সূর্য তখন প্রায় পশ্চিমের কোলে ঢলেছে। পাখিদের বাসায় ফেরার তাড়া। কিন্তু উত্তর কলকাতার এক সাতমহলা বাড়িতে পুজো পুজো গন্ধ। চারিদিকে আলোয় আলো। ঢাক বাজছে। বাড়ির বৌদের মুখ লালে লাল। লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরে সিঁদুর খেলায় মেতেছে সবাই। আর বাড়ির ছেলেদের পরনে ধুতি-পাঞ্জাবি। ভরা শ্রাবণে দুর্গাপুজো! একটু অবাক লাগছে তো! তবে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি কিন্তু পুজোর গন্ধে ম ম। কিন্তু ঢাকের আওয়াজের ফাঁকে মাঝেমাঝে শোনা যাচ্ছে লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন, কাট। আসলে বেলগাছিয়া রাজবাড়িতে ছবির সেট ফেলেছেন পরিচালক রোহন সেন।
তাঁর নতুন ছবি ‘শুভ বিজয়া’। সেই শ্যুটিংয়েই অসময়ে দুর্গাপুজো উদ্যাপনের সাক্ষী থাকল আনন্দবাজার অনলাইন। বয়স মাত্র ২২। কলেজের গণ্ডি এখনও পেরোননি রোহন। প্রথম বড় মাপের ছবি। কখনও ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি করছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়কে কখনও চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়কে। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুই প্রধান। ছেলে আদিত্য এসেছে বিদেশ থেকে। পুজোর প্রেক্ষাপটেই প্রতিটি মুহূর্তকে বুনেছেন পরিচালক। ক্যামেরার সামনে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতা, কিন্তু তাতেও কোনও টেনশন নেই। রোহন বললেন, “আমার ছবিটাকে আমি খুব ভাল ভাবে জানি। কোন শটটা নিতে হবে, কীভাবে নেব, প্রতিটা জিনিস আমার কাছে পরিষ্কার। আর কৌশিকদার সঙ্গে বেশ ভাল আলাপ জমে গিয়েছে তাই আরও চিন্তা হচ্ছে না।”
সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে কৌশিক তখন ঠিক যেন বনেদি বাড়ির কর্তাটি। বাড়ির কর্তাই তো বটে। এক দিকে যেমন পর্দার সংসার সামলাচ্ছেন। অন্য দিকে, গঙ্গোপাধ্যায় বাড়ির খুটিনাটিও তো তাঁর কাঁধেই। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে ফোনে ফোনেই চলছে বাজারহাট। পাঁচ কেজি পিঁয়াজ, চার কেজি আলু আরও কত কী।
আবার সঙ্গে রয়েছে ‘লক্ষ্মী ছেলে’র প্রচারের ব্যস্ততা। কৌশিক বললেন, “পরিচালনার ফাঁকে অভিনয় করতে আমার বেশ ভাল লাগে। একটু মানসিক চাপ মুক্ত হওয়া যায়। এখন তো বাড়তি চাপ লক্ষ্মী ছেলের মুক্তি ২৫ অগস্ট।” ছেলে উজানের থেকেও ছোট রোহন। কৌশিক বলেন, “এত ছোট ছেলে। পরিচালনা করছে, ওকে না করা যায়? খুব ভাল কাজ করছে।”
পর্দায় না হয় তিনি কর্তা কিন্তু কৌশিকের জীবনের অথবা তাঁর সংসারের সব কিছুই কিন্তু হয় স্ত্রী চূর্ণীর নির্দেশে। কৌশিকের কথায়, “আমরা চূর্ণীকে মনোনীত করেছি, কিন্তু আমি বা উজান সময় মতো ওকে দিয়ে নিজেদের কাজ করিয়ে নিই।” এই ছবিতেও মিসেস বন্দ্যোপাধ্যায় স্ত্রী চূর্ণীই। আটপৌরে শাড়িতে সম্পূর্ণ অন্য সাজে অভিনেত্রী। এই বছর আগাম পুজো উদ্যাপন বেশ ভালই লাগছে, বললেন তিনি। বিজয়া চরিত্রটার সঙ্গে দর্শকেরা অনেকেই নিজেদের মিল খুঁজে পাবেন।
চূর্ণী বললেন, “আমি অনেক দিন পরে এমন চরিত্র করছি। বাড়িতেও তো এমনটাই সামলাতে হয়। কৌশিক আর উজানকে। এখানেও তাই।” এই ছবি করতে গিয়ে কৌশিকের একটাই ইচ্ছা, যদি ধুতি-পাঞ্জাবি বাঙালিদের এই সাবেক সাজপোশাককে আবার ফিরিয়ে আনা যায়। তাহলে মন্দ হয় না।