ঋষি কপূর।—ফাইল চিত্র।
বির্তকের আর এক নাম ঋষি কপূর। জাতীয়তাবাদ থেকে শুরু করে মহিলাদের প্রতি কটূক্তি, কোনও কিছুতেই তিনি হার মানেন না। বরং রোম্যান্টিক হিরোর নামের সঙ্গে এখন সমার্থক হয়ে গিয়েছে তাঁর রাগ। সম্প্রতি ঋষি কপূরের ‘পটেল কি পঞ্জাবি শাদি’ মুক্তি পেয়েছে। সাক্ষাৎকারের নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা পরে হোটেলে আসেন অভিনেতা। নিজের ঘরে গিয়ে আরাম করার পর নীচে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। শুরুতেই ফতোয়া জারি। কোনও ব্যক্তিগত প্রশ্ন নয়। এক প্রশ্ন বারবার নয়। (এই সব নির্দেশাবলি রীতিমতো বকেঝকে বলা হয়েছিল)।
প্র: দীর্ঘ সময় ধরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন। কিন্তু অন্য কোনও মাধ্যমে কখনও কাজ করেননি কেন?
উ: কেন করব? ৯০ বছর ধরে কপূর পরিবার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে। ১৯২৭ সালে আমার দাদাজি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করেন। আমার ধারণা, এটা একটা বিশ্ব রেকর্ড। ‘আ অব লওট চলে’ বলে একটি ছবি পরিচালনা করেছিলাম। মুখ্য অভিনেতা হিসেবে অবসর গ্রহণের পরেও ভগবানের আশীর্বাদে আমি একের পর এক চরিত্রাভিনেতার কাজ পেয়েছি। ১৯৯৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৩০টা ছবিতে কাজ করেছি।
প্র: এই কাজে কতটা সন্তুষ্ট আপনি?
উ: এখন আর আমি স্টার নই। কিন্তু দর্শক জানেন, আমি যে ছবিতে কাজ করব, আমার তরফে বিশেষ কিছু নিশ্চয়ই থাকবে। আজ থেকে ৩০ বছর আগে ফর্মুলা ছবি তৈরি হতো। তখন দর্শক অনেক দয়ালু ছিলেন। আমি হলফ করে বলতে পারি, আমার সঙ্গে অন্য অভিনেতারাও ৩-৪টে করে ফর্মুলা ছবি করতেন। আর সেই সব ছবি চলত। মাল্টিপ্লেক্স আসার পর ছবির সমীকরণটাও পাল্টে গিয়েছে। আর আমাদের মতো অভিনেতার এতে লাভই হয়েছে। অমিতাভ বচ্চন এই ট্রেন্ডের পথপ্রদর্শক। আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমি সেকেন্ড ইনিংসে এমন অনেক চরিত্র করেছি, যা হয়তো আজ থেকে ২৫ বছর আগে সম্ভব ছিল না। শাম্মি কপূর, রাজেন্দ্র কুমার যাঁরা নিজেদের সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ করেছেন, তাঁরা পরবর্তী কালে শুধু মাত্র বাবার চরিত্রেই কাজ করতেন।
প্র: সিনিয়র অভিনেতা হিসেবে কি মনে হয়, এই প্রজন্ম অনেক বেশি প্রফেশনাল?
উ: (রেগে গিয়ে) কোন অভিনেতা এই রকম মনে করেন, আমার সামনে নিয়ে আসুন তাকে। আমি ১৯৭২ সাল থেকে কাজ করছি। ৪৫ বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। আমি তো কারও কোলে বসে কাজ করিনি। না কাউকে অমন করতে দেখেছি। আজকের মতো আগেও লোকজন এতটাই প্রফেশনাল ছিল।
প্র: স্টারকিড হিসেবে কখনও বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছিল?
উ: (অসন্তুষ্ট হয়ে) এই সব কিছুর সূত্রপাত করেন কী যেন নাম (অবজ্ঞা করে) কঙ্গনা রানাওয়াত। আমার কাছে এর জবাব আছে। আমার আত্মজীবনীতেও এর উল্লেখ করেছি। ইন্ডাস্ট্রির সর্বপ্রথম স্টারকিড কে? রাজ কপূর। কারণ, উনি পৃথ্বীরাজ কপূরের ছেলে। উনি সফল হলেন কেন? শুধু মাত্র পৃথ্বীরাজ কপূরের ছেলে বলে? আমি সফল হলাম, কারণ আমি রাজ কপূরের ছেলে? রণবীর তার প্রতিভার জন্য আজ এই জায়গায়। নেপোটিজম করেন রাজনীতিকরা ও বড় শিল্পপতিরা। ওখানে অটো-পাইলট কনসেপ্ট চলে। একজন যান আর পরবর্তী প্রজন্ম ক্ষমতায় আসে। আমাদের অভিনেতা থেকে তারকা বানান দর্শকরা।
প্র: রণবীর কপূরের কেরিয়ারে অনেক চড়াই-উতরাই এসেছে...
উ: আমার বাবা কখনও আমার কেরিয়ারে হস্তক্ষেপ করেননি। আমিও ছেলের সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্য করি না। যদি করতাম, তা হলে ‘রকেট সিংহ...’, ‘বরফি’ বা ‘রকস্টার’ কখনও করতে দিতাম না। কোনও অভিনেতার কেরিয়ার ১০০% সুরক্ষিত হয় না। পরিবারের অনেকের ধারণা, রণবীর যে ধরনের ছবি করে, সেটা হারাকিরি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে রণবীর অনেককে ভুল প্রমাণিত করেছে। ও নিজেকে খুব ভাল ভাবে সামলাতে পারে।
প্র: রাজ কপূরের বায়োপিক বানানো প্রসঙ্গে কী বলবেন?
উ: যত দিন আমাদের মা বেঁচে আছেন, আমরা পরিবার হিসেবে কখনও কোনও বায়োপিক বানাব না। আমরা চাই না, পরিবারের কেউ আঘাত পান।
প্র: পরের ছবি কী করছেন?
উ: ‘১০২ নট আউট’। যেখানে আমি একজন ৭৫ বছরের বৃদ্ধের ভূমিকায়। আর অমিতাভ বচ্চন আমার ১০২ বছরের বাবার চরিত্রে। আমার মতে, অমিতাভ বচ্চন সবচেয়ে উচ্চমানের অভিনেতা। ওঁর সঙ্গে আমার কাজের অভিজ্ঞতা সব সময়েই ভীষণ ভাল। আমাদের যখনই দেখা হয়, তখনই আমরা ২৬ বছর আগে ফিরে যাই।