ছবি: কৌশিক সরকার।
সকাল থেকেই ‘জুলফিকার’য়ের প্রচারে ব্যস্ত তিনি। চলছে মিটিং আর ফোনকল। তার মধ্যেই দুপুরে বিরিয়ানি আর চাঁপ অর্ডার করে সোফায় বসলেন। শুরু হল আড্ডা...
• পুজোয় আপনার ‘জুলফিকার’। কিন্তু অষ্টমীর দুপুরে কেন মেটিয়াবুরুজ আর খিদিরপুরের কিছু লোকের মারামারি-গোলাগুলি দেখতে যাব, প্লিজ একটু বলবেন?
কলকাতা মানেই আমাদের কাছে একটা ট্যুরিস্টি ইমেজ রয়েছে। রসগোল্লা, হাওড়া ব্রিজ, দুর্গা প্রতিমা, কখনও সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল... কখনও গড়ের মাঠ — এটাই পপুলার কালচারে দেখানো হয়। পপুলার সিনেমা কী লিটারেচরেও তাই...
• পপুলার সিনেমা মানে ‘প্রাক্তন’কে মিন করছেন তো?
(হেসে) হ্যাঁ, পপুলার সিনেমা মানে ‘প্রাক্তন’, বর্তমান, ভবিষ্যৎ... সবটাই। কিন্তু রসগোল্লা আর ময়দান ছাড়াও একটা কলকাতা আছে, যেখানে আমরা যাই। আমরা ভোরবেলায় জাকারিয়া স্ট্রিটে নিহারি খাই। পোদ্দার কোর্টের পিছনে চাইনিজ ব্রেকফাস্ট খাই। নাহুমের কেক কিনি। ইন্ডিয়া রেস্তোরাঁর বিরিয়ানি খাই। এই যে নানান কৃষ্টি, নানান ধর্মের সহাবস্থান, এটাও কলকাতা। ঠিক তেমনই কলকাতার একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ খিদিরপুর আর মেটিয়াবুরুজ এলাকা। কিন্তু এই জায়গাগুলো কখনও আমাদের ফিল্মে দেখানো হয়নি। আর তা ছাড়া আমার মনে হয়েছিল, এটা খুব ভাল প্রেক্ষাপট হতে পারে...
• ফর ‘জুলিয়াস সিজার’ ?
অ্যাবসোলিউটলি। আমার অনেক দিন ধরেই ‘জুলিয়াস সিজার’ অ্যাডাপ্ট করার ইচ্ছে। ‘অটোগ্রাফ’য়েও ‘জুলিয়াস সিজার’য়ের একটা অংশ ছিল। আমি একটা প্রেক্ষাপট খুঁজছিলাম যেখানে গল্পটা ফেলা যায়। প্রথমে ভেবেছিলাম ক্রিকেট পলিটিক্সের সেটিংয়ে ফেলব। পরে ভাবলাম সেখানে আমি ভায়োলেন্সটা দেখাতে পারব না।
• ক্রিকেট পলিটিক্সে ‘জুলিয়াস সিজার’ হলে সিজার কে হতেন? বোর্ড প্রেসিডেন্ট?
হতেই পারত। কিন্তু ভায়োলেন্সটা হত না। তেত্রিশজন সেনেটর একজনকে ছুরি মারছে, সেই ভায়োলেন্সটা দেখাতে পারতাম না। সেটা এই কলকাতার আন্ডারওয়ার্ল্ডের সেটিংয়ে পেরেছি। আর আমি শেক্সপিয়রকে এত ওভার ইন্টেলেকচুয়ালাইজ বা ওভার মেটাফরিকাল করতে চাই না। আমি জেনুইনলি বিশ্বাস করি, ওভার ইন্টেলেকচুয়ালাইজ করলে একটা লস ইন ট্রানস্লেশনের ভয় থাকে।
• গত ডিসেম্বরে ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’য়ের অ্যাডাপ্টেশন করে ‘আরশিনগর’ বানিয়েছিলেন অপর্ণা সেন। একদমই চলেনি। ‘হেমন্ত’ও তাই। আপনার শেক্সপিয়র করতে ভয় লাগছে না?
