মিতা
তাঁর কেঠো কথা শুনলে গা জ্বলে ওঠাই স্বাভাবিক। সন্দেহ আর শয়তানির জালে জড়িয়ে বহু বারই তিনি নিজে হাতে ভেঙেছেন সংসারের নানা সম্পর্ক। অবশ্য এগুলো তাঁর সুচারু অভিনয়প্রতিভার ফসল। আদতে মানুষটা অন্য রকম। যাঁর কাছে নিজের মতো চলাই শেষ কথা। তিনি মিতা বশিষ্ঠ। শহরে এসেছিলেন একটি নাটকের শো নিয়ে।
ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-র ছাত্রী মিতা যেমন অভিনয় করেছেন বলিউডের নানা পরিচালকের সঙ্গে, তেমনই ধারাবাহিকে নিজের কূটকচালিতে ভরিয়ে রেখেছেন ভারতবাসীর ড্রয়িং রুম। এনএসডি থেকে পাশ করার পরই ধারাবাহিকে এলেন কেন? ‘‘তখন থিয়েটারের তেমন সুযোগ ছিল না। পরপর ধারাবাহিক, ছবিতে সুযোগ পেয়ে গেলাম। তাই মঞ্চের বদলে প্রাথমিক ভাবে বেছে নিয়েছিলাম ক্যামেরার সামনের জায়গা,’’ জানাচ্ছেন মিতা।
তিনি অভিনয় করেছেন মণি কউল, গোবিন্দ নিহালনি, কুমার সাহানি, মণি রত্নমের মতো নির্দেশকের কাছে। অভিনয় জীবনের শুরুতেই এঁদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে ভয় লাগেনি? ‘‘আমি তৈরি ছিলাম। এটা জানতাম যে, আমি ট্যালেন্টেড। অভিনয়টাও খুব স্বাভাবিক ভাবেই এসেছিল। ওঁদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও অতুলনীয়। আমি তো এখন ওঁদের মতো অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কাজ করাটাকে মিস করি,’’ হেসে বললেন মিতা।
‘কহানি ঘর ঘর কী’তে খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করাটা যেন শাপে বর হয়েছিল। অবশ্য এর জন্য একতা কপূরের কাছে কৃত়জ্ঞ মিতা। একতা নাকি অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন মিতাকে। তাঁর করা সমস্ত ভিলেনের চরিত্রই যেন একটু আলাদা। পরদার খলনায়িকা জানাচ্ছেন, ‘‘আমি ব্যাপারটা এক রকম ভাবেই দেখতে চেয়েছি। যে চরিত্রের কোনও বাস্তবতা নেই, তাকে স্টাইলাইজ করে দাও! তাই যেখানে আমি ভিলেন, সেই সমস্ত চরিত্রে একটু কমিক এলিমেন্ট এনেছি, একটু স্টাইলাইজ করেছি।’’
যে নাটকের সম্ভাবনা এক সময় প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এখন সেই নাটকের জন্যই শহরে এসেছেন। তা হলে কি নয়া প্রজন্ম থিয়েটারের দিকে ঝুঁকছে? ‘‘এখন বেশির ভাগই সেলফি পাগল! খাবার খাও, সেলফি তোলো। জিমে যাও, সেলফি তোলো। তবে কিছু ছেলে-মেয়ে অবশ্যই নাটকের দিকে ঝুঁকছে,’’ আশা মিতার। আর লিঙ্গবৈষম্য? বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়লেন তিনি। বললেন, ‘‘এটা বুঝতে পারি না, কেন কাউকে সমান হতে হবে। ছেলে ও মেয়ে তো আলাদা। প্রত্যেকের স্ট্রেংথ আর ভালনারেবিলিটিও ভিন্ন। এটা বোঝা জরুরি। অনেক ছেলেও নির্যাতনের মুখে পড়ে। কই, সে কথা তো খুলে বলি না! আমি মনে করি, মেয়েরা ক্ষমতাশীল। নিজেদের ক্ষমতাটা আগে বুঝে নেওয়া দরকার। একজন মেয়ের কাউকে প্রয়োজন হচ্ছে, এই পরিস্থিতিটাই বা আসবে কেন? আর পাওয়ার প্লে তো চারিদিকে। তাই ‘একলা চলো’টাই প্রাসঙ্গিক।’’
সে ভাবে পুরস্কার পাননি কখনও। আক্ষেপ হয়? ‘‘মানুষ তো মরে যাবে। কিন্তু দর্শকদের মনে রয়ে যাওয়াটাই তো আসল,’’ হেসে বললেন মিতা।