‘মূর্খদের মতামত দেওয়ার জায়গা হল সোশ্যাল মিডিয়া’

কলকাতায় নাসিরুদ্দিন শাহের মুখোমুখি হল আনন্দ প্লাসএই এনার্জি সংক্রামক। বাকিদেরও শটের ফাঁকে ফাঁকে নানা রকম গল্পে-আড্ডায় মশগুল রাখলেন অভিনেতা।

Advertisement

অন্তরা মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০০:০৫
Share:

নাসিরুদ্দিন শাহ।

তাঁকে অভিনয়ের পাওয়ার হাউস বললে কমই বলা হবে। নাসিরুদ্দিন শাহ এমনই একটা নাম। শৈবাল মিত্রের ‘দেবতার গ্রাস’-এ (‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ অবলম্বনে) সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই প্রথম বড় পর্দায় তিনি। নাসিরুদ্দিন রীতিমতো উত্তেজিত! কলকাতার গরমও তাঁকে কাবু করতে পারেনি। বাকিদের হাঁসফাঁস দশা দেখে অবশ্য মুচকি হেসে বললেন, ‘‘এখানে আসার আগে বিকানীর গিয়েছিলাম। সেখানে ৪২ ডিগ্রি! তাই অসুবিধে হচ্ছে না।’’ তবে গরমের দাপট কিংবদন্তি সহ-অভিনেতা সহ্য করতে পারেননি। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে চনমনে করে তোলার ব্রত নিয়ে ফেললেন যেন নাসিরুদ্দিন, ‘‘ইউ লুক অ্যাবসলিউটলি ফাইন সৌমিত্রদা... চলুন না করে নিই দৃশ্যটা!’’

Advertisement

এই এনার্জি সংক্রামক। বাকিদেরও শটের ফাঁকে ফাঁকে নানা রকম গল্পে-আড্ডায় মশগুল রাখলেন অভিনেতা। শট শুরু হতে অবশ্য অন্য ম্যাজিক। মানুষটা যেন সেকেন্ডে বদলে গিয়ে সত্তাটাকে ঢেলে দিচ্ছেন চরিত্রে। শিডিউল র‌্যাপের আগেই বসে পড়া গেল সাক্ষাৎকারে।

প্র: আরও এক বার কলকাতায়... ভাল লাগছে?

Advertisement

উ: আমার এই শহরের প্রেমে পড়তে একটু সময় লেগেছে। বাংলা ছবির শুটিংয়ে যখন প্রথম বার এসেছিলাম, তখন মেট্রো রেলের কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাট খুঁড়ে রাখা ছিল, যে যেখানে পারছে হেঁটেচলে বেড়াচ্ছে... এ সব দেখে খুব বিশৃঙ্খল মনে হয়েছিল। কিন্তু পরে অসম্ভব সুন্দর শহরটা আমাকে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে...

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্র: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কত দিনের আলাপ আপনার?

উ: পঞ্চাশ বছর। ‘অপুর সংসার’ দেখেছিলাম যখন, আমার বয়স তখন কুড়ি। তার পরে এত বছর লেগে গেল ওঁর সঙ্গে কাজ করতে। বরাবরই ওঁকে ভাল লাগত। কিন্তু তার চেয়েও বেশি হিংসে হতো। কারণ উনি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করতেন। আর আমি সকলকে বলতাম, আমাকে সত্যজিৎবাবু কখনও কোনও ছবিতে নেন না কেন! তারা আমাকে উল্টে বলত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থাকতে তোমাকে নেবে কেন!

শুটিংয়ের দৃশ্য। ছবি: নির্মলেন্দু চট্টোপাধ্যায়।

প্র: কিন্তু উনি তো আপনাকে একটি ছবিতে নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন।

উ: হ্যাঁ, ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’তে একটি রোলের জন্য আমাকে ভেবেছিলেন। পরে চরিত্রটি করেন ফারুখ শেখ। তবে সঞ্জীবকুমারের চরিত্রটায় আমাকে কাস্ট করতেই পারতেন (হাসতে হাসতে)। সঞ্জীবকুমার তো উর্দুও বলতে পারতেন না। পান খেতে জানতেন না, অঙ্গরাখা পরতে জানতেন না... বোধহয় দাবাটা ভাল খেলতেন!