না, আমার ইন্টারপ্রিটেশনটা আলাদা। দেখুন, শেক্সপিয়র কিন্তু ৪০০ বছর আগে রানির জন্যও নাটক লিখেছিলেন, আবার সেই মানুষগুলোর জন্যও লিখেছিলেন, যারা ভাল না লাগলে জুতো ছুড়ে মারত স্টেজে। এই ব্যালেন্সিং অ্যাক্টটা উনি করে গেছেন। আমি এই ব্যালেন্সটা রেখেছি যেখানে রানিরা বা একটা শ্রেণি একটা নির্যাস নিয়ে যাবে ‘জুলফিকর’ থেকে। অন্যরা এন্টারটেনমেন্ট নিয়ে বাড়ি ফিরবে।
• মা-মাসিমারা কী পাবেন ?
মা-মাসিমারা অ্যান্টনি আর ক্লিওপেট্রার প্রেমটা পাবেন। আমি তো শুধু ‘জুলিয়াস সিজার’ করছি না। সঙ্গে ‘অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা’-র অ্যাডাপ্টেশন রয়েছে ছবিতে। আর তা ছাড়া রয়েছে দুই বন্ধুর বিট্রেয়ালের গল্প। এটা এমন একটা শাশ্বত থিম যেটা সবাইকে অ্যাপিল করতে বাধ্য। সবার জীবনেও তো একটা ‘এট টু ব্রুটে’ মোমেন্ট আছে, তাই না?
• আপনার জীবনের ‘এট টু ব্রুটে’ মোমেন্ট কোনটা মিস্টার মুখোপাধ্যায়?
(হাসি) কোটি কোটি। আমার আজকাল কী হয়, কোনও একটা ঘটনা দেখলাম, তারপর নিজেকে বলি আবার ‘এট টু ব্রুটে’ হল। তারপর অন্য একটা ঘটনা ঘটল, তারপর একই কথা বলি।
• বিট্রেয়ালগুলো ছেলেদের কাছ থেকে না মেয়েদের কাছ থেকে?
(হাসি) মানে ব্রুটের সঙ্গে ব্রুটিনি না ব্রুটিকা বলছেন? সবই আছে মিলেমিশে। হয়তো অনেকের জীবনে আমিও ব্রুটাস। তবে আমি ‘জুলফিকার’ নিয়ে অনেক বেশি শিওর। গত বছর এতটা কনফিডেন্ট ছিলাম না।
• গত বছর মানে ‘রাজকাহিনী’র কথা বলছেন ?
হ্যাঁ। তখন আশেপাশে ছিল ‘শুধু তোমারই জন্য’র মতো ফুরফুরে প্রেমের ছবি। ‘কাটমুন্ডু’র মতো কমেডি। ‘ব্যোমকেশ’য়ের মতো গোয়েন্দা। সেখানে আমার ছবি ছিল অসম্ভব ডার্ক। ডিপ্রেসিং। ‘জুলফিকার’ অনেক মেনস্ট্রিম, অনেক পপুলিস্ট।
• এগারো জন নায়িকা ছিলেন। তাঁদের একটা অ্যাপিল ছিল?
মেয়েদের দেখার একটা অ্যাপিল ছিল সেটা সত্যি।
• বেড সিনও ছিল?
বেড সিন ছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তারা করছিলটা কী? খিস্তিখেউড় করছিল, মারপিট করছিল। একটা সেকশন অব অডিয়েন্সের কাছে সেটা গা-ঘিনঘিনে লেগেছিল, হুইচ ওয়েন্ট এগেনস্ট দ্য ফিল্ম।
• একটা কথা বলুন, ‘অটোগ্রাফ’, ‘২২শে শ্রাবণ’, ‘মিশর রহস্য’, ‘চতুষ্কোণ’ ছিল গ্লোরিয়াস কভার ড্রাইভ। সেখানে ‘রাজকাহিনী’ করে একটা ফ্লিক করলেন। এ বার সুইপ মারার চেষ্টা করছেন। যে কভার ড্রাইভ, শিওর শট রান দিয়েছে সেটা খেলছেন না কেন বলুন তো ?
