মধ্যরাত, শহর ঘুমোচ্ছে। জেগে আছে তিন জন মানুষ। এক স্কিৎজ়োফ্রেনিক রোগী অভিমন্যু (ঋত্বিক চক্রবর্তী), মনোবিদ আভেরী (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) এবং পুলিশ অফিসার ঋষি (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)। এই তিনটি মানুষের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হতে থাকে অভিমন্যুর মনের এক অন্ধকার দিক। ধীরে ধীরে উঠে আসে এই ধরনের রোগীদের তথাকথিত অপ্রকৃতিস্থ আচরণের পিছনে লুকিয়ে থাকা সামাজিক কারণ। আভেরীর চোখে অভিমন্যু এক জন স্কিৎজ়োফ্রেনিক রোগী। অন্য দিকে ঋষি মনে করে, সে খুনি। পুলিশ জানতে পেরেছে, সে একটি খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার আসামী। সত্যিটা আসলে কী? অপরাধী মনস্তত্ত্ব ও থ্রিলারের ঠাস বুনোটে এগিয়েছে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘গুডনাইট সিটি’র গল্প।
পরিচালকের মতে, এই গল্প আজকের সমাজের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত। ‘‘সমাজে অপরাধপ্রবণতা ভীষণ ভাবে বেড়েছে। তার জন্য নির্ধারিত হয়েছে নানা শাস্তি। কিন্তু তাতে কি অপরাধ কমেছে?
এক জন চিকিৎসক হিসেবে বলতে পারি, আগের তুলনায় মনস্তত্ত্বের গুরুত্ব গোটা পৃথিবীতে অনেক বেড়েছে। এই যে মেট্রো রেলে দু’জনকে আলিঙ্গন করতে দেখে এক দল মানুষ উন্মত্ত হয়ে গেল। বা ধরুন, জাতিগত বিদ্বেষ থেকেও বহু মানুষ মানবিকতা হারাচ্ছে, অপরাধ করছে। এ ছবি তার একটা উৎস সন্ধান হতে পারে। একাকিত্বও অপরাধী মানসিকতার জন্ম দেয়। ঋত্বিকের চরিত্রটিতে এ রকম নানা পর্যায় এসেছে।’’ ছবিতে ঋত্বিক, শাশ্বত ও ঋতুপর্ণার পাশাপাশি আরও দু’টি চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ। অভিমন্যুর বাগদত্তার ভূমিকায় পায়েল সরকার ও অরুণিমা ঘোষ, অভিমন্যুর প্রাক্তন প্রেমিকা।
ছবিটি অপরাধী মনস্তত্ত্বের কথা বলে। পরিচালকের প্রশ্ন, অপরাধীকে কি আমরা মানবিক চোখে দেখব না কি শুধুই আইনের চোখে? বর্তমানে সমাজে যে রকম ঘৃণ্য অপরাধ হচ্ছে, তাতে কি আদৌ সেটা করা উচিত? ‘‘সেটাই তো প্রশ্ন। মানুষের ভিতরকার কালো দিকের প্রতিনিধি লোভ, কাম, হিংসা, অহং। সেটা কী ভাবে মানুষের মধ্যে কাজ করে, সে আলোচনাই উঠে এসেছে ছবিতে। এ ছবি শুধু থ্রিলার নয়, তা থেকে বেরিয়ে আ হিউম্যান স্টোরি,’’ ব্যাখ্যা পরিচালকের।