত কথা বলে, তাদের নিজেদের জীবনটা নিশ্চয়ই খুব বোরিং। বিয়ের পরে যে কাজ করব না বলেছিলাম, সেটা ভাবতাম বলেই আনন্দবাজারের সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম। সেটা পড়ে রানে অসন্তুষ্ট হয়েছিল। স্যাক্রিফাইসের ব্যাপারটা ওর স্টুপিড লেগেছিল। সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম যে, আমি চাই আমার কাছের মানুষেরা যেন ভাল থাকেন। রানের যুক্তি ছিল স্যাক্রিফাইস করলেই যে সবাই আমাকে ভালবাসবে আর না করলে নয় এটা কী করে হয়? রানে ভীষণ উদার আর স্বাধীনচেতা। আমি ওর থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
বলা হয় যে, আপনি অসম্ভব বুদ্ধিমতী বলেই সমান ভাবে দেব আর জিৎয়ের সঙ্গে দারুণ সুন্দর এবং আন্তরিক সম্পর্ক রাখতে পেরেছেন। এটা কি সবার সঙ্গে সচেতন ভাবে একটা সীমারেখা মেনে চলেন বলেই সম্ভব?
(হাসি) আমার আশেপাশে একটা অদৃশ্য রেডিয়াস থাকে। যার জন্য উষ্ণতা থাকে, আবার স্পেসও।
বিয়ের পর দেবের সঙ্গে দু’টো ছবি আর জিতের সঙ্গে একটাও নয়। জিতের তুলনায় দেবের সঙ্গে বন্ডিংটা আজকাল কি বেশি স্ট্রং হয়েছে?
জিতের সঙ্গেও কাজের কথা হয়েছিল। কাজটা হয়নি। আগেও জিতের সঙ্গে যে সম্পর্ক ছিল, এখনও তাই।
‘চাঁদের পাহাড়’য়ের আগে দেবের অভিনয়ের থেকে বেশি ওঁর নাচের প্রশংসা হত। আপনার ক্ষেত্রেও প্রথমে বলা হয় আপনার স্ক্রিন প্রেজেন্সের কথা। তার পর আপনার অভিনয়। এই পারসেপশনটা পাল্টাতে চান? সেই কলেজপড়ুয়া মেয়েদের এক ধাঁচের রোল ছেড়ে আরও অন্য কিছু করার ভাবছেন না কি?
শুধু কলেজপড়ুয়ার রোল তো আমি করিনি! ‘হিটলিস্ট’, ‘হেমলক সোসাইটি’র মতো ছবি আমি করেছি। কলেজপড়ুয়ার রোল আর করব না, তা বলছি না। কারণ বুঝেছি প্ল্যান করলে তা হয় না। কেউ যদি সেট করে নেয় যে আমি শুধু এই ধরনেরই চরিত্র করতে পারি, সেটা তার প্রবলেম। বরাবর বিশ্বাস করে এসেছি যে আমি সে ধরনেরই ছবি করব, যা দেখে আমি আনন্দ পাব। শুধুমাত্র ইন্টেলেকচুয়াল ছবি করতে হবে বলেই আমি তা করব না। এম্পাররস নিউ ক্লোদস-এর মতো সিচুয়েশনে পড়তে চাই না। এমন ছবি দেখলাম যার কিছুই বুঝলাম না, কিন্তু দুনিয়াকে বলে বেড়ালাম দারুণ হয়েছে কেননা সেটা না বললে লোকে বোকা ভাববে— এটা আমার দ্বারা হবে না। তবে লোকে যেন ধরে না নেয় যে আমি খুব রক্ষণশীল আর তাই কোনও এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করতে চাই না। সিনেমার ক্ষেত্রে আমার কিছু স্ট্রং ডু’স আর ডোন্ট’স আছে। আর আমি সেটা মেনেই ভাল ছবি করব।
কিন্তু এই যে কিস করবেন না, স্কিন-শো-তে আপত্তি— এটা দেখেই তো অনেক ইন্টারেস্টিং কাজ আপনার কাছে আসেই না...
কঙ্কনা সেনশর্মা তো ইন্টেলেকচুয়াল ছবিতে ভাল কাজ করেছেন। কই, ওঁকে তো আমি সে রকম অন্তরঙ্গ দৃশ্যে দেখতে পাই না! সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখুন। কী রেঞ্জ! কই স্কিন শো তো নেই। আমার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটা বারবার ওঠে। আমার মনে হয়, ভাল কিছু কাজ করার জন্য ‘ভিশন’ দরকার। শুধু ক’টা দৃশ্য ঢুকিয়ে দিলেই হয় না। ম্যাচিওর সাবজেক্ট নিয়ে আমিও কাজ করতে চাইব। বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং অফারও পেয়েছি। হয়তো বাজেটে পোষায়নি। বা চরিত্রটা আমাকে স্যুট করেনি।
পরিচালনা করার কথা ভাবেন?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিচালনার ব্যাপারেও কিছুটা আইডিয়া হয়েছে। বলছি না যে পরিচালনা করব না। করতেও পারি।
পলিটিক্স? ভোটে দাঁড়ানোর কথা উঠলেই কি ‘ওরে বাবা রে’ বলে দৌড়ে চলে যান?
পলিটিক্স সহজ ব্যাপার নয়। খুব ডেডিকেশন দরকার। এটা ফুল-টাইম জব। আমি যে লোকের জন্য সময় দিতে পারব, এ নিয়ে মনে কোনও দ্বিধা থাকলে রাজনীতিতে জয়েন করা উচিত নয়। তবে আমি ১০০ শতাংশ শিওর হলে পলিটিক্স-এ জয়েন করতেই পারি। আই উইশ অল দ্য বেস্ট টু দেব, মুনমুন মাসি, সন্ধ্যা আন্টি...
ইলেকশনের প্রচার করবেন?
আপত্তি নেই। বললে আমি যেতে পারি।
বিয়ের পরে রানি মুখোপাধ্যায়কে নাকি যশরাজ ফিল্ম-এ মালকিন বলে ডাকা হয়। সুরিন্দর ফিল্ম-এ কি আপনার সে রকম কোনও আলাদা পোস্ট আছে?
(হাসি) সে রকম কোয়ালিফিকেশন নেই তো যে আমাকে একটা পোস্ট দেওয়া হবে। ‘চার’, ‘হাইওয়ে’, ‘অরুন্ধতী’র রিলিজ সামনে। এখন প্রোডাকশনটা একটু বুঝি। রানে এখন টেলিভিশন সিরিয়াল প্রযোজনা করছে। ওর প্রযোজনায় হচ্ছে ‘রাজযোটক’। সিরিয়ালটা আমি দেখি। মাঝে মধ্যে সিরিয়ালের এডিটিংয়ের সময় কিছুটা সাজেশনও দিই। ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’ বলে একটা সিরিয়াল শুরু হবে। সেটার অনেক আইডিয়াই আমার দেওয়া। টেলিভিশনের এই সব কাজ একটা নতুন জানালা খুলে দিয়েছে।
নতুন যে অভিনেত্রীরা সিনেমা করতে আসছেন, তাঁদের কী পরামর্শ দেবেন?
একটাই পরামর্শ। বি টাফ। ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে গেলে অল্পতেই গায়ে ফোস্কা পড়লে চলে না।
ছবি: সোমনাথ রায়, পোশাক: তেজস গাঁধী, মেক আপ: নবীন দাস।