গতবছর ফ্লিক কিন্তু আমাকে অনেক রান দিয়েছে। ‘মিশর রহস্য’র পর আমার সবচেয়ে বড় বক্স অফিস হিটের নাম ‘রাজকাহিনী’। আর তা ছাড়া কমফর্ট জোনে থাকতে ভাল লাগে না আমার। আমার ইউএসপি কী? আমি ধর্মেও আছি, জিরাফেও। আমার ছবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডও পায়, ফেস্টিভ্যালেও যায়। আবার বক্স অফিসেও সফল হয়। সেই জন্যই আমার সব সময় নতুন কিছু করতে ইচ্ছে করে। আর আমাকে সেই কনফিডেন্সটা বাঙালি দর্শকই দিয়েছে। তারা কি বলে, সৃজিত মুখার্জি তো? হ্যাঁ, কী গল্প বলবেন বলুন, আমরা দেখতে চাই। তারা জানে সৃজিতের ছবিতে দক্ষিণী রিমেক হবে না। তারাই আমাকে নতুন নতুন গল্প বলার সাহস দিয়েছেন। তবে এটা হিউজ প্রেশারও।
• ‘জুলফিকার’ নিয়ে আরও কয়েকটা প্রশ্ন করে অন্য প্রসঙ্গে যাব। এই ছবিতে তো মার্ক আর অ্যান্টনি দু’জন। এটা কেন করলেন?
হ্যাঁ, এখানে মার্ক আর অ্যান্টনি দু’জন। একজন মার্কাস আলি, যে রোলটা দেব করছে। আর অ্যান্টনি টোনি ব্রাগেঞ্জা, যেটা পরম করছে। কেন করছে সেটা ছবি দেখলে বুঝতে পারবেন।
• দেবকে বোবা রেখেছেন ছবিতে। নিন্দুকরা বলছে সেটা দেবের ডায়ালগ ডেলিভারিতে প্রবলেম আছে তাই জন্য!
দেবের ডায়ালগ ডেলিভারিতে নিশ্চয়ই প্রবলেম আছে। কিন্তু একদমই সেই জন্য ওকে বোবা করিনি। আমি দেবের সঙ্গে ‘শিবার ফিরে আসা’ করব ভেবেছিলাম। ওখানে দেবের ভূরিভূরি ডায়ালগ। কেন করছি সেটা বুঝতে গেলে ছবিটা দেখতে হবে।
• অনেকেই ‘জুলফিকার’কে তুলনা করছে অল টাইম বেস্ট ইলেভেন টিমগুলোর সঙ্গে যেখানে সবাই স্টার। কিন্তু এই অল টাইম ইলেভেনগুলোর দু’টো প্রবলেম হয়। ফার্স্ট, তারা টিম হিসেবে খেলে না। সেকেন্ড, সবাই ভাবে অন্য জন ঠিক খেলে দেবে, আমি আমার বেস্টটা না দিলেও হবে। আপনিও কি একই প্রবলেম ফেস করেছেন?
একেবারেই না। এখানেই ‘জুলফিকার’ গেম চেঞ্জার । বক্স অফিসে কী হবে আমি জানি না। তবে কুড়ি বছর পর লোকে বলবে, টালিগঞ্জে এমন একটা ছবি হয়েছিল বটে যেখানে দেব, বুম্বাদা, যিশু, পরম, পাওলি, নুসরত, রাহুল, অঙ্কুশ সবাই অভিনয় করেছিল। আর ক্রিকেটিং অ্যানালজিতে যদি বলতে হয় তা হলে অল টাইম ইলেভেনের প্রবলেমগুলো হয় যখন ব্যাটিং অর্ডার কী বোলিং অর্ডারটা ঠিক থাকে না। আমার কিন্তু দু’টোই পাক্কা আছে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানেন ঠিক কখন তাকে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে চলে যেতে হবে। পরম আর দেব জানে ওরা মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করবে আর ওদের রানিং বিটুইন দ্য উইকেটস যেন ঠিক থাকে। যিশু আমার মেন স্ট্রাইক বোলার। অঙ্কুশ জানে ও সেভেন ডাউনে নামবে আর ওকেই ম্যাচ শেষ করতে হবে। কৌশিক সেন আমার দ্রাবিড়। ফার্স্ট ডাউন।
‘জুলফিকার’য়ে দেব-নুসরত।
• একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। আপনি মুম্বইতে ছবি করছেন। আপনি টালিগঞ্জের প্রথম সারির পরিচালক। কিন্তু ফেসবুক-এ একটা গোষ্ঠী আছে, যারা আপনার কথা শুনলেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। এটা কীসের ব্যাগেজ ক্যারি করছেন আপনি? প্রেসিডেন্সি কলেজের? জেএনইউ-য়ের? নাকি আপনার পড়াশোনার?
হ্যাঁ, ফেসবুকে একটা ছোট গোষ্ঠী আছে এ রকম। তাদের সৃজিত মুখার্জির অ্যাকসেপ্টেন্স নিয়ে অসুবিধা আছে। সত্যি তো সৃজিতের এত অ্যাকসেপ্টেড হওয়ার কথা ছিল না! সৃজিত রিমেক বানায় না। সৃজিতের ছবি নিয়ে দুর্বোধ্য আঁতলামি করা যায় না। সৃজিতের ছবি ‘মাস’য়েরও ভাল লাগে, ক্লাসেরও। এই ব্যালেন্সিং অ্যাক্টটা করতে পারব সেটা ওরা ভাবতে পারেনি।
• মানে ওরা সৃজিতকে ‘স্লট’ করতে পারছে না?
ইয়েস। স্লট করতে পারছে না। সৃজিত ও দের কাছে ‘ইরিটেটিং ইচ’। সৃজিতের নাম শুনলে ওদের চুলকানি হয়। তা ছাড়া সৃজিতের পড়াশোনা আছে ওদের মতোই। সৃজিতের সিনেমায় এমন কিছু রেফারেন্স থাকে যেগুলো দেখে তাদের মনে হয়, ‘‘আরে এগুলো তো আমিও পড়েছিলাম, ব্যাটা ইউজ করে নিল। না হয় আমি প্রোডিউসর পাইনি। কিন্তু সৃজিতের এত সাহস হয় কোথা থেকে?’’ আরে তুমি তো তোমার কমফর্ট জোন থেকেই বেরোওনি। তোমার কাছে আছে একটা ইন্টারনেট কানেকশন। সেটাতে যা ইচ্ছে লিখে তুমি একটা পাড়ার রক বানিয়েছ। এটা কী রকম জানেন? কোনও ফিজিক্সের প্রোফেসর যদি বাড়ি বানাতে চায় এদের অবস্থা সেই রকম। আরে, বাড়িটা তো বানাবে ইঞ্জিনিয়ার কী আর্কিটেক্ট। সেখানে কেউ যদি বলে, ‘‘না, নিউটনের ল’ বলছে এটা এ রকম হবে’’ তা হলে তো আর বাড়িটাই প্র্যাক্টিক্যালি কেউ বানাতে পারবে না। যদি এতটাই জানো আর বোঝো, তা হলে গতর খাটিয়ে একটা কুড়েঘর বানিয়ে দেখাও না।
যারাই বেশি অ্যাকসেপ্টেড, তাদের নিয়েই এদের প্রবলেম। কালকে শিবুর ছবি ফেস্টিভ্যালে গেলে শিবুও গালি খাবে। কালকে কৌশিকদার ছবি আরও বক্স অফিস হিট হলে কৌশিকদাও শুনবে। এদের বক্তব্য শিবু সিরিয়াল বানায়। আরে একটা সিরিয়ালই বানিয়ে দেখা তোরা। একটা ‘শব্দ’ বানা। এই ফেসবুকেন মারিতং জগৎটা আজকাল ঘেন্না করি। আগে রিঅ্যাক্ট করতাম। এখন চুপ করে গেছি।
• এত দিন ডিরেক্টর হিসেবে আপনি ছিলেন বাংলা ছবির পোস্টার বয়। কিন্তু হঠাৎ করে গত বছর মে মাস থেকে একজন পাঁচ ফুট পাঁচের দাড়িওয়ালা পরিচালক আপনার পাশে এসে গেছেন, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়...
