বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা ইনি। সিনেমার চেয়েও দর্শকরা তাঁকে অনেক বেশি চিনেছেন ছোটপর্দার মাধ্যমে।
ছোটপর্দায় ‘বুনিয়াদ’ ধারাবাহিকে ‘লালা বৃষভান’ চরিত্রে তিনি অন্যতম জনপ্রিয়। এ ছাড়াও ‘চিতচোর’, ‘প্রেম রোগ’, পরবর্তীতে ‘দেবদাস’ ও ‘ঝঙ্কার বিটস’ সিনেমাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
মহারাষ্ট্রের রাজপরিবারের একজন সদস্য ইনি। বিজয়েন্দ্র ঘাটগে। কোলাপুরের মহারাজার তুতো ভাই তিনি। বিজয়েন্দ্রর মা ইনদওরের হোলকার পরিবারের রাজকন্যা। বিজয়েন্দ্রর দিদা কিন্তু মার্কিন, ন্যান্সি মিলার ওরফে শর্মিষ্ঠা দেবী।
ইনদওরের ডালি কলেজের কৃতী ছাত্র বিজয়েন্দ্র। ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরবর্তীতে পুণের ফিল্ম ইনস্টিটিউটে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
বাসু চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘চিতচোর’-এ অভিনয় করেন তিনি। সে ছবি ছিল সুপারহিট। পরে ‘সুনয়না’ ছবিতেও তাঁর কাজ অত্যন্ত প্রশংসা পেয়েছিল।
এর পর ‘কসমে ওয়াদে’, ‘রাজিয়া সুলতানা’-সহ একাধিক ছবির অফার আসে তাঁর কাছে। পার্শ্ব চরিত্রেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
৮০-র দশকে টেলিভিশনে কেরিয়ার শুরু তাঁর। ১৯৮৬-১৯৮৭ সালে বিজয়েন্দ্র অভিনীত ‘বুনিয়াদ’-কে এখনও ক্লাসিক হিসেবে ধরা হয়। এ ছাড়াও ‘কথাসাগর’, ‘বিক্রম-বেতাল’-এও অভিনয় করেন তিনি। দূরদর্শনের জনপ্রিয় ধারাবাহিকের কারণেই পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন বিজয়েন্দ্র।
‘বুনিয়াদ’-এ অভিনয় নিয়ে বিজয়েন্দ্র নাকি এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে মহাভারতের ভীষ্ম চরিত্রে কাজ করার অভিনয় ফিরিয়ে দেন। সেই কারণেই নাকি মুকেশ খন্না সুযোগ পেয়েছিলেন। এ কথা জানিয়েছিলেন অভিনেতা গজেন্দ্র চৌহান যিনি যুধিস্টিরের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
‘প্রেম রোগ’, ‘সত্তে পে সত্তা’ ছবিতে তাঁর অভিনয় অত্যন্ত পছন্দ হয়েছিল দর্শকদের।
২০০২ সালে সঞ্জয় লীল ভন্সালীর ‘দেবদাস’ ঐশ্বর্য রাইয়ের (পার্বতী) বিপরীতে ভুবন চৌধুরীর ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি।
তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল অভিনেত্রী নিকি ওয়ালিয়া, যিনি ‘ফিফটি ফিফটি’, ‘কালকূট’, ‘কোবরা’ এই ছবিগুলিতে অভিনয় করেছেন। যদিও পরবর্তীতে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের।
বিজয়েন্দ্রর বোন সঙ্গীতা ঘাটগে ছিলেন এক জন বিমানসেবিকা। ১৯৮৫ সালের ২৩ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে মাঝ আকাশে বিস্ফোরণ হয়। নাশকতার যোগসূত্রও মেলে। মন্ট্রিল থেকে দিল্লি ফিরছিল বিমানটি। সেই বিমান বিস্ফোরণে মারা যান সঙ্গীতা। বিবাহবিচ্ছেদ এবং বোনের মৃত্যু বিজয়েন্দ্রকে মারাত্মক কষ্ট দিয়েছিল। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সরবও হয়েছেন অভিনেতা।
বিজয়েন্দ্র একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁর বোনের সে দিন বিমানে ওঠার কথাই ছিল না। বিশেষ কারণে তাঁর ডাক পড়ে। বোনকে হারানোর যন্ত্রণা আজীবন রয়ে যাবে বলে বহু বার জানিয়েছেন তিনি। বোনের মৃত্যুর পর তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারকে বেশি সময় দিতে শুরু করেন বিজয়েন্দ্র। ফলে কাজের সংখ্যাও কমতে থাকে তাঁর।
বলি মহলে গুঞ্জন, ডিম্পল কাপাডিয়ার সঙ্গে বিজয়েন্দ্রর নাকি ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। বলিউডের বেশ কিছু পত্র-পত্রিকায় সে কথা প্রকাশিতও হয়েছিল।
বলিউডে প্রবেশ করার পর নজর কাড়লেও এর পর একাধিক ছবিতে তিনি কাজ করেছেন। তবে তার বেশির ভাগ ছবি মুক্তির আলো দেখেনি। প্রায় ৫০টির কাছাকাছি ছবি তাঁর মুক্তিই পায়নি।
বলিউডের অন্যতম সুপারহিট নায়িকা কাজলের ডেবিউ ফিল্মেও তিনি ছিলেন। ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সে ছবির নাম ছিল ‘বেখুদি’। রাহুল রাওয়াইলের সে ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
অভিনেত্রী সাগরিকা ঘাটগেকে অনেকেই তাঁর মেয়ে হিসেবে ভুল করেন। কিন্তু সাগরিকা রাজপরিবার সূত্রে তাঁর দূরসম্পর্কের আত্মীয়। শোনা যাচ্ছে, ফের ছোটপর্দায় ফিরতে পারেন বিজয়েন্দ্র।