নতুনদের ফাঁকা মাঠ দিয়ে রেখেছি: প্রসেনজিত্

এখনও পরপর হিট দিয়ে যাচ্ছেন। তাও অকপটে নতুনদের থেকে কাজ চাইতে পারেন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাজের খিদে এখনও এতটাইমাঝের ছ’বছর সিগারেট একদম ছেড়েছিলেন।  তার পর চরিত্রের প্রয়োজনে হাতে ফের সিগারেট। হেসে বললেন, ‘‘পুরো গ্রাস করে ফেলল। এমন সব চরিত্র পাচ্ছি যে সিগারেট খেতেই হচ্ছে।’’ দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে চারটি সিগারেটকে ধোঁয়া হতে দেখা গেল... সঙ্গে প্রত্যয়ী আশ্বাস, ‘‘ঠিক ছেড়ে দেব।’’

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

মাঝের ছ’বছর সিগারেট একদম ছেড়েছিলেন। তার পর চরিত্রের প্রয়োজনে হাতে ফের সিগারেট। হেসে বললেন, ‘‘পুরো গ্রাস করে ফেলল। এমন সব চরিত্র পাচ্ছি যে সিগারেট খেতেই হচ্ছে।’’ দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে চারটি সিগারেটকে ধোঁয়া হতে দেখা গেল... সঙ্গে প্রত্যয়ী আশ্বাস, ‘‘ঠিক ছেড়ে দেব।’’

Advertisement

প্র: পুজো মানেই আপনি আর সৃজিত মুখোপাধ্যায় প্যাকেজে। এ বার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আসতে কেমন লাগছে?

উ: এটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হয়েছে। দুটো ছবিই বড়, দুটো নিয়েই দর্শকের আগ্রহ রয়েছে। ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ দিয়ে কৌশিকের সঙ্গে আমার হ্যাটট্রিক হতে চলেছে। ওর অভিযোগ ছিল, আমি খালি সৃজিতের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। এখন বলছে, কাজ করার পরে বুঝতে পেরেছে কেন সৃজিত আমার সঙ্গেই খালি ছবি করে যাচ্ছিল। আমার সঙ্গে কাজের কমফর্ট জ়োনটা কৌশিকও এখন উপভোগ করছে। আমিও ওর চ্যালেঞ্জগুলো উপভোগ করছি।

Advertisement

প্র: এখনও পরিচালকদের ফোন করে বলেন, আপনাকে নিয়ে গল্প ভাবতে। আবার চিত্রনাট্য পছন্দ না হলে ফের লিখতেও বলেন...

উ: ‘জুলফিকার’-এর ট্রেলারটা অমিতাভ বচ্চনকে দেখাতে গিয়েছিলাম। সৃজিতও সঙ্গে ছিল। উনি ট্রেলার দেখার পরে সৃজিতের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘মেরে লিয়ে কেয়া সোচ রহে হো’। অমিতাভ বচ্চনের এখনও এই খিদেটা রয়েছে। নিজে থেকে পরিচালকদের অ্যাপ্রোচ করেন। আমি তো নতুন আনকোরা পরিচালকদের কাছেও কাজ চাই। সৃজিতের প্রথম ছবি আমার সঙ্গে। নতুন পরিচালকদের ছবিটা পুশ করার জন্য একটা ফেস লাগে। আমার সেটা আছে। যদি মনে হয়, কাউকে দিয়ে ছবি বানানো যাবে, তা হলে তার পিছনে পড়ে থাকব। এখন পরিচালকরাও আমার কাছে লোভনীয় বিষয় নিয়ে আসছেন। আমিও ‘না’ করতে পারছি না।

প্র: ‘ইয়েতি অভিযান’, ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘দৃষ্টিকোণ’ পরপর হিট। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আপনি এখনও ঈর্ষণীয়। আত্মশ্লাঘা অনুভব করেন?

উ: নিজের বয়স অনুযায়ী কাজ করি। কখনও তিরিশ বছর বয়সের কারও চরিত্র করি না। যে কারণে সৃজিতের ‘চৌরঙ্গী’ করলাম না। উত্তমজেঠুর অনেক কম বয়সের চরিত্র ওটা। স্যাটা বোসের মতো লোভনীয় চরিত্রও ছেড়ে দিয়েছি। একই কারণে ‘হেমলক সোসাইটি’ ছেড়েছিলাম। পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে আমার তো কোনও প্রতিযোগিতা নেই। নতুনদের ফাঁকা মাঠ দিয়ে রেখেছি। খেলুক নিজের মতো। গোল দিক।

প্র: ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’ করতে রাজি হলেন কেন?

