ইন্ডাস্ট্রিতে মাত্র সাতটা বসন্ত পার করেছিলেন। বাকি ছিল আরও অনেকটা রাস্তা। কিন্তু আচমকাই সব শেষ হয়ে গেল। তবে মৃত্যুর পরেও দর্শকদের নিরাশ করেননি সুশান্ত সিংহ রাজপুত। তাঁর শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’ মুক্তি পেয়েছে কয়েক দিন আগে। তাতে ফের সুশান্তের অভিনয় মন জয় করেছে দর্শকের। তবে ‘দিল বেচারা’ তাঁর শেষ ছবি হলেও, তিনি যে এই ছবিতে অভিনয় করবেন, তা বলিউডে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই স্থির করে ফেলেছিলেন সুশান্ত। জেনে নিন ‘দিল বেচারা’ সম্পর্কে এমনই কিছু তথ্য যা হয়তো আপনার অজানা।
জন গ্রিনের ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টার্স’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘দিল বেচারা’ ছবির গল্প বুনেছেন পরিচালক মুকেশ ছাবরা। হলিউডে যদিও আগেই ওই গল্প নিয়ে ছবি হয়ে গিয়েছে। শেইলিন উডলি এবং আনসেল এলগর্ট অভিনীত সেই ছবির নামও ছিল ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টার্স।’
পরিচালনায় আসার আগে কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে মায়ানগরীতে বেশ পরিচিত মুখই ছিলেন মুকেশ ছাবরা। তিনিই ‘কাই পো চে’ ছবিতে ঈশানের চরিত্রে সুশান্তকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সেই ছবির হাত ধরেই ২০১৩ সালে বলিউডে আত্মপ্রকাশ সুশান্তের।
মুকেশ জানিয়েছেন, ‘কাই পো চে’-তে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ ছিলেন সুশান্ত। দু’জনের মধ্যে ভাল বন্ধুত্বও গড়ে ওঠে। ছবির শুটিং চলাকালীন এক দিন আড্ডা দেওয়ার সময় নিজের পরিচালক হওয়ার বাসনার কথা সুশান্তকে জানিয়েছিলেন মুকেশ। তা জানতে পেরে এক মুহূর্তও নষ্ট করেননি সুশান্ত। মুকেশে যখনই ছবি করুন না কেন, তিনি সেই ছবিতে অভিনয় করবেন বলে তখনই তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেন সুশান্ত।
তাই বছর দু’য়েক আগে ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টার্স’ বইটি অবলম্বনে ছবি করতে চান বলে সুশান্তকে জানান মুকেশ। চিত্রনাট্য না শুনেই তাঁকে মুহূর্তের মধ্যে হ্যাঁ বলে দেন সুশান্ত। তাই প্রযোজক খুঁজে পাওয়ার আগেই ছবির নায়ক পেয়ে যান মুকেশ।
ছবির নায়িকা হিসেবে নতুন মুখ খুঁজছিলেন মুকেশ। ‘রকস্টার’, ‘হিন্দি মিডিয়াম’ এবং ‘ফুকরে রিটার্নস’ -এ মতো ছবিতে অভিনয় করা সঞ্জনা সঙ্ঘীকে শেষমেশ পছন্দ হয় তাঁর। তার পরই ছবির কাজ শুরু হয়।
শুরুতে সুশান্ত এবং সঞ্জনার চরিত্রের নাম অনুযায়ী ছবির নাম রাখা হয়েছিল ‘কিজি অওর ম্যানি’। কিন্তু দর্শকের কথা ভেবে পরে তা পাল্টে রাখা হয় ‘দিল বেচারা’। ছবির নামের পিছনেও অন্য গল্প রয়েছে।
মুকেশ জানিয়েছেন, অস্কারজয়ী এ আর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হিমশিম খান অনেক প্রযোজক-পরিচালকই। কিন্তু ছবির সঙ্গীত এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, দুইয়ের দায়িত্বই রহমানকে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
সেই মতো সাহস করে রহমানের সঙ্গে দেখা করেন মুকেশ। তবে মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রহমান ছবিতে কাজ করতে রাজি হয়ে যান। তাঁর ‘দিল বেচারা’ গান থেকেই পরে ছবির নামকরণ হয়।
কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজের সূত্রে পরিচালক-প্রযোজক তথা কোরিয়োগ্রাফার ফারহা খানের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল মুকেশ ছাবরার। মুকেশ ছবি করলে তাঁর ছবিতে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করবেন বলে তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ফারহা। সেই কথা রাখেন তিনি। ছবিতে ‘দিল বেচারা’ গানটির কোরিয়োগ্রাফি করেন তিনি।
‘দিল বেচারা’র আগে কখনও ফারহার কোরিয়োগ্রাফিতে নাচেননি সুশান্ত। তাই প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তিনি। মাত্র একটা টেকে গোটা গানের শুটিং হবে জেনে আরও ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে ফারহার সঙ্গে শর্ত হয় যে, সুশান্ত যদি ভাল পারফর্ম করেন, তা হলে নিজে হাতে বাড়ি থেকে রেঁধে তাঁর জন্য খাবার আনবেন ফারহা। সুশান্তের পারফরম্যান্সে খুশি হয়ে তেমনটাই করেছিলেন ফারহা।
নায়িকা হিসেবে ‘দিল বেচারা’ই প্রথম ছবি সঞ্জনার। সুশান্তের মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে শুরুতে ভয় পেতেন তিনি। কিন্তু সুশান্তই তাঁকে সহজ হতে সাহায্য করেন বলে জানিয়েছেন সঞ্জনা। বাকি অভিনেতারা যেমন নিজের কাজ হয়ে গেলে ভ্যানিটি ভ্যানে চলে যান, সুশান্ত তা না করে সঞ্জনার কাজ দেখতেন। কোথাও কোনও ভুল হলে শুধরেও দিতেন। সঞ্জনা মুষড়ে পড়লে হেডফোনে দু’জনে একসঙ্গে গানও শুনতেন।
‘দিল বেচারা’ টাইটেল ট্র্যাকের শুটিংয়ে বাস্কেটবল খেলোয়াড় রেজি মিলারের জার্সি পরে দেখা যায় সুশান্তকে। তা নিয়ে রেজি মিলার নিজে টুইটও করেন। তিনি লেখেন, ‘‘সুশান্ত আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও, ওঁকে কখনও ভুলব না। ওঁর স্মৃতি এবং ওঁর অভিনীত ছবিগুলি চিরকাল থেকে যাবে।’’
লকডাউনে সিনেমা হল বন্ধ থাকায় গত ২৪ জুলাই ডিজনি+ হটস্টারে মুক্তি পায় ‘দিল বেচারা’। সুশান্তের হয়ে বলিউডের প্রায় সব কলাকুশলীই অনলাইনে ছবিটি প্রমোট করেন। মুক্তি পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছবিটি অনলাইেন ৯ কোটি ৫০ লক্ষ বার দেখা হয়। গড়ে ২০০ টাকা করে যদি সিনেমার টিকিটের দাম ধরা হয়, সেই হিসেবে সিনেমা হলে মুক্তি পেলে ছবিটি এক দিনে প্রায় ২০০০ কোটি টাকার ব্যবসা করত বলে মনে করছেন বলি মহলের অনেকেই।
আইএমডিবি-র রেটিংয়ে ছবিটি শুরুতে দশে দশ পেলেও, পরে তা কমে দাঁড়ায় ৯.৯। আর কোনও ভারতীয় ছবির এই রেকর্ড নেই। যদিও এই রেটিং কমে এখন ৯.২ হয়েছে।