পাওলি দাম।
প্র: পাওলি দাম মানেই বিষণ্ণ চরিত্র, ধারণাটা বোধহয় এ বার ভাঙবে...
উ: একদম! একটা হ্যাপি ক্যারেক্টার করতে চাইছিলাম অনেক দিন ধরেই। ‘সাঁঝবাতি’র ট্রেলারে ফুলিকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়নি, কারণ সে-ই এ ছবির সারপ্রাইজ় প্যাকেজ। এই প্রথম এত হাসিখুশি, প্রাণবন্ত একটা চরিত্র করলাম। দর্শক দেখুন যে, পাওলিও হাসতে জানে!
প্র: দার্জিলিংয়ের আউটডোরে কী রকম মজা করলেন?
উ: দেবের সঙ্গে প্রথম কাজ। যদিও ইউনিট তো চেনাই। সান্দাক ফু-র কাছে টুংলুং বলে একটা জায়গায় ছিলাম, যেখানে আমার মা-বাবা এক সময়ে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন। আমার নামটাও এক পর্বতশৃঙ্গের নামে রাখা।
প্র: ছবিতে ফুলি কি চাঁদুকে (দেবের চরিত্র) কোথাও ছাপিয়ে গিয়েছে?
উ: মনে হয় না। দেবের অডিয়েন্স আর আমার অডিয়েন্স একেবারেই আলাদা। ‘সাঁঝবাতি’ দেখতে যদি ওর আর আমার দর্শক একসঙ্গে আসেন, তাতে তো ছবিটারই লাভ। দেবের মতো মেনস্ট্রিম হিরোরাও যে ভাল, পারফরম্যান্স-নির্ভর ছবির সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন, সেটা তো ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে সদর্থক।
প্র: দেবের প্রযোজনায় কাজ করেছেন। জুটি বেঁধে কেমন লাগল?
উ: দেব জানপ্রাণ লড়িয়ে দিয়েছে চাঁদু চরিত্রটার জন্য। ‘আই লাভ ইউ’-এর সময় থেকে ওকে দেখছি। তখন আর এখনকার দেবের মধ্যে বিশাল পরিবর্তন। অনেক পরিণত এখন।
প্র: আপনি তো বুদ্ধদেব দাশুগুপ্তের অন্যতম ফেভারিট। ‘উড়োজাহাজ’ মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি। দেখলেন?
উ: ‘উড়োজাহাজ’টা আমার মিস হয়ে গিয়েছে। ছবিটার অংশ হতে না পারার আক্ষেপ জীবনে যাবে না আমার। বুদ্ধদার মতো একজন ইনস্টিটিউশনের সঙ্গে কাজ করার লোভ সামলানো মুশকিল। তবে খুব শিগগিরই ওঁর আর এক প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে কোলাবরেট করতে চলেছি আমি। এবং সেটা হিন্দিতে।
প্র: শোনা যায়, জয়া আহসানের সঙ্গে আপনার সদ্ভাব নেই...
উ: আমার ইন্টারভিউতে অন্য কারও সম্পর্কে বেশি কথা বলতে চাই না (হাসি)! আচ্ছা, কোনও দিন দেখেছেন আমাদের ঝগড়া করতে? ইন্দো-বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ডেও তো জয়া, আমি আর তনুশ্রী স্টেজে সারাক্ষণ ফিসফিস করে যাচ্ছিলাম। আর জয়া তো অনেক দিন ধরেই ভাল কাজ করছে এখানে। সমস্যাটা কোথায়? আমার আপত্তিটা ছিল অন্য জায়গায়।
প্র: কী বিষয়ে আপত্তি?
উ: আমার প্রশ্ন স্বীকৃতির জায়গাটা নিয়ে। আমার ছবি ‘সত্তা’ বাংলাদেশে পাঁচটি বিভাগে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেল। বেসরকারি পুরস্কারও পেয়েছে। পুরস্কার বা মনোনয়ন তো দূর, এ সবের কিছুই আমাকে জানানো হয়নি। সবটা হয়ে যাওয়ার পর পরিচালকের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম। জাতীয় পুরস্কার না হয় শুধু নাগরিকদের জন্য। কিন্তু স্বীকৃতির ক্ষেত্রে কেন শিল্পীদের নাগরিকত্ব বিচার্য হবে? কই, এখানে তো সেটা করা হয় না! জয়া এখানে যেমন ভালবাসা পেয়েছেন, পুরস্কারের মাধ্যমে স্বীকৃতিও তো পেয়েছেন। ওখানকার শিল্পীরা এখানে যে স্বীকৃতিটা পাচ্ছেন, সেটা ওখানেও হওয়া উচিত।
প্র: বাংলাদেশে তো আপনি পরিচিত মুখ। কাজও করতে গিয়েছেন একাধিক বার...
উ: হ্যাঁ...এবং যত বারই গিয়েছি, প্রভূত ভালবাসা পেয়েছি। এত আতিথেয়তা পেয়েছি, যে নিজেকে ভিনদেশি মনেই হয়নি কখনও। আমার ঢাকাই জামদানির কালেকশনের বেশির ভাগই ওখান থেকে উপহার পাওয়া। রুনা লায়লা থেকে শুরু করে আনুশে আনাদিল, অর্ণবের ফ্যান আমি।
প্র: আপনি ‘কালী’ ওয়েব সিরিজ়ের কাজ শেষ করলেন। সম্প্রতি ‘বালা’ ছবিতে ভূমি পেডনেকরের ডার্ক মেকআপ নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছিল, তাতে আপনার কী মত?
উ: ‘বালা’ আমি দেখিনি। ‘কালী’-তে শ্যামবর্ণ মেয়েদের নিয়ে সমাজের হিপোক্রেসিটা দেখানো হয়েছে। ‘টোপ’-এ কাজ করার আগে একটা এক মাসের গ্যাপ নিয়েছিলাম। ওই সময় বাড়িতে টানা থাকার ফলে আমার স্কিন টোন কিছুটা পরিষ্কার হয়েছিল। শুটিংয়ের প্রথম দিন বুদ্ধদা আমায় বলেছিলেন, তুমি এত ফর্সা হয়ে গেলে কী ভাবে? মাদারির খেলা দেখায়, এমন একজনের চরিত্র করছিলাম আমি। তখন পুরুলিয়ার রোদে পুড়ে আমায় ট্যান ফেলতে হয়েছিল ত্বকে। সব আর্টিস্টরা তো নিজেদের ত্বককে পোড়াতে চাইবেন না। আর কেরিয়ারের শুরুর দিকে ডার্ক স্কিনটোন নিয়ে অনেক বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছি। ‘কালবেলা’র সময় গৌতমদাই (ঘোষ) প্রথম আমায় বলেছিলেন, ইউ হ্যাভ আ লাভলি স্কিনটোন। সিনেমা বাদ দিন, গায়ের রঙের জন্য মেয়েদের বিয়ে ভেঙে যায় এ দেশে। কোন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তা তো চারপাশের ঘটনাতেই স্পষ্ট!