ধর্মচ্যুত হননি কাটাপ্পা

দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান, বাহুবলীকে কেন খুন হতে হল? এই প্রশ্ন গোটা ভারতকে তোলপাড় করছে। সে প্রশ্নের উত্তর কি সত্যিই পাওয়া গেল? অনুসন্ধানে আনন্দ প্লাসদীর্ঘ অপেক্ষার অবসান, বাহুবলীকে কেন খুন হতে হল? এই প্রশ্ন গোটা ভারতকে তোলপাড় করছে। সে প্রশ্নের উত্তর কি সত্যিই পাওয়া গেল? অনুসন্ধানে আনন্দ প্লাস

Advertisement

গৌতম চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৭ ০১:০৩
Share:

এভারেস্টে ওঠা আর কী এমন! সিজ্ন শুরুর আগে শেরপারা ‘রুট ওপেন’ করে জায়গায়-জায়গায় ল্যাডার লাগিয়ে দেন। ওঠার পথে মধ্যরাতে মাঝে-মাঝে জট বেঁধে যায়, বরফের সিঁড়িতে পা রেখে, কোমরে দড়ি বেঁধে অপেক্ষা করতে হয়। দুর! এর চেয়ে যদি কেউ খ্যাপা হাতির শুঁড়ে পা দিয়ে হেঁটে তার মাথায় গিয়ে দাঁড়ায়, ‘ক্যাপা’ বোঝা যায়!

Advertisement

ঠিক আছে, পর্বতপ্রমাণ ঐরাবতে চড়ার ঝুঁকি নিতে হবে না। ছুটন্ত ষাঁড়ের পিঠে হাঁটলেই হবে। অন্ধকার রাতে ছুটে যাচ্ছে অজস্র ষাঁড়, তাদের শিঙে আগুন জ্বলছে। একটার পর একটা উন্মত্ত ষাঁড়ের কুঁজে পা রেখে দৌড়ে চলেছেন যুবরাজ বাহুবলী (প্রভাস)। এ জিনিস মাহিষ্মতী বা কুন্তল রাজ্য ছাড়া দেখা যায় না, ভাই!

বাস্তব পৃথিবী তো যুদ্ধটুদ্ধও করতে পারে না। বড়জোর বিমান থেকে বোমা ফেলা বা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া! বাহুবলীকে দেখে শিখুন! দুর্গের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে অত্যাচারী রাজা বল্লালদেব (রানা দুগ্গুবাটি)। বাহুবলীর সৈন্যরা বুকে-পিঠে দু’ দিকে ইস্পাতের ঢাল বেঁধে জড়িয়ে দিল নিজেদের। তার পর লম্বা নারকেল গাছ রবারের মতো মাটিতে নুইয়ে দেওয়া হল। সৈন্যরা চড়ে বসল তার মাথায়। ঢেউ-কুচকুচ খেলার মতো এ বার গাছটাকে ফের ওপর দিকে ঠেলে দেওয়া হল। গতিজাড্যের প্রবল ধাক্কায় গাছে বসে থাকা ঢালগুলি পিপের মতো ঘুরতে-ঘুরতে দুর্গপ্রাকারের ও পারে গিয়ে পড়ল। এ রকম ‘হিউম্যান মিসাইল’ বাহুবলীই তৈরি করতে পারেন, আপনাদের সামর্থ্যে কুলোবে না।

Advertisement

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দিনে ‘বাহুবলী-২’-এর বক্স অফিস কালেকশন কত জানেন?

পরিচালক এস এস রাজামৌলির ‘বাহুবলী টু: দ্য কনক্লুসন’ এমনই দৃষ্টিনন্দন ভুরিভোজ। দু’ বছর আগে ছবির প্রথম পর্বে বিশাল জলপ্রপাত বেয়ে শিবার উঠে যাওয়া, মাহিষ্মতীর রাজপ্রাসাদ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এ বার দ্বিতীয় পর্বেও চমৎকার মোহাবেশ। সাবু সিরিলের সেট ডিজাইনিং থেকে কম্পিউটার গ্রাফিক্স, কোনটার কথা বলব, ভাবতে গেলেও মাথা ভোঁ ভোঁ করছে।

বাহুবলী টু: দ্য কনক্লুশন
৮.৫/১০

পরিচালনা: এসএস রাজামৌলি

অভিনয়: প্রভাস, অনুষ্কা শেট্টি,
রানা দুগ্গুবাটি, সত্যরাজ

একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রথম পর্ব ছিল নীলিমায় নীল। পাহাড়ের মেয়ে অবন্তিকার (তমান্না) শরীরে কখনও এক ঝাঁক নীল প্রজাপতি, কখনও নীল মাছের খেলা। সবই কম্পিউটারে তৈরি। আর এখানে দেবসেনাকে (অনুষ্কা শেঠি) নিয়ে তির ছোঁড়ার অ্যাকশনে বাহুবলী। রে-রে করে দস্যুরা আসছে, তার মাঝেই রাজপুত্র প্রেমিকাকে দেখিয়ে দিলেন কৌশল। ধনুকের ছিলায় টান দিয়ে একসঙ্গে তিনটি তির ছোঁড়া। একটি লক্ষ্যভেদেই সাত-আট জন শরাহত। যুদ্ধ, কম্পিউটার-ইমেজ ও প্রেম একাকার।

প্রেম কোথায় না থাকে? দেবসেনাকে নিয়ে বজরায় চেপে দেশে ফিরছেন বাহুবলী। সেই বজরা মাঝপথে উড়ে গেল মেঘের ঢেউয়ে, আকাশপথে। মৃত্যুর পরেও কি শেষ হল ভালবাসা? ছবির শেষ দিকে মন্ত্রপূত জল নিয়ে মন্দিরে চলেছেন দেবসেনা, স্বামী অমরেন্দ্র বাহুবলীর মৃত্যুর পর ২৫ বছর বল্লালদেবের দুর্গে বন্দি ছিলেন তিনি। আজ কোথাও না থেমে, এই জল নিয়ে মন্দিরে পৌঁছতে পারলে শপথ সমাপ্ত, তাঁর ছেলে যুদ্ধে জিতবে। বল্লালের সৈন্যরা সেতুতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মৃত রাজা বাহুবলীর মূর্তির মাথা তখনই ভেঙে গড়াতে- গড়াতে নদীর জলে। প্রবল জলোচ্ছ্বাস সেতুর আগুন নিভিয়ে দেয়। দেবসেনা অক্লেশে হেঁটে যেতে থাকেন!

অভিনয়ে সকলেই চমৎকার। মহারানি শিবাগামীর চরিত্রে রামাইয়া কৃষ্ণন এ বারেও বড় প্রাপ্তি। তামান্না এসেছেন শেষে, প্রায় এক্সট্রা হিসেবে। দেবসেনার ব্যর্থ প্রেমিক কুমারবর্মার চরিত্রে সুব্বা রাজু অভিনয়েও সমান ব্যর্থ। লোকে আরও অনেক সমালোচনা করতেই পারে। সিংহাসন নিয়ে দুই রাজপুত্রের দ্বন্দ্ব, দাদার পঙ্গুত্বের কারণে ছোট ভাইয়ের সিংহাসন লাভ, মহারানি শিবাগামী ও তাঁর বউমা দেবসেনার অগ্নিশপথ ইত্যাদি। এ সব কথায় ভুল বুঝবেন না। যা নেই বাহুবলীতে, তা নেই ভারতে!

পুনশ্চ: কাটাপ্পার চরিত্রে সত্যরাজ ফের অসাধারণ। তবে তিনি কেন বাহুবলীকে খুন করেছিলেন, বলা যাবে না। কাটাপ্পা ধর্মচ্যুত হননি। এই রিভিউয়ারও হবেন না। জয় মাহিষ্মতী!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement