সিধু
প্র: চলতি বছরটা তো আপনার জন্য খুব স্পেশ্যাল!
উ: হ্যাঁ। ক্যাকটাসের ২৫ বছর পূর্ণ হল। সেই উপলক্ষে একটি অ্যালবাম তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। তবে একটাই আক্ষেপ, এ রকম মাইলস্টোন সে ভাবে স্বীকৃতি পেল না। তবে অগস্ট পর্যন্ত সময় আছে। দেখা যাক কী হয়!
প্র: আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভদ্রতাই নাকি আপনার দুর্বলতা!
উ: খেয়াল রাখি, জনপ্রিয় হয়েছি বলে মাথা যেন না ঘুরে যায়। ‘ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ আমি...’ এই গানটিই আমার প্রার্থনা সংগীত। তবে রিঅ্যাক্ট না করার বিষয়টা ডাক্তারি পড়ার সময়েই আত্মস্থ করেছি। আমাকে আইটিইউ বা আইসিইউ-তে কাজ করতে হত। সেখানে প্যানিক করাটা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। এ জন্য অনেকেই আমাকে ‘টেকেন ফর গ্র্যান্টেড’ ধরে নেয়। তবে কখনও কখনও রিঅ্যাক্ট করে ফেলি। পটা বেরিয়ে যাওয়ার পরে ক্যাকটাসের শোয়ে নিয়মিত কয়েকটি ছেলে ঢুকে পটার নাম ধরে চিৎকার করছিল। কিছু দিন এটা চলার পরে, আমি মিডল ফিঙ্গার দেখিয়েছিলাম। পরে মনে হয়েছে, এটা না করে আমি সরাসরি পটার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টা সমাধানের চেষ্টা করতে পারতাম।
প্র: সম্প্রতি পটার সঙ্গে কাজও করলেন। আপনাদের সমস্যা কি মিটে গেল?
উ: সেই অর্থে তেমন কোনও সমস্যা ছিল না। আসলে পটার সঙ্গে প্রেম করা সহজ, কিন্তু সংসার নয় (হেসে)। তবে আমাদের সম্পর্কে কখনও তিক্ততা তৈরি হয়নি।
প্র: তা হলে কি পটাকে ফের ক্যাকটাসে দেখা যেতে পারে?
উ: একেবারেই না। আসলে ক্যাকটাসের বাকিদের সঙ্গে পটার সেই বন্ডিং নেই। ক্যাকটাসে পটা দু’বার এসে বেরিয়ে গিয়েছে। আমরা তৃতীয় বার বিচ্ছেদ দেখতে চাই না। একটা চক্ষুলজ্জা আছে তো! তবে একসঙ্গে কাজের সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই করতে চাই।
প্র: সে রকম প্রস্তাব আসেনি?
উ: একটা টিভি শোয়ের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু আপাতত মুলতুবি রেখেছি।
প্র: সেটা কি সতীর্থদের প্রতিক্রিয়া দেখে নেওয়ার জন্য?
উ: হ্যাঁ। আমরা একসঙ্গে কোন গান গাইব? আমাদের সমস্ত গানই তো ক্যাকটাসের। সেখানে তো বাকিরাও অংশীদার। আর সেটা ক্যাকটাসের বিপন্নতারও কারণ হতে পারে।
প্র: এই দীর্ঘ সফরে আপনাদের অভ্যন্তরীণ কলহ বারবারই শিরোনামে উঠে এসেছে...
উ: দেখুন, একটা ক্রিয়েটিভ টিমে ভাবনা, দর্শনের পার্থক্য হতেই পারে। তবে নিজেদের দুর্বলতা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে পারব না।
প্র: সকলে কিন্তু এ ব্যাপারে বাজির (শিবাজি পাল) দিকেই আঙুল তুলেছে?
উ: আমার দিকে আঙুল কম উঠেছে নাকি (হেসে)! এ রকমও চাউর হয়েছিল, ‘সিধু পটার মতো গাইতে পারে না।’ স্টেজে আমি ক্যাকটাসের মুখপাত্র। আমাদের অন্দরের সব কিছুই সামলায় বাজি। ফলে ও অনেকের কাছে অপ্রিয় হয়ে ওঠে।
প্র: আচ্ছা, ক্যাকটাস-ফসিলসের রেষারেষিই কি রূপম-সিধুর দ্বৈরথের কারণ? না কি ব্যক্তিগত সমস্যা রয়েছে?
উ: পটার মতোই রূপমের সঙ্গেও আমার লাভ-হেট সম্পর্ক! তবে আমাদের মধ্যে কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। রূপমের কাজের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সমীহ রয়েছে। বলতে পারি, আমাদের বন্ধুত্ব না থাকলেও নিভৃত ভালবাসা রয়েছে।
প্র: রূপমও কি আপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল?
উ: হয়তো। কিন্তু সেটার প্রকাশ দেখিনি। তবে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় দু’ পক্ষই লাভবান হয়েছি। বেসিক বাংলা গান একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে দুটো ব্যান্ডের দ্বৈরথ আমাদের কাজের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ভক্তদেরও আগ্রহী রেখেছে।
প্র: কিন্তু এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে পুরনো গানগুলোই। নতুন গান সে ভাবে নজর কাড়েনি...
উ: ঠিকই। এর মূল কারণ, দর্শকদের কাছে নতুন গান পৌঁছচ্ছে না। এফএম চ্যানেলগুলো আর আমাদের গান চালাতে রাজি নয়। এদের স্লটগুলো সিনেমার প্রযোজকেরা কিনে নিয়েছেন। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের কাজের প্রচার করছি।
প্র: একটা সময় ফিল্মের গান নিয়ে আপনি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন। কিন্তু এখন তো ছুঁতমার্গ কাটিয়ে সিনেমাতেও প্লেব্যাক করছেন...
উ: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবটাই পরিবর্তিত হয়েছে। জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তকে বাদ দিলে বাকিরা তো বাংলা বেসিক গানকেই সিনেমায় তুলে ধরছেন। সেটাই যাবতীয় বিরোধ কাটিয়ে ফিল্ম মিউজিকে মিশে যেতে অনুপ্রাণিত করল। হয়তো সময়ের দাবিই ছিল মিশে যাওয়া।
প্র: বাংলা ব্যান্ড কি বর্তমানে বিপন্ন?
উ: তা নয়। তবে গ্রাফটা পড়েছে। আমাদের শোয়ের সংখ্যাও কমে গিয়েছে। দর্শকেরও রুচির বদল ঘটেছে। এটা বাংলা ব্যান্ড মুভমেন্টের বিরোধী। পরিস্থিতি কঠিন হলেও আমি আশাবাদী, চাকা ঘুরবেই। আর ট্রেন্ডও চক্রাকারে ঘোরে!
প্র: এত শো করেছেন। কখনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন?
উ: একবার শেওড়াফুলিতে শো করতে গিয়ে চিরাচরিত স্টাইলেই জ্যাকেট ছুড়ে দিয়েছিলাম দর্শকদের মাঝে। সময়টা শীতকাল, প্রবল ঠান্ডা। শো শেষে গ্রিনরুমে ফিরতেই ঠান্ডা লাগছে। ফ্যানক্লাবের একজনকে বললাম জ্যাকেটটা নিয়ে আসতে। তখন জানতে পারলাম, একটি মেয়ে জ্যাকেটটা দিতে চাইছে না। তার দাবি, সর্বসমক্ষে চুম্বন করতে হবে। মনে মনে বিষয়টা উপভোগ করলেও, ওটা সম্ভব নাকি! শেষে ওকে জড়িয়ে ধরার পরে নিস্তার পেয়েছিলাম।