Sreeja Dutta Interview

ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সোজা দেবের নায়িকা! গল্প শোনালেন ‘বাঘা যতীন’-এর সৃজা

দেবের পুজোর ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় হাতেখড়ি হচ্ছে অভিনেত্রী সৃজা দত্তের। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া সৃজা প্রথম বার অভিনয়ের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।

Advertisement

উৎসা হাজরা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০০
Share:
Exclusive interview of Dev’s movie Bagha Jatin Actress Sreeja Dutta

সৃজা দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।

স্কুল-কলেজ পাশ করে তার পর একটা ঠিকঠাক চাকরি। আর পাঁচ জনের মতো এই ভাবেই নিজের জীবন গড়ার চিন্তাভাবনা করেছিলেন দমদমের মেয়েটি। কিন্তু সুযোগ কখন যে কী ভাবে আসে, সেটা তো আর বলা যায় না। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তে প্রযোজক-অভিনেতা দেবের সঙ্গে কাজ হঠাৎই সযোগ এল সৃজা দত্তের কাছে। প্রথম ছবিতেই দেবের বিপরীতে। ছবির নাম ‘বাঘা যতীন’। পরিচালনায় অরুণ রায়। এক জন কলেজপড়ুয়া আচমকা এমন সুযোগ পেলে ঠিক কেমন অনুভব করেন? সৃজার কথায় প্রকাশ পেল সেই গল্পই। এই যাত্রাটা কতটা উপভোগ করছেন সৃজা? কালো কফিতে চুমুক দিয়ে শুরু হল আড্ডা।

Advertisement

প্রশ্ন: পর পর তো সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। দেব বুঝিয়ে দিয়েছেন, কী ভাবে উত্তর দেবেন, কতটা কথা বলবেন?

সৃজা: না। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কী ভাবে কথা বলব, একটু বলে দাও। কিন্তু দেবদা আমায় বলেন আমার মন থেকে যেটা বলতে ইচ্ছা করবে, যেন সেটাই বলি। এত দিন যা যা কথা বলেছি, সবটাই আমার মনের কথা। কোনওটাই শিখিয়ে দেওয়া নয়। সবটাই আনফিল্টার্ড।

Advertisement

প্রশ্ন: নায়িকা সুলভ কী কী বিষয় এখন রপ্ত করতে হচ্ছে?

সৃজা: (অনেকটা ভেবে) এই যে এত সাজপোশাক, শাড়ি পরে থাকা— একদম অভ্যাস নেই। সারা ক্ষণ হোঁচট খাচ্ছি। আর পর পর সাক্ষাৎকার দিয়ে যাচ্ছি। মাথায় রাখতে হচ্ছে, সকলের সব উত্তর যেন ঠিক ভাবে দিতে পারি। এগুলোই রপ্ত করতে হচ্ছে।

Exclusive interview of Dev’s movie Bagha Jatin Actress Sreeja Dutta

কলেজছাত্রী থেকে অভিনেত্রী, এই যাত্রাটা কতটা উপভোগ করছেন সৃজা? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: শুনলাম, আপনার নাকি ইদানীং সব ইভেন্টেই দেরি হচ্ছে এটাও কি নায়িকাসুলভ আচরণের অঙ্গ?

সৃজা: এমা! না না, বৃষ্টি পড়লে একটু দেরি হয়ে যায়। আমি এমনিতে সত্যিই পাংচুয়াল।

প্রশ্ন: শুটিং না কি প্রচার, সিনেমার কোন দিকটা উপভোগ করছেন বেশি?

সৃজা: শুটিং করার সময়টাই বেশি উপভোগ করেছি। বিষয়টা তৈরি হওয়ার সময় প্রচুর জিনিস শেখার ছিল। সেটে কত নতুন নতুন বিষয় ছিল। আর্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে ক্যামেরার কাজ— প্রতিটা বিষয়ই আমার কাছে নতুন। তাই প্রচারের থেকে একটু হলেও শুটিং করার মুহূর্তটা আমার কাছে বেশি আগ্রহের ছিল। যদিও প্রচারের দিকটাও আমার কাছে নতুন। আসলে দুটো দিকই আলাদা। কাকে ছেড়ে কাকে এগিয়ে রাখি, বলা খুব কঠিন।

প্রশ্ন: আপনার চরিত্রটি ‘ইন্দুবালা’। কিছু দিন আগে এই একই নামের একটি ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। তুলনা টানা হলে কী করবেন?