প্র: ‘দেবতার গ্রাস’-এ আপনি এক জন যুক্তিবাদী উকিল, যিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়ছেন। গত কয়েক বছরে আপনি যে ভূমিকাটা পর্দার বাইরেও করে এসেছেন, এবং তার জন্য সমস্যাতেও পড়তে হয়েছে আপনাকে।

উ: সেই জন্যই বোধহয় চরিত্রটাকে এত ভাল লেগে গেল। ভেরি ওয়েল-রিটন ক্যারেক্টার। এই লোকটা কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে যে কথাগুলো বলছে, সেগুলো আমার নিজের কথা। আমাদের দেশেও তো এক জন মন্ত্রী ক’দিন আগে বলে বসলেন, বাঁদর থেকেই যে মানুষ হয়েছে, সেটা কেউ নিজের চোখে দেখেনি। সুতরাং ডারউইনের বিবর্তনবাদ মিথ্যে! এ রকম এনকারেজিং মানুষই তো দরকার আমাদের দেশে, তাই না বলুন (ব্যঙ্গাত্মক হেসে)? ‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ বা ‘দেবতার গ্রাস’ এই যুক্তিহীনতার বিরুদ্ধেই কথা বলে।

প্র: এই যুক্তিহীন তথ্য, বিভ্রান্তি, কাদা ছোড়াছুড়ি সব লেগেই আছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্বতন্ত্র ভাবনায় বাদ সাধছে ফেসবুক?

উ: সোশ্যাল মিডিয়া মানু‌ষ কেন করে জানেন? একটা স্ক্রিনে নিজের নামটা দেখতে পাওয়ার জন্য। দ্যাটস দ্য থ্রিল। আমি নিজেও অভিনেতা হয়ে পর্দায় নিজের নামটা দেখার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু যাদের কোনও কাজ নেই, সোশ্যাল মিডিয়া তাদেরও এই সুযোগটা করে দিয়েছে। লোকজনকে গালিগালাজ করা, ঘৃণা ছড়ানো, অশ্লীলতা— এগুলোই তাদের কাজ। এমনকি তার জন্য পয়সাও পাচ্ছে! মূর্খদের মতামত দেওয়ার জায়গা হল সোশ্যাল মিডিয়া... কিন্তু এত ঘৃণা মানুষের মধ্যে কী করে আসে বলুন তো? তার মানে এগুলো মনের ভিতরে জমা ছিলই। কালের নিয়মে এখন বেরিয়ে আসছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকেই দেখুন না! এমন সব কথা বলেন, আতঙ্ক হবে। তবু ওঁর একটা পিএমও আছে, সীমা লঙ্ঘন করতে পারেন না তিনি। কিন্তু এই লোকগুলোর তো কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আমাকেই কত লোক বলেছে পাকিস্তানে চলে যেতে!

প্র: বলিউডে একটা বদল আসছে...

উ: লক্ষ করবেন, বলিউডে হয় বিরাট বাজেটের ছবি হচ্ছে, না হলে কম বাজেটের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি। মাঝামাঝি কিছু নেই। বড় ছবিগুলো একের পর এক ব্যর্থ। কিন্তু তাতে কি বলিউডের কোনও শিক্ষা হচ্ছে? নাহ। এক ডজন অভিনেতাকে নিয়ে আরও বড় বড় ছবি বানিয়ে যাবে ওরা... অ্যান্ড হোপফুলি দে উইল কিপ লুজ়িং মানি (মুচকি হেসে)!

প্র: এই প্রজন্মের কোন অভিনেতাদের সম্ভাবনাময় মনে করেন আপনি?

উ: রণবীর সিংহ ইজ় ফ্যান্টাস্টিক! সবচেয়ে স্কিলফুল। আয়ুষ্মান খুরানাও খুব বুদ্ধিমান। স্ক্রিপ্ট দারুণ বাছে। রাজকুমার রাও... পঙ্কজ ত্রিপাঠী... ইরফান (খান) যে সুস্থ হয়ে ফের কাজ করছে, তাতে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement