গৌরব চট্টোপাধ্যায়।
শনিবার মথুরামোহন বিশ্বাস হিসেবে শেষ শট দিলেন গৌরব চট্টোপাধ্যায়। তার পর? সেট থেকে বেরিয়েই গাড়ি চালাতে চালাতে মুঠোফোনে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি...
প্রশ্ন: ‘রাণী রাসমণি’ ধারাবাহিকের পুরনো চরিত্রেরা একে একে বিদায় নিচ্ছেন। রানিমার পর এ বার জামাই মথুরামোহন বিশ্বাস। দর্শকদের ভীষণ মনখারাপ। গৌরবের কতটা?
গৌরব: বদলে নতুন চরিত্র আসছেন। ইতিহাসাশ্রিত ধারাবাহিকের এটাই নিয়ম। পুরনোরা যাবেন। নতুনদের জায়গা করে দিয়ে যাবেন। টানা তিন বছর ধরে একটি ধারাবাহিকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করলাম। নিয়ম মেনেই আমার পর্ব শেষ। এ বার পরিবার থেকে দূরে সরার পালা। কেমন যেন চাপ ধরা অনুভূতি। শনিবারে শেষ শট দিলাম। কয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো ধারাবাহিকেও আমার শেষ দৃশ্য দেখানো হবে। সব মিলিয়ে খুবই কষ্টের। ‘বধূবরণ’ ধারাবাহিক শেষ হওয়ার পরেও ঠিক এই কষ্ট পেয়েছিলাম। ওটা সাড়ে তিন বছর চলেছিল।
প্রশ্ন: শেষ শ্যুট মানেই সেটে কান্নাকাটি?
গৌরব: হ্যাঁ, সে তো হবেই। সন্তান, নাতি-পুতিদের বড্ড মনখারাপ (হাল্কা হাসি)। পুরুষ অভিনেতা বন্ধুরা কাঁদতে পারেননি। সেটের এক কোণে মুখ চুন করে বসে ছিলেন।
প্রশ্ন: আপনি?
গৌরব: আমি পালিয়ে যাই। শনিবারেও তাই-ই এসেছি। এই ধরনের পরিস্থিতি এখনও সামলাতে পারি না। কাঁদতেও পারি না। ফলে, সব মিলিয়ে কেমন যেন হয়ে যাই। শট শেষ হতেই তাই আর অপেক্ষা করিনি।
প্রশ্ন: অনেক দিন অভিনয় করছেন। তবু নিজের মালা পরানো ছবি দেখলে বুকের মধ্যে ছ্যাঁৎ করে ওঠে না?
গৌরব: আমার করে না। আমার বোনেদের এখনও হয়। নবমিতা, মৌমিতা বহু বার আমার মৃত্যুদৃশ্য, অন্তিম যাত্রা, মালা দেওয়া ছবি দেখে কেঁদে ভাসিয়েছে।
প্রশ্ন: শেষ শট কার সঙ্গে ছিল?
গৌরব: শ্রী রামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে। সৌরভ আর আমার দীর্ঘ দৃশ্য ছিল। শ্যুট শেষে সৌরভদা আক্ষরিক অর্থেই ভেঙে পড়েছিলেন। অবসরে আমরা আড্ডা দিতাম তো।
প্রশ্ন: ছোট ঠাকুর মথুরবাবুকে কী আশীর্বাদ করলেন? ‘তোমার চৈতন্য হোক’?
গৌরব: (হেসে ফেলে) না না! বললেন, আমাদের এক দিন জোরদার আড্ডা হোক।
প্রশ্ন: শেষ শ্যুটে ‘রানিমা’ ওরফে দিতিপ্রিয়া রায় থাকলে কী হত?
গৌরব: আজ যে ভাবে পালিয়ে এসেছি, সে ভাবে পালিয়ে আসতাম না। আরও কিছুক্ষণ থাকতাম। দিতিপ্রিয়ার বড় গুণ, খুব কষ্টের মধ্যেও সবার ভিতর থেকে হাসি টেনে বের করতে জানে। এমন দিনে দিতিপ্রিয়াকে খুব মিস করছি।
প্রশ্ন: শেষ দিনে শ্যুটের পর নিশ্চয়ই সেট থেকে উপহার পেয়েছেন? দিতিপ্রিয়ার মতো?
