পি সি সরকার জুনিয়র। নিজস্ব চিত্র।
সাক্ষাৎকার শুরুর আগে ভেবেছিলাম, প্রিল্যুড সুলভ একটু কথাবার্তা বলে নেওয়া যাবে, কিন্তু পিসি সরকার জুনিয়র বললেন, যা হবে এক্সটেম্পোর।
কিছু দিন আগেই জন্মদিন কাটিয়েছেন। জাদুকর পিসি সরকার জুনিয়রের বয়স কত হল?
দিনক্ষণ তারিখ বুঝে বলা মুশকিল, দু-তিন রকম হিসেব হয়। প্রথমটা, যখন লুকিয়ে লুকিয়ে বাবার ম্যাজিক শিখতাম। এরপর বন্ধুদের আবদার রাখতে ম্যাজিক দেখানো। তিন নম্বর হল, যখন বাবার সঙ্গে সহযোগিতা করলাম। চার নম্বর বা পোশাকি, যখন বাবা মারা গেলেন জাপানে, আমি শুরু করলাম।
এই জুনিয়র পিসি সরকার ১, ২, ৩ ও ৪-এর মধ্যে কোনটা আপনার প্রিয়?
পিসি সরকার জুনিয়র আমার প্রিয় না, আমার প্রিয় জহর, যাকে মুখে মেক আপ করতে হয় না, যাকে দুঃখ পেলেও নকল হাসি হাসতে হয় না। আমার স্ত্রীর কাছে আমি এখনও জহরদা।
আপনি তো অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজির ছাত্র, তাই আপনার কাছে জানতে চাইব স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে অবসাদ এবং স্যোশাল মিডিয়াতে রীতিমতো লাইভ ভিডিয়ো করে আত্মহত্যার প্রবণতা কেন? এর সমাধানটাই বা কী?
চটপট জনপ্রিয়তা পাওয়ার প্রবৃত্তি। ‘আমি সব জানি, আমি সব পারি’, এ রকম একটা ভাব। লোকে ভালবাসতে ভুলে যাচ্ছে, ভাবে নিজের মধ্যেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডটা। মানুষ যে সামাজিক জীব, এই ব্যাপারটাই ভুলে যায়। এই ভুলটা ভাঙলেই সে আঘাত পায়, বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পায় না, আত্মহত্যা করে।
দেখুন ম্যাজিশিয়ানের সঙ্গে র্যাপিড ফায়ার রাউন্ড:
শোনা যায়, অরণ্যদেবের মতো বংশানুক্রমে আপনারা কোনও আংটি পরেন?
বাবা বলেছেন, এটার বয়স হচ্ছে সাত প্রজন্ম (ডান হাতের অনামিকায় লাল আংটি দেখিয়ে)। এর কোনও দ্রব্যগুণ আছে কি না আমি জানি না। বাবাও সে রকম কিছু দাবি করেননি। শুধু বলেছেন, এর একটাই বিশেষত্ব, এটা আমার ঠাকুরদা বাবাকে দিয়ে গেছেন, ঠাকুরদাও তাঁর বাবার থেকেই পেয়েছিলেন। (খানিক হেসে) দেখি, এইটা কাকে দিয়ে যাওয়া যায়।
শহরতলির মঞ্চে আপনার ম্যাজিক শো দেখা গেলেও মূল কলকাতায় আপনার ম্যাজিক দেখা যাচ্ছে না কেন?
মহাজাতি সদনে শো করব বললেই লোকে বলে দুঃসংবাদ। ওখানে যাতায়াত, পার্কিংয়ের অসুবিধা। যাঁরা গাড়ি নিয়ে আসেন তাঁরা মহাজাতি সদনকে বর্জন করেছেন। সব থেকে বড় কথা, আমাদের শো আরও বড় হয়ে গেছে। মহাজাতি সদন সভাগৃহ হিসেবে তৈরি হয়েছিল। রঙ্গমঞ্চ হিসেবে খুব একটা ভাল নয়। মহাজাতি সদন বা অবৈজ্ঞানিক যে ক’টা হল আছে সেখানে দৃশ্যপট ছেঁটে ছোট করা। ব্যাক প্রোজেকশনের গভীরতাও নেই। তবে গড়িয়ার জয় হিন্দ হল বা পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চ বেশ আধুনিক হল। তাই মহাজাতি সদনেই যে করতে হবে এটা বিষয় নয়।
১৯৭২, লখনউ- প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী দেরি করলেও ঠিক সময় প্রদর্শনী শুরু করেন পিসি সরকার (জুনিয়র)। শো শেষে জাদুকরের তারিফ করেন মন্ত্রমুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী
ম্যাজিক বলতেই লোকে জানে পিসি সরকার। বাংলা থেকে অন্য কোনও জাদুকর উঠে আসছেন না কেন?
সেটা আপনাদের ভালবাসার তাগিদ আর পিসি সরকারের কৃতিত্ব। তবে শিল্পী কখনও গজায় না, এটা আবার হয় নাকি? বাংলা থেকেও জাদুকর উঠে আসছে। ম্যাজিশিয়ান ছোট-বড় অনেক আছেন। তবে প্রত্যেক বাথরুম সিঙ্গারই কি আর হেমন্ত কুমার! শুধু জাদুর জোরেই সংসার চালাবেন, এ রকম জাদুকরের সংখ্যাটা কমে গেছে। আগে যে দামে টিকিট করলে পুষিয়ে যেত এখন আর সেটা হবে না। আবার ব়়ড় প্রোডাকশনের যা খরচ, বা পরিকাঠামো দরকার সেটা আমাদের সমাজ দিতে প্রস্তুত নয়।
তা হলে কি বাংলার ম্যাজিক হারিয়ে যাবে?
না। টুকরো টুকরো হবে, কুচি কুচি হয়ে প্রকাশ পাবে। এখন তো বিজ্ঞাপন শিল্পেও ম্যাজিক ঢুকে গেছে, সিনেমাতেও বেড়েছে বিজ্ঞানের ব্যবহার। সেটাও তো ম্যাজিক।
আরও পড়ুন: প্রেম ভাঙল মানালির?
আমরা চারদিকে রাজনীতিবিদদের ম্যাজিক দেখতে পাই। আপনিও ভোটে দাঁড়ালেন, হেরে গেলেন। রাজ্যসভার মনোনীত প্রার্থী হলে ভাল হত না?
হুম। সেই যোগ্যতা আমি এখনও অর্জন করতে পারিনি। আমি লোকসভার জন্য চেষ্টা করলাম। দেখি, এগোতে যাচ্ছি পারছি না। দেখি, বিভিন্ন লোক জামা ধরে আছে আমার, ‘যেতে নাহি দিব। আপনি আমাদের জাদুকর। আপনি আমাদের মধ্যে থাকবেন, ওই গোল ঘরে গোলমাল করতে আমরা দেব না আপনাকে।’ তবে ভ্যানিশিং ট্রিক শিখতে চাই আর কিছু পলিটাশিয়ানকে ভ্যানিশ করবই।
আরও পড়ুন: পেশা বদল? মিমি এ বার চিত্রসাংবাদিক!
ভোটে হারার পর রাজনৈতিক মঞ্চে আপনি মিসিং, কেন?
আমাকে যে আর দেখা যাবে বা যাবে না ভাবলেন কী করে? সেটাই তো ম্যাজিক। আমি সময়মতো জায়গায় বলব, আই অ্যাম হিয়ার!
এই যে এনআরসি নিয়ে এত হইচই, চল্লিশ লাখ মানুষের নাম বাদ গেল, সমর্থন করেন?
(খানিক গম্ভীর হয়ে) রাজনৈতিক দিকে না গিয়েই বলছি। আমার বাবা যখন সব ত্যাগ করে ওপার বাংলা থেকে এখানে এলেন, এত হইহই করে এলেন কেন! কারণ সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল. এর মধ্যেই আসতে হবে। তুমি এখন আসবে না, পরে লুকিয়েচুরিয়ে গরু পাচারের মধ্যে দিয়ে ঢোকা, এটা ঠিক নয়। আমি যদি আজ তথাকথিত রিফিউজিদের নিয়ে ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়াই, ওরা মোটেও সমর্খন করবে না। ওই রোহিঙ্গাদের কি বাংলাদেশ নেবে? কেন নিল না রোহিঙ্গাদের? নিলে বুঝতাম, দরদ আছে। অসমকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য অনেক দিন ধরে প্ল্যান চলছে যে আরও লোক ঢোকাও, যারা এসে নিশ্চিত ভাবে ভোট দেবে।
নরেন্দ্র মোদীর সব নীতিকে সমর্থন করেন?
সব মানুষ সর্বাঙ্গসুন্দর নয়, তবে যতটুকু আমার চোখের সামনে নরেন্দ্রবাবু আছেন আমার তো খুব ভাল লাগে। আমার কিন্তু ডিমনিটাইজেশন খুব স্মার্ট লাগে। আমার কোনও অসুবিধেই হয়নি। চোরাই টাকা থাকলেই, এই নোট বাতিলে গালাগাল দিতাম। এই মনোবৃত্তি ঠিক নয়।
স্পেন থেকে উপহার পেয়েছিলেন সিংহের ছানাটি, পোষ্য কুকুরের মতো বাড়িতেই থাকত সম্রাট, সঙ্গত দিত শো-তে
ম্যাজিকে কোনও ইয়ুথ আইকন নেই কেন, সেই এক জনই পিসি সরকার?
ইয়ুথ আইকন ইমেজটা ধরে রাখার জন্য নামের সঙ্গে জুনিয়র কথাটা আটকে রেখেছি। আমি বুড়ো হলেও জুনিয়র। অনন্ত ইয়ুথ আইকন।
আপনার পর কে?
এক মুহূর্ত না ভেবেই – আমার মেয়ে। সরাসরিই বললাম।
মানেকাকে সঙ্গে নিয়ে থ্রিডি ম্যাজিক দেখাবেন বলেছিলেন, অনেক বছর হল সেই ম্যাজিক এখনও দেখলাম না?
গোটাটা এখানে এক্সপোজ করা ঠিক হবে না। তবে এটা বাবার প্ল্যান। বাবা ফিল্ম টু লাইফ খেলাটা বানিয়েছিলেন। আমি একটা টোটাল প্রোগ্রাম বানাব ওই লাইনেই। সময় লাগবে। (এই প্রথম কিছুটা আক্ষেপের সুর) এমনিতেই হল পাই না, দিলেও তিন দিন দেয়। আমাদের ট্রাক থেকে মাল নামাতেই তিন দিন লাগবে। হা হা হা...
আরও পড়ুন: ‘সৃজিত খুব এক্সাইটেড আমি ওর ছবিতে কাজ করছি বলে...’
পলক ফিরতেই আবেগঘন সাধারণ মানুষটা ভ্যানিশ! ফিরলেন সেই সদাহাস্য জাদুকর!