...অ্যান্ড আই লাভ দ্যাট ম্যান। শিবুর পোস্টার আমি আমার ঘরে টাঙাই। ওর সিনেমা, ওর চরিত্রায়ন, ও যে পিচে গল্প বলে সেটার সঙ্গে আমি একমত নই। সেটা শিবুকে বলেওছি। গল্প বলার দিক থেকে আমি কৌশিকদার সঙ্গে অনেক বেশি মেন্টালি কানেক্টেড। কিন্তু আমি যেটা করেছিলাম, মানে পুটিং বেঙ্গলি সিনেমা অন দ্য ম্যাপ, সেই কাজটা আমার পরে শিবু একা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নিখাদ বাঙালিয়ানায় পরিপূর্ণ একটা ছবি ও বানায়।
• আপনি কম্পিটিটিভ। রাফল্ড হননি?
আমার সাকসেসই আমাকে রাফল্ড হতে দেয়নি। আই অ্যাম টু সাকসেসফুল টু গেট রাফল্ড। আর শেষ পাঁচ-ছয় বছরে কিন্তু আমার আর শিবুরই প্রত্যেক বছর একটা করে সুপারহিট আছে। আর তা ছাড়া আমার এখন হিন্দি ছবি চলছে। একটা অল রাউন্ড সাকসেসের মধ্যে রয়েছি। আর অন্যরা ভাল করলে আমি সবার আগে বলি।
• ‘বেলাশেষে’ নিয়ে তো অনেক দিন কিছু বলেননি?
সে সময় হসপিটালে ছিলাম। ছবিটা অনেক পরে দেখেছি। তবে আমি আজও মনে করি, ‘মুক্তধারা’ শিবুর বেস্ট ছবি। দেখুন, ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ কী ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখে আমি সবার আগে বলেছিলাম। ‘শব্দ’ দেখে মনে হয়েছিল, ইস, আমার নাম কেন নেই ডিরেক্টরের কার্ডে।
• যখন বাকি ফিল্ডাররা, মানে ডিরেক্টররা ধীরে ধীরে মিড উইকেট থেকে ফরওয়ার্ড শর্ট লেগ অবধি এসে যায়, তখন সেই ফিল্ডারদের আবার দূরে পাঠানোর একটা স্ট্র্যাটেজি থাকে ব্যাটসম্যানের। সেই স্ট্র্যাটেজিটা কি সৃজিতের?
তখন আমি অল আউট খেলি। আই গো ফর বিগ শটস। আর হিংসে আর হিংসার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম তফাত আছে। আমি ‘মেঘে ঢাকা তারা’, কী ‘শব্দ’ দেখে হিংসে করেছিলাম, কৌশিকদার ‘২২শে শ্রাবণ’ দেখে হিংসে হয়েছিল। কেজি আমাকে ফোন করে বলেছিল, ‘‘ঠিক আছে। গিভ মি সাম টাইম। উইল গেট ব্যাক।’’ তার পর কেজি ‘শব্দ’ নিয়ে এল। এই জিনিসগুলো ফ্যাসিনেটিং। এই কম্পিটিশনগুলো...
• বিরসা দাশগুপ্তর পুজোর ছবি ‘গ্যাংস্টার’-এর গান ইউটিউবে আপনার ‘জুলফিকার’-এর গানকে পিছিয়ে দিল। সেটাও তো কম্পিটিশন?
এই, আমি না সিনেমা নিয়ে কথা বলছিলাম। ইউটিউবে কার কত হিটস তা নিয়ে নয়। সিনেমা আর মিউজিক ভিডিয়োর একটা তফাত তো থাকবে! ইউটিউবের হিট হল মার্কেটিং টিমের জয়। সিনেমার সাকসেসের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।
• ‘জুলফিকার’-এর গান ইউটিউবে পিছিয়ে আছে, তাই বলছেন?
না। সে তো আগের বছর আমার গান এগিয়ে ছিল বিরসার গানের থেকে। ইউটিউব ভিউজকে অত গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। আমি আগে দিতাম। আমার মনে হয়েছিল এটাই সেই ইন্ডিকেটার যেটা ফিল্মের পপুলারিটি বলে দেবে। আসলে আমি অঙ্কের মানুষ তো...
• সেটা নিয়েও অনেকের আপত্তি আছে জানেন নিশ্চয়?
(হাসি) ওটায় আসছি। ‘পারব না আমি ছাড়তে তোকে’-এর গান চল্লিশ লাখে পৌঁছেছিল। হোয়াট আর উই টকিং অ্যাবাউট? ‘লাভ এক্সপ্রেস’-এর গানও তো তাই। তাদের বক্স অফিস রেজাল্ট আমাদের সামনেই আছে। ইউটিউব নিয়ে যারা আত্মহারা তাদের সেগুলো বোঝা উচিত। যদি সংখ্যা নিয়ে কথা বলতেই হয় তা হলে বক্স অফিসের সংখ্যা নিয়ে কথা হোক না? দেখি কার কত দম? ২০১০ থেকে ছবি করছি। সেটার বক্স অফিস সংখ্যা বার করা হোক। ক’টা ডিভি়ডি বিক্রি হয়েছে, গানের কলার টিউন থেকে কত টাকা কামিয়েছে আমার ছবি, সেটার হিসেব হোক। এই হিসেবগুলো আনলে তবেই তো একটা সংখ্যার সঙ্গে হিটের কোরিলেশন হবে। ও, কোরিলেশনটা তো স্ট্যাটিস্টিক্যাল শব্দ। আপামর মানুষ নাও বুঝতে পারে।
• এটা কি বিরসার উদ্দেশ্যে বললেন?
কারও উদ্দেশ্যে নয়। এ বার গত বছর থেকে আজকের কথায় আসি, কেমন? গত বছর ‘রাজকাহিনী’ বানিয়েছিলাম, সেটা এ বছরে হিন্দিতে রিমেক হচ্ছে উইথ বিদ্যা বালন। ছবিটা ১৯টা ফেস্টিভালে ঘুরেছে। ‘রাজকাহিনী’ রিলিজ হয়েছিল ৬৫টা হলে। বক্স অফিসে কামিয়েছিল সওয়া পাঁচ কোটি টাকা। অন্য একটা ছবি...
• বিরসার ‘শুধু তোমারই জন্য’?
সেটা রিলিজ হয়েছিল ২১১ টা হলে, কামিয়েছিল ছয় কোটি টাকা। কোনটা বড় হিট জানতে নিশ্চয়ই ইকনোমিস্ট হওয়ার দরকার নেই।
• সো ইউ রেস্ট ইয়োর কেস?
নো, আই ডোন্ট। ইকনোমিস্ট কেন, উপরের হিসেবটা বুঝতে ক্লাস টু-এর ম্যাথামেটিক্স জানলেই হবে। জাস্ট বেসিক লেভেলের গণিত। নাউ আই রেস্ট মাই কেস।
• আর এই যে ঝামেলাটা গান কপি নিয়ে চলছে। অরিন্দমের কপি বা ইন্সপিরেশন, অনুপমের টুইট।
অনুপম টুইট করে যে ভুল করেছিল তা নয়। কিন্তু যে ভাবে বলেছিল সেটা রাফ ছিল। অনুপম ও রকমই কথা বলে। আমি প্রথম গানটার পর ওকে টুইট ডিলিট করতে বলেছিলাম। কিন্তু তার পর যখন দেখলাম দ্বিতীয় গানটাও অরিজিনাল নয়, আর টুইট ডিলিট করতে বলিনি।
• পরের গানটা অরিজিনাল নয়, এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? যাকে বলে ফার ফেচড?
