অভিনেতা: শ্যুটিং-এ রাজপাল যাদব। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের পর্যটনের মানচিত্রে স্থায়ী স্থান মিলেছিল আগেই। এ বারে সিনেমার পালা। পুরুলিয়ার উত্তরপ্রান্তে রঘুনাথপুর মহকুমার নিতুড়িয়া ব্লকের গড়পঞ্চকোট পাহাড় ঘিরে ক্রমশই বাড়ছে বাংলা সিনেমার আউটডোর শ্যুটিং। সম্প্রতি পরিচালক স্বপন সাহা একটি নতুন বাঙলা ছায়াছবির আউটডোর শ্যুটিং করেছেন পঞ্চকোটে। এর আগে পরিচালক রাজ চক্রবর্তী তাঁর একটি ছায়াছবির আউটডোর লোকেশন হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন পঞ্চকোটকে। গত দু’বছরে চারটি বাংলা ছবির শ্যুটিং হয়েছে এই পাহাড় ঘিরে।
বাংলা সিনেমার পরিচালকদের কাছে পুরুলিয়ার দক্ষিণ প্রান্তে অযোধ্যা পাহাড় ছিল আউটডোর শ্যুটিং-এর অন্যতম গন্তব্য। বেশ কিছু বড় বাজেটের বাংলা সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে অযোধ্যায়। বর্তমানে সেই তালিকায় ঠাঁই করে নিচ্ছে উত্তর প্রান্তের পঞ্চকোটও। সিনেমা জগতের লোকজনের মতে, পঞ্চকোটের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। পাহাড়ের পাশাপাশি দামোদর নদ। রয়েছে জঙ্গলও। হাতের নাগালে একই সঙ্গে তিন রকমের প্রকৃতি মিলে যাওয়ায় লোকেশনের জন্য পরিচালকেরা পঞ্চকোটের দিকে ঝুঁকছেন। তার উপরে, অযোধ্যার তুলনায় কলকাতা থেকে পঞ্চকোটের দূরত্ব কম। আসানসোল ঘেঁষা ওই এলাকায় যাতায়াতের বন্দোবস্তও ভাল।
পঞ্চকোট পাহাড় ঘিরে গত কয়েক বছরে তৈরি হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বেশ কয়েকটি রিসর্ট। স্বপন সাহার সিনেমার ইউনিটের এক জনের কথায়, ‘‘পুরো ইউনিটের শতাধিক লোকজনের থাকার বন্দোবস্ত এলাকাতেই হওয়ায় ফলে অনেকটাই সুবিধা হচ্ছে।’’ রিসর্টগুলিতে আধুনিক সুযোগসুবিধা থাকায় ছবির শ্যুটিং-এ এসে গোবিন্দা বা রাজপাল যাদবের মতো বলিউডের অভিনেতারও সেখানেই থাকছেন।
বস্তুত, পঞ্চকোট ক্রমশই টলিউডের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠছে। ভবিষ্যত সম্ভবনাময় হওয়ায় ওই এলাকায় রিসর্ট তৈরিতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে। পাহাড়ের কোলে তৈরি হচ্ছে বেসরকারি সংস্থার বড় রিসর্ট। সেখানকার এক বিনিয়োগকারী জানান, তাঁরা চেষ্টা করছেন আউটডোর শ্যুটিং এর পাশাপাশি ইন্ডোর শ্যুটিং-এর ব্যবস্থাও করার। ঘটনা হল, ‘ত্রয়ী’ ছবির শুধু আউটডোরই নয়, ইনডোর শ্যুটিং-এর একটা বড় অংশও হয়েছিল এই এলাকাতেই।
গোটা রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকায় জুড়েই সিনেমার শ্যুটিং-এর জন্য পরিচালকেরা আসুন, চাইছেন স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি। তাঁর কথায়, ‘‘দুই বছরের মধ্যে চারটে সিনেমার আউটডোর ও ইনডোর শ্যুটিং হয়েছে পঞ্চকোটে। এই এলাকা পরিচালকদের পছন্দের তালিকায় ঠাঁই পাচ্ছে। তবে আমরা চাইছি শুধু পঞ্চকোটই নয়, রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড়, সাঁতুড়ির বড়ন্তিতেও পরিচালকেরা আসুন।’’
জয়চণ্ডীতেই সত্যজিৎ রায় ‘হীরক রাজার দেশে’-র একটা অংশের শ্যুটিং করেছিলেন মনে করিয়ে দিচ্ছেন পূর্ণচন্দ্রবাবু। বিধায়কের দাবি, ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে যাতায়াতের ব্যবস্থা, দর্শনীয় স্থান ইত্যাদির বিশদ বিবরণ তৈরি করে পর্যটন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। দফতরের মাধ্যমে পর্যটক এবং পরিচালকদের আরও বেশি করে এলাকায় টেনে আনতে চাইছেন তাঁরা।
বড়পর্দায় এ বার ধরা থাকবে গড়পঞ্চকোটের প্রকৃতি।