এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না টেলিপাড়ায়
আর্টিস্ট ফোরাম আর ফেডারেশনের কাজিয়া তুঙ্গে। সোমবার আর্টিস্ট ফোরাম সাংবাদিক বৈঠক করে ‘বাড়ি থেকে শ্যুটিং’-এ সমর্থন জানানোর পরেই তার তীব্র বিরোধিতা করেন ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বলেন, ‘‘অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজকদের পাশাপাশি রূপসজ্জা শিল্পী, খাবার সরবরাহকারী থেকে জুনিয়র আর্টিস্টদের কথাও চিন্তা করে সংগঠন। ‘শ্যুট ফ্রম হোম’ হলে এঁরা বঞ্চিত হবেন।’’ কার্যত হুঁশিয়ারিও দেন, খুব শীঘ্রই ফোরামের বিরোধিতা করে বিবৃতি প্রকাশ করতে চলেছে সংগঠন।
সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে ফেডারেশন ১৫ পাতার একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। যেখানে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, ‘শ্যুট ফ্রম হোম’-এর নাম করে ইতিমধ্যেই ভাড়া বাড়ি, হোটেল, অতিথিশালায় শ্যুটিং হচ্ছে বিভিন্ন ধারাবাহিকের। যা নীতি বহির্ভূত। বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে ফেডারেশন। সংগঠনের দাবি, প্রয়োজনে এই কমিটি প্রশাসনেরও সাহায্য নেবে।
রাজ্যে করোনার দাপট কমাতে কার্যত লকডাউন ঘোষণার পরেই ১৬ মে থেকে স্তব্ধ টেলিপাড়া। ধারাবাহিকে নতুন পর্ব এবং দৃশ্য না দেখতে পেলে দর্শক সংখ্যা কমবে। বন্ধ হয়ে যাবে অভিনয় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত মানুষের উপার্জন। সেই ভাবনা থেকেই ইতিমধ্যে বেশ কিছু অভিনেতা বাড়ি থেকে মুঠোফোনে দৃশ্য শ্যুট করে পাঠাচ্ছেন। চ্যানেল কর্তৃপক্ষও তাতে মান্যতা দিয়েছেন। যার সরাসরি প্রতিবাদ জানিয়েছে ফেডারেশন। সংগঠনের মতে, বাড়ি থেকে শ্যুটিং করলে লাভ প্রযোজকদের।
মঙ্গলবারের বিবৃতিতেও সেই দিক তুলে ধরার পাশাপাশি ফেডারেশনের প্রশ্ন, লকডাউনের নির্দিষ্ট দিন বাড়ানোর পরেও কী করে বাড়ির বাইরে শ্যুটিং হচ্ছে? এতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অগ্রাহ্য হচ্ছে। ফেডারেশনের দাবি, ইতিমধ্যেই ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে সুশান্ত দাস, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, জি বাংলার চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কাছে। সংগঠনের অভিযোগ, একমাত্র স্নেহাশিস ছাড়া বাকিরা কোনও সদুত্তর দেননি। এবং স্নেহাশিসও সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন। কিন্তু তাঁর প্রযোজিত ‘যমুনা ঢাকি’, ‘খেলাঘর’ ও ‘বরণ’ ধারাবাহিকে বাড়ির বাইরে থেকে নেওয়া প্রচুর দৃশ্য ইতিমধ্যেই সম্প্রচারিত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ফেডারেশনের আরও বক্তব্য, এ ভাবে শ্যুটিংয়ের ফলে মান পড়ছে ধারাবাহিকের। প্রযোজকেরা বাজারের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে রূপসজ্জা শিল্পীদের অভিনেতাদের বাড়ি গিয়ে মেকআপ করার কথা বলেছেন। এতে কোভিড বিধি লঙ্ঘনের দায়ে রূপসজ্জা শিল্পীদের প্রশাসন গ্রেফতার করলে তার দায় কে নেবে? এই প্রশ্নও তুলেছে সংগঠন। সংগঠনের বিরুদ্ধে চোখরাঙানির অভিযোগ তুলেছেন প্রযোজকেরা। ফেডারেশনের পাল্টা দাবি, অতিমারি রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত নির্দেশ যথাযথ পালনের আবেদন জানানো কি চোখরাঙানির শামিল? বিবৃতি প্রকাশের পরেও বাংলা অভিনয় দুনিয়ার প্রত্যেকের পাশে ফেডারেশন আগের মতোই ছিল, আছে এবং থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরূপ। তাঁর আক্ষেপ, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার পরিবর্তে দুঃসময়ে জীবনের থেকেও বড় হয়ে দাঁড়াল বিনোদন!