টলিপাড়ায় ৩০ বছরের যাত্রা নিয়ে আড্ডায় ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে ফেলেছেন ৩০ বছরেরও বেশি সময়। প্রথম দিকে বেশ কিছু ছবিতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করলেও বক্স অফিস সাফল্য আসেনি তাঁর ভাগ্যে। অভিনেতা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কি তাই আক্ষেপ হয়? বর্তমানে চুটিয়ে সিরিয়ালে অভিনয় করছেন তিনি। শুটিংয়ের ফাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি ভাস্কর।
প্রশ্ন: কত বছর কাটিয়ে ফেললেন টলিউডে?
ভাস্কর: ৩০ বছরের বেশি তো বলাই যায়। ১৯৮৫-তে শুরু করেছিলাম। তার পর মাঝে অবশ্য অভিনয়টা চালিয়ে যাইনি। পেশাদার অভিনেতা হয়ে কাজ শুরু করেছি ১৯৯২ সাল থেকে।
প্রশ্ন: ৩০ বছরে কী বুঝলেন? অভিনেতা হওয়ার সিদ্ধান্ত আপনার জন্য ঠিক ছিল?
ভাস্কর: হ্যাঁ, একটাই জীবন। আমি যা পেয়েছি, তাতে খুশি। আমার যা প্রতিভা রয়েছে তার তুলনায় আমি অনেক বেশি পেয়েছি। আর আমার অভিনয়ের তো কোনও ইচ্ছাই ছিল না। খেলাধুলো নিয়েই থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভগবান যেটা লিখে রাখে সেটাই হয়। আর এখন তো কতগুলো মাধ্যম।
প্রশ্ন: আপনি যখন শুরু করেছিলেন তখন শুধু সিনেমা হত। এখন সিরিজ়, সিরিয়াল কত কিছু হচ্ছে, প্রতিটা মাধ্যমে কাজ উপভোগ করছেন?
ভাস্কর: হ্যাঁ, আসলে অভিনয়ের তো কোনও পরিবর্তন হয়নি। সিরিয়াল অবশ্য সংসার চালায়। সিরিয়াল না থাকলে তো অনেকের সমস্যা হয়ে যেত। অনেককে বাঁচিয়ে দিয়েছে এই মাধ্যম। সিনেমাতে দুটো ছবি ফ্লপ হলেও আর কেউ তোমায় খুঁজেই পাওয়া যাবে না।
প্রশ্ন: এই হিট-ফ্লপের চড়াই উতরাই দিয়ে তো আপনিও গিয়েছেন, কী ভাবে সামলেছিলেন নিজেকে?
ভাস্কর: দেখুন, আমি কোনও দিনই খুব বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলাম না। আমি উত্তম কুমার হতে চাইনি। কেউ বলতে পারবে না কোনটা হিট করবে, কোনটা ফ্লপ করবে। আমার কাজ অভিনয় করে যাওয়া। আর একা কিছু হয় না। এটা তো একটা মিলিত প্রচেষ্টা। তবে এটা ঠিক, হিরো হিসাবে আমি সত্যিই ফ্লপ।
প্রশ্ন: আপনার আক্ষেপ হয় না?
ভাস্কর: খেলাতে হার-জিৎ আছে। আমায় কিন্তু লোকে ভালোবাসে। হ্যাঁ, প্রথম দু’টো ছবি হয়তো চলেছিল। কিন্তু তার পর না চলায় আমি খেলা থেকে আউট হয়ে যাই। এত কিছুর পর কিন্তু দর্শক আমায় কটূক্তি করেন না। আর আমার মুখ দেখে তো কেউ টাকা বিনিয়োগ করবে না। আমার পোস্টার পড়লে হাউসফুল হয় কি না, সেটা তো গুরুত্বপূর্ণ। এখন তো ধারাটাই বদলে গিয়েছে। একটা সিরিয়াল করেই নায়ক-নায়িকারা হিট।
প্রশ্ন: এখন তো টলিউড ইন্ডাস্ট্রি অনেকটাই রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত। সেই চাপের মুখে কখনও পড়তে হয়েছে আপনাকে?
ভাস্কর: দক্ষিণে তো সেই ট্রেন্ড কবে থেকে। তবে রাজনীতির সঙ্গে অভিনয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। না, আমায় তো কখনও চাপের মুখে পড়তে হয়নি। এমনটা সত্যিই হয় বলে তো আমার মনে হয় না। সেটা হয় যদি লবিবাজি হয়। যেটা এখন সিনেমায় শুরু হয়েছে। আমি কাজ না জানলে রাজনীতি করি বা না করি, কিছুতেই কাজ পাব না।
রাজনীতি নিয়ে অকপট ভাস্কর। —গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রশ্ন: আপনি তো মিছিলে হেঁটেছেন...।
ভাস্কর: হ্যাঁ, হেঁটেছি তো। তৃণমূল যখন প্রথম ক্ষমতায় এল তখন বেশ কয়েক বার মিছিলে হেঁটেছি। কিন্তু কোনও স্বার্থ নিয়ে হাঁটিনি। দিদিকে ভাল লাগে। এক জন এমন লড়াকু মেয়ে। তাই সেই ভাল লাগা থেকে হেঁটেছি। চন্দন সেন, বাদশা মৈত্র তাঁরা তো বামপন্থী। কিন্তু চুটিয়ে কাজ করছে। ভাল কাজ করলে রাজনৈতিক মতাদর্শ এতটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে যাঁরা পাল্টিবাজ তাঁদের উপর আমার খুব রাগ হয়। আগের দিন সিপিআইএম আর পরের দিন তৃণমূল। এটা তো ঠিক নয়।
প্রশ্ন: কয়েক দিন আগে আপনার ছেলে ইন্দ্র খানিকটা রেগে গিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট করেছিলেন।
ভাস্কর: হ্যাঁ, ও বাচ্চা ছেলে, রেগে গিয়েছিল। আমার ওই সব রাগ হয় না। ঠিকই তো আমি বাবা, কাকা চরিত্রে অভিনয় করছি। কিন্তু আমার তো দুঃখ নেই তাতে। আমি তো এই সব প্রতিবাদও করি না। কিন্তু ছেলের ভাল লাগেনি। তাই প্রতিবাদ করেছে। তবে বাবার জন্য কথা বলেছে, সেটা ভেবেও ভাল লেগেছে।
কেন মুম্বইয়ে গেলেন না ভাস্কর? —গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রশ্ন:আপনার সমসাময়িক যিশু সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়েরা তো মুম্বই গিয়ে এখন অনেক সফল। আপনি মুম্বইয়ে চেষ্টা করলেন না কেন কাজ করার?
ভাস্কর: হ্যাঁ, ওরা অনেক বেশি সফল। না আমার কোনও আক্ষেপ হয় না। কারণ আমার হিন্দি মোটে ভাল নয়। কোনও দিন ইচ্ছাও হয়নি মুম্বই যাওয়ার তাই। আমি এখানেই ঠিক আছি। বয়স হয়ে গেল। এ বার বৌকে নিয়ে ঘুরে বেড়াব পাহাড়ে। ওরা আরও সফল হোক।
প্রশ্ন: জীবনে আর কিছু চাওয়ার আছে?
ভাস্কর: চাওয়ার কিছু নেই। ছেলে মুম্বইয়ে কাজ করছে। চেষ্টা করছি ওকে যতটা সাহায্য করা যায় আর কী। ব্যস আর কিছুই চাই না আমি। ইন্দ্র ভাল ভাবে প্রতিষ্ঠিত হোক। এটাই চাওয়া।