খানিকটা ফার ফেচড নিশ্চয়। প্রথম দিকটায় মিল আছে, তার পরে আর নেই। আর সে দিন দেখলাম বিরসা আনন্দplus-এর ইন্টারভিউতে বলেছে আজকাল নাকি শেক্সপিয়র আর বিভূতিভূষণকে অ্যাডাপ্ট করা হচ্ছে বলে অরিন্দম-এর ফ্রেম টু ফ্রেম কপিটা জাস্টিফায়েড। এই অ্যাডাপ্টেশনের সঙ্গে এটার কি কোনও তুলনা হয়? এটা অযৌক্তিক। নির্বুদ্ধিতা। বিভূতিভূষণের গল্প থেকে সত্যজিৎ রায় অ্যাডাপ্ট করে ‘পথের পাঁচালী’ বানিয়েছেন বলে অরিন্দমও লুডোভিকের সুর আপন করে নিয়েছে — এই লজিক বাঙালি দর্শক বা পাঠক মেনে নেবে না। সে দিন দেখলাম বিরসা এটাও বলেছে রবীন্দ্রনাথ, আরডি-ও ইন্সপায়ার্ড হয়েছেন, তাই অরিন্দমের দোষ নেই। রবীন্দ্রনাথ, আর ডি বর্মন আর অরিন্দমকে এক আসনে বসানো নিয়ে আমি বক্তব্য রাখতেই চাই না। এটাও বলা হয়েছে অনুপম আর ইন্দ্রদীপ(দাশগুপ্ত) নাকি অরিন্দমকে নিয়ে ইনসিকওর্ড। ওহ! কাম অন...
• অনেকে বলছে ‘জুলফিকার’ যেভাবে রিলিজ হচ্ছে তা নিয়ে আপনি খুশি নন। হলের সংখ্যা থেকে প্রচার সবটাই নাকি ‘গ্যাংস্টার’ বেশি পাচ্ছে?
পাচ্ছে তো। আমার যেখানে পঁচাত্তরটা হলে রিলিজ, ‘গ্যাংস্টার’ পাচ্ছে দেড়শোটা হল। বৈষম্য তো হচ্ছে। খারাপ লাগছে খুব। তবে আমার প্রযোজকরা, মানে মণি আর শ্রীকান্ত, কোনও দিন ক্রিয়েটিভ জিনিস নিয়ে ইন্টারফেয়ার করেনি। আমাকে সব সময় তারা স্পেস দিয়েছে। তাই ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে তারা যা ভাল মনে করবে সেটাই শিরোধার্য। তবে অল দ্য বেস্ট টু ‘গ্যাংস্টার’। অফকোর্স ‘জুলফিকার’ ইজ গেটিং আ র’ ডিল। তবে লোকে আমাকে বুঝিয়েছে, তুমি ক্লাসের ফার্স্ট বয়। অন্য দিকে নতুন একটা হিরো লঞ্চ হচ্ছে, তুমি একটু জায়গা ছেড়েই দাও না! সেদিন দেখলাম বিরসা এটাও বলেছে আমি টেনশন করছি কেন? আরে, আমি আমার সব ছবির আগেই এ রকম করি। আর একটা কথা, ফার্স্ট বয়-রা কিন্তু অকারণে অন্যদের নিয়ে বেশি টেনশন করে না। ওরা সবে ঢুকেছে, একটু একটু করে ভাল রেজাল্ট করার চেষ্টা করছে। ব্যস, আর কী বলব!
• মানে, বিরসা আর যশ দাশগুপ্ত এখনও দুধেভাতে? তাই তো?
(হাসি) হ্যাঁ, মানে ওই আর কী, ছেলে-মেয়েগুলো যেন থাকে দুধেভাতে...
আনাচে কানাচে
নায়িকার শপিং: হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। পুজোর কেনাকাটায় পাওলি। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।