সুমন
প্র: আপনার প্রথম হিন্দি ছবি মুক্তির দোরগোড়ায়। বাংলা থেকে হিন্দিতে শিফট করার কোনও বিশেষ কারণ?
উ: বলিউডে গিয়েই ছবি করতে হবে, এমন কোনও আকাঙ্ক্ষা আমার ছিল না। ‘আধার’ হিন্দিতে করার পিছনে দুটো প্রধান কারণ হল— প্রথমত, গল্পের প্রধান চরিত্র ঝাড়খণ্ডের মানুষ। দ্বিতীয়ত, আধার কার্ড করানো নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়েছিল। কনসেপ্টটার একটা সর্বভারতীয় আবেদন রয়েছে। তাই শুধু বাংলায় আবদ্ধ রাখতে চাইনি। ২০১১ সালে একটা আর্টিকল পড়েছিলাম আধার কার্ড মিশন নিয়ে। একজন কৃষক বায়োমেট্রিক করাতে এসেছে, তার হাতের রেখা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ‘ইয়ার্স অব টয়েল হ্যাজ ইরোডেড হিজ় ফিঙ্গারপ্রিন্টস’— এই লাইনটা ভাবিয়েছিল আমায়। দেশের আশি শতাংশই তো এঁরা।
প্র: অনেকের মতে, সুমন ঘোষের ছবি মানেই নির্দিষ্ট দর্শকের জন্য...
উ: ইন্ডাস্ট্রিতে তো সকলেরই সহাবস্থান রয়েছে। কাউকে ছোট না করেই বলছি, শিবপ্রসাদ (মুখোপাধ্যায়)-নন্দিতা (রায়) যে ধরনের ছবি বানান, তেমন ছবি আমি বানাতে পারব না। ইচ্ছেও নেই খুব একটা। যদিও বাংলা ছবিতে কমার্শিয়ালি ওঁদের সাফল্য ও অবদান ঈর্ষণীয়। এসভিএফ-এর বাইরে গিয়ে শক্ত জমি তৈরি করেছেন ওঁরা। একই ধরনের কাস্টিংয়ে ‘বসু পরিবার’-এর চেয়ে বাণিজ্যিক ভাবে অনেক বেশি সফল ছবি ‘বেলাশেষে’। তবে অনুভব সিংহ তো চাইলেই কর্ণ জোহরের ধাঁচের ছবি বানাতে পারবেন না। দর্শক বেশি আসার জন্য যদি নিজের এসথেটিক্সের বাইরে গিয়ে ছবি করি, তা হলে সেটা নিজের সঙ্গে অসততা হবে। আমি যে ঘরানার ছবি করি, তার মধ্যে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি আমার বিশেষ পছন্দের। সৃজিতের ছবি আবার দুই ঘরানার মিশেল।
প্র: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে টুইট-বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন...
উ: এই তো সে দিনই ‘আধার’-এর ট্রেলার দেখে সৃজিত মেসেজ করল আমায়। প্রেসিডেন্সির অর্থনীতি বিভাগে ও আমার জুনিয়র। আমি ওর বড় দাদার মতো। ওই কথাগুলো ওকেই বলা যায়। ব্যক্তিগত চ্যাটে না বলে টুইটারে বলার কারণ, বহু মানুষ ওকে আদর্শ মনে করে। তাঁদের মধ্যে অনেকে ছবি তৈরির চেয়ে, ওর মতো স্টার পরিচালক হয়ে ওঠায় বেশি আগ্রহী। একটা ‘চতুষ্কোণ’ কিংবা ‘জাতিস্মর’ কী ভাবে বানাতে হবে, সেটা না শিখে যদি শুধু সৃজিতের ফিল্মমেকিংয়ের পরিসংখ্যানের প্রতি তাঁরা আকৃষ্ট হয়, সেই আশঙ্কা থেকেই ওই কথাগুলো বলা। এই কালচার কিন্তু মুম্বইয়ে নেই।
প্র: আপনার পরের ছবিও হিন্দিতে। বাংলায় আর ছবি বানাবেন না?
উ: এটা ঠিক যে, এখানে কোনও বড় প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে আমি কাজ করিনি। তাই তুলনা করা হয়তো উচিত হবে না। তবে এখানকার ইকো-সিস্টেমের সঙ্গে আমার মানিয়ে নিতে অসুবিধে হয়েছে। টাকার অভাবে ছবি শেষ করা একটা দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আসলে এখানে প্রযোজক নেই, ফিনান্সার রয়েছে। শ্রীকান্ত মোহতা ছাড়া বিশেষ কেউ ছবিটা বোঝেন না। মুম্বইয়ে আমার দুটো গল্প পরপর দুটো বড় প্রযোজনা সংস্থা লুফে নিল। বাংলায় মার্কেট ওয়র্ক করে না। তবে ‘বসু পরিবার’, ‘কাদম্বরী’র জন্যই ওখানে লোকে আমায় চিনেছে। এখানে কাজ করে যা শিখেছি, তাই নিয়েই হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়েছি। ‘আধার’-এর চিত্রনাট্যে এক জায়গায় আটকে গিয়েছিলাম। কৌশিকদা (গঙ্গোপাধ্যায়) সমাধান করে সেটার। পরমব্রত (চট্টোপাধ্যায়), অতনুদাকেও (ঘোষ) ফোন করে পরামর্শ নিই। এই প্রথম কোনও রকম আপস না করে একটা ছবি বানালাম। সে অর্থে ‘আধার’ আমার প্রথম ছবি।