উ: এ রকম একটা চরিত্র যে কেউ ভাবতে পারে, সেটাই তো আশ্চর্যের! ছবির কনসেপ্ট শুনে বচ্চন সাহেব পর্যন্ত অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কিশোর কুমারকে কোনও একটা প্রজন্মের মধ্যে আটকে রাখা যাবে না। আর তাঁদের মতো শিল্পীকে যাঁরা টিকিয়ে রেখেছেন, তাঁরা ওই কণ্ঠী শিল্পী বা কপি সিঙ্গার। তাঁদের স্ট্রাগলটা সাংঘাতিক। যাঁর ছেলে লজ্জা পায়, বাবা কপি সিঙ্গার বলে। তবে কৌশিকের গল্পটা শুধু সেই জায়গায় আটকে থাকেনি। বাবা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়াও অন্য একটা মোচড় রয়েছে। কৌশিক যখন এগুলো বলছিল, চরিত্রটা যেন ক্রমশ আমার উপর ভর করছিল...

প্র: আপনার বাবা কিংবা ছেলের সঙ্গে এই জায়গাটায় কোনও মিল পেলেন?

উ: না, বাবার প্রতি আমার বিতৃষ্ণার কারণ অন্য ছিল। এখানে ছবিতে ছেলের কাছে, ইউ আর নোবডি। আমার ক্ষেত্রে উল্টোটা। বাবা বড় স্টার। এখানে সকলে বলত, তুমিও বম্বে যাও। একটা ট্রমাটাইজ়ড ছোটবেলা কাটিয়েছি। তখন সমাজ আরও কনজ়ারভেটিভ। বাবা-মায়ের সম্পর্ক নিয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে় জাস্ট কেঁদে ফেলতাম। ধীরে ধীরে শক্ত হলাম। কেউ বাবার কথা জানতে চাইলে সটান বলে দিতাম, উনি থাকেন না আমাদের সঙ্গে।

প্র: বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় আনন্দ প্লাসের সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আত্মজীবনীতে অনেক কিছু খোলসা করবেন...

উ: যা ইচ্ছে বলুন। এখনও সমস্যায় পড়লে আমাকে আর অর্পিতাকেই ফোন করেন। ওঁর শোয়ে কেউ আসেনি বলে অনুযোগ করছিলেন। কিন্তু ওঁকে বুঝতে হবে বিষয়টা... আগেকার দিন তো আর নেই! আমি যে ভাবে সৌমিত্রজেঠুর (চট্টোপাধ্যায়) দেখভাল করি, আগামী প্রজন্ম আমাকে সেই ভাবে দেখবে? জানি না!

প্র: আপনার ছেলে কেমন আছে?

উ: মিশুকের ক্লাস এইট হল। ফুটবল নিয়ে খুব সিরিয়াস। একদম ছিপছিপে চেহারা করে ফেলেছে। ইচ্ছে আছে, বাইরে কোথাও পাঠিয়ে দেব। তাতে পড়াশোনা, খেলা দুটোই হবে। খেলাটা সিরিয়াসলি নিলে, অন্য বাজে খেয়াল মাথায় ঢুকবে না।

প্র: নিজের প্রযোজনায় অনেক ছবি ঘোষণা করেছেন। দেব, জিৎকে নিয়ে ছবি করবেন না?

উ: কেন করব না! বাকিরা তো নিজের প্রযোজনায় নিজেরাই হিরো হয়। আমি তা করি না। জিৎকে স্ক্রিপ্ট পাঠিয়েছি। দেবের বিষয়টা আমি বলতে পারব না। আমি জানি, চিত্রনাট্য পছন্দ হলে জিৎ করবে ছবিটা। আমি নিজেও অন্য প্রযোজকদের সঙ্গে কাজ করছি। এসভিএফ-এর সঙ্গে সৃজিতের পরের ছবি ‘গুমনামী বাবা’ করব।

প্র: মানে প্রযোজক বনাম আর্টিস্ট ফোরামের ঝামেলায় যাঁদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন...

উ: দুটো আলাদা বিষয়, আলাদা সমস্যা। আমি তো এসভিএফ-এর বিরুদ্ধে নই। প্রযোজক সংগঠন মানে যারা টাকা দেয়, যারা দেয়-না সকলে আছে। কিছু কিছু প্রযোজক শিল্পীদের ৫০-৫৫ লক্ষ টাকা বাকি রেখে দিয়েছে। এটা হতে পারে না!

প্র: তাদের নাম প্রকাশ্যে আনা কিংবা ব্ল্যাকলিস্ট করা যায় না?

উ: নাম প্রকাশ্যে আনাটা শেষ অস্ত্র। আর ব্ল্যাকলিস্ট করব কী করে! ঘটনাচক্রে চ্যানেল তো ওদেরই শো দিয়ে যাচ্ছে পরপর। তবে কথাবার্তা বলে অনেকটাই সেটল করেছি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement