‘ভটভটি’ জলের নীচের রূপকথা
জলের নীচে লুকনো এক রূপকথা। সেখানে মৎস্যকন্যার বাস। কেবল ভটভটিই তাকে দেখতে পায়। কারণ, সে কল্পনা করতে জানে। সে খুব সুন্দর গল্পও বলতে পারে। সেই অলীক স্বপ্নের দৌলতেই প্রান্তিক মেয়ে হয়ে ওঠে জলের নীচের ‘এরিয়াল’! যদিও এ স্বপ্ন একা দেখে না ভটভটি। জাহাজপট্টির বাসিন্দাদের দু’চোখেও সেই মায়া জড়িয়ে দেয় সে।
স্বপ্ন, বাস্তব আর সম্পর্কের ত্রিকোণমিতি ধরা দেবে তথাগত মুখোপাধ্যায়ের ‘ভটভটি’-তে। নাম ভূমিকায় ঋষভ বসু। ছবির কেন্দ্রে থাকছেন প্রান্তিক মানুষেরা, যাঁরা গঙ্গা রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন। তাঁদেরই প্রতিনিধি ‘ভটভটি’। যাকে দেখলে লোকে খ্যাপা বলে। আদতে সে বড্ড সাদা মনের মানুষ।
তথাগতর এই নতুন ছবি মুক্তি পাবে ১১ অগস্ট। রবিবার পরিচালক-অভিনেতা আনন্দবাজার অনলাইনে প্রথম প্রকাশ্যে আনলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রাভিনেতাদের ‘লুক’। ফাঁস করলেন ছবির অজানা গল্পও। যেমন, পর্দায় বিবৃতি বাস্তব এবং কল্পনায় ধরা দেবেন। বাস্তবে তিনি যেন প্রান্তিক মণিপুরী কন্যার আদলে গড়া। পরিচালকের যুক্তি, শহরের প্রান্তিক বাসিন্দা যদি বস্তির বাসিন্দারা হন, দেশের প্রান্তিক অধিবাসী তবে মণিপুরের মেয়েরা। যাঁরা যখন তখন স্থানীয় পুরুষ, সেনাবাহিনীর লালসার শিকার। ভটভটির কল্পনায় সেই মেয়েই যখন মৎস্যকন্যা, তার সারা গা তখন আঁশে ঢাকা। সেই অংশের শ্যুটের আগে রোজ গায়ে আঁশ আঁকতে হত অভিনেত্রীকে। আলাদা করে তৈরি হত গোলাপি রঙের কান।
একই ভাবে দেবলীনা দত্ত ছবিতে বস্তির বাসিন্দা এক যৌনকর্মী। তথাগত-র যুক্তিতে, ‘‘নিজেকে ছাপিয়ে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছেন দেবলীনা। সাজে, পোশাকে, অভিনয়ে।’’ ছবিতে গুরুগম্ভীর এক চরিত্রে দেখা যাবে একেনবাবু খ্যাত অনির্বাণ চক্রবর্তীকে। রজতাভ দত্ত শ্মশানের ডোম হরিশচন্দ্র। যার অন্ধ বিশ্বাস, কাঠে না পোড়ালে মৃতের সদগতি হয় না। খারাপ মানুষের এক চরিত্রে দেখা দিচ্ছেন তথাগত স্বয়ং। এ ছাড়াও আছেন, মনু মুখোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে, মমতাশঙ্কর, লামা হালদার, দেবপ্রসাদ হালদার, অমিত সাহা, নিমাই দে-রা।
তথাগত আরও জানিয়েছেন, ৩০ ফুট জলের নীচে শ্যুটিং হয়েছে বহু দৃশ্যের। তার জন্য ঋষভ এবং বিবৃতিকে এক মাস স্কুবা ডাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। স্কুবা ডাইভারদের সঙ্গে জলের তলায় যেতে হয়েছে তাঁদের।অক্সিজেন মাস্ক খুলে প্রায় এক মিনিটের শট চলেছে। তার পরেই আবার মাস্ক পরে নিয়েছেন ঋষভ-বিবৃতি। সঙ্গে ছিলেন চিত্রগ্রাহকও। তাঁর মুখেও ছিল অক্সিজেন মাস্ক।
জলের নীচে ক্রোমা কাপড় টাঙিয়ে শ্যুটিং হয়েছিল। তার জন্য মুম্বইয়ের এক সুইমিং পুল ভাড়া করেছিলেন তথাগত। সেখানে শ্যুটের পর কলকাতায় ভিএফএক্স-এর কাজ হয়েছে। পরিচালকের দাবি, বাংলা ছবিতে এর আগে এ রকম ভিএফএক্স দেখা যায়নি। একই ভাবে জলের তলাতেই বানানো হয়েছিল সেট। ৩০ ফুট গভীর জলের তলায় রাজপ্রাসাদ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। সেখানে ঢুকে গিয়ে অভিনয় করেছেন শিল্পীরা।