গৌরব: ওই যে বললাম, পালিয়ে এসেছি। কাউকে এ সব করার সুযোগই দিইনি। শেষ পর্যন্ত থাকলে নিশ্চয়ই এ সব হত।
প্রশ্ন: এ বার ‘মথুরামোহন’-এর খোলস থেকে গৌরবের বেরিয়ে আসার পালা?
গৌরব: একদম। মনে যে খুব রেশ থেকে যায়, তা নয়। তবে এতগুলো দিন মথুরামোহন হয়ে কাটানোর ছাপ তো পড়েই। কথাবার্তায় পড়ে। এত দিন মথুরামোহনের ভঙ্গিতে কথা বলে এসেছি। উচ্চারণগুলো বদলে গিয়েছিল। বাড়িতেও সে ভাবেই বলতাম। বাড়ির লোকেরা কিছু মনে করত না। কিন্তু এ বার যখন অন্য কাজ করব সেখানে তো এই উচ্চারণ চলবে না! ফলে, খুব তাড়াতাড়ি এই পর্ব মেটাতে হবে।
প্রশ্ন: শুধু উচ্চারণেই প্রভাব পড়েছে! জীবনযাত্রায় বদল ঘটেনি? মানে অতিরিক্ত ঈশ্বরভক্তি, অলৌকিক দর্শন..
গৌরব: আমি বরাবর ঈশ্বর মানি। কিন্তু অন্ধবিশ্বাসী নই। এই ধারাবাহিক আমায় সেটা তৈরি করতে পারেনি। বাকি, অলৌকিক দর্শন। সে সব কিছু হয়নি।
প্রশ্ন: রেটিং চার্ট বলছে, দিতিপ্রিয়ার পর আপনার না থাকা নম্বরে ভাল ছাপ ফেলবে...
গৌরব: একটা উদাহরণ দিই? তখন আমি, দিতিপ্রিয়া দু’জনেই আছি। ধারাবাহিকের রেটিংও ভাল। হঠাৎই নামতে শুরু করল নম্বর। ‘রাণী রাসমণি’ আচমকাই রেটিং চার্টে অনেকটা পিছিয়ে। আমার দুশ্চিন্তা শুরু। এ বার কী হবে? প্রোডাকশন বলল, তোমায় এই নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। তোমার কাজ করে যাও। তার পরে সত্যিই এক দিন দেখলাম, আমরা আবার শীর্ষে। দিতিপ্রিয়া-গৌরব থাকলেই রেটিং ভাল হবে, না থাকলে নম্বর উঠবে না-- ভুল কথা। যাঁরা নতুন এসেছেন, তাঁরাই ধারাবাহিককে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
প্রশ্ন: তা হলে আপাতত বিশ্রাম?
গৌরব: বসে থাকলে তো চলবে না! আমিও বসে থাকব না। একাধিক সিরিজে ডাক পেয়েছি। আরও কথা চলছে। যদিও মথুরামোহন চরিত্রে অভিনয় করতে করতেও সিরিজে অভিনয় করেছি। দেখা যাক, কোন কাজে হাত দিই।
প্রশ্ন: বড় পর্দা না আবার ছোট পর্দা?
গৌরব: বড় পর্দায় কিছু কাজ করলাম। উইনডোজ প্রোডাকশনের ‘বাবা বেবি ও...’, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘অতি উত্তম’, রাজর্ষি দে-র ‘মায়া’ মুক্তির অপেক্ষায়। অতনু বসুর ‘অচেনা উত্তম’-এ আমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। রাজি হইনি।
প্রশ্ন: যত দিন কাজে না যাচ্ছেন, কী করবেন?
গৌরব: আমি বোর হই না! সকালে সাইকেল নিয়ে বেরোব। জিমে ঘাম ঝরাব। তার পর বাড়িতে একের পর এক ভাল সিনেমা বা সিরিজ দেখব। বেরোতে না পারলেই বরং বেঁচে যাই।
প্রশ্ন: তাজা হতে দেবলীনাকে নিয়ে আরও একটা ট্রিপ?
গৌরব: (হাসতে হাসতে) দেবলীনা এখন বেশ ব্যস্ত। জি বাংলার ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ নিয়ে। আর কাজ শেষ মানে পয়সাও শেষ। তাই এক্ষুণি আর গোয়া হবে না। তবে কাছেপিঠে এক-দু’দিনের জন্য বেড়াতে যাওয়া যেতেই পারে।