সৃজা: তুলনা টানা হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, চরিত্রের নাম এক হলেও গল্প এবং চরিত্রের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। আমি দেখেছি ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। আমার শুভশ্রীদিকে দারুণ লেগেছে। একটা জিনিস ভেবে ভাল লাগছে যে, এই ‘ইন্দুবালা’ নামটা যে ভাবেই হোক বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তবে আমার মনে হয়, এটা নিয়ে কোনও তুলনা হওয়া উচিত না।

শুটিং না কি প্রচার, সিনেমার কোন দিকটা বেশি উপভোগ করছেন সৃজা? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: যেমন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, দেবের সঙ্গে প্রথম শট দিতে গিয়েও কি এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?

সৃজা: একদমই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। দেবদা, ক্যামেরা সেটের এত মানুষকে দেখে ভয় তো লেগেছিল। তবে একটা-দু’টো শট দেওয়ার পর ভয়টা কেটে যায়।

প্রশ্ন: কটা টেক দিয়েছিলেন?

সৃজা: অরুণদা (অরুণ রায়) বেশি টেক নেন না। একটা-দু’টো টেকের পরই বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, কোথায় ভুল হচ্ছে। ফলে খুব বেশি টেক আমায় দিতে হয়নি।

প্রশ্ন: অনেক আগেই বাবাকে হারিয়েছেন। জীবনের এই নতুন অধ্যায় পা রেখে তাঁর কথা মনে পড়ছে?

সৃজা: হ্যাঁ, বাবাকে তো মনে পড়ছেই। আমার বাবা পড়াশোনাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। জানি না, বাবা থাকলে এই বিষয়টাকে কতটা সাপোর্ট করতেন। উনি পড়াশোনা নিয়েই থাকতেন। তবে মা সব সময় আমার পাশে ছিল এবং আছে। এই সময় বাবার থেকেও আমি মিস্‌ করছি দাদুকে। তাঁর কাছেই আমি বড় হয়েছি। বাবা যখন ছিলেন, তখন দেখা হত তাঁর সঙ্গে। কিন্তু আমরা যে হেতু আলাদা থাকতাম মাঝে মাঝে দেখা হত। কিন্তু দাদুই সব ছিল আমার। বাবা আর দাদু থাকলে দু’জনের থেকেই জানতে চাইতাম, কেমন লাগছে তাঁদের আমায় পর্দায় দেখে।

প্রশ্ন: প্রথম নায়িকা হিসাবে এমন সুযোগ অনেকে পান না। সুযোগের অভাবে নানা রকম নেতিবাচক প্রস্তাবেরও সম্মুখীন হতে হয়। সব ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আপনি?

সৃজা: আমার অনেক ছোটবেলা থেকে এই ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তখন থেকেই আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম নিজের আদর্শে অনড় থাকব। তাতে যতটা সাফল্য পাই, সেটুকুতেই আমার হবে। নিজেকে খুশি রাখার জন্য এই কাজটা করা। তা ছাড়া পরিবার আমার উপর ভরসা করে বলেই এই কাজটা করছি। তাই সেই ভরসাটা কখনও ভাঙতে চাই না।

সৃজার অনুপ্রেরণা কে? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: আপনার আদর্শ কী?

সৃজা: ভাল করে কাজ করতে চাই। সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। ব্যস, এর বাইরে আর কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না আমি। ভাল কাজ করাই আমার লক্ষ্য। আর বিতর্কের মাধ্যমে আমি জনপ্রিয়তা চাই না। মানুষ যেন আমায় কাজের মাধ্যমে চেনে।

প্রশ্ন: ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে সাধারণত ক্যাম্পাসিং হয়আপনি বসবেন?

সৃজা: না। আমি চাকরির জন্য কখনও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িনি। আমার বরাবর টেকনিক্যাল ডিগ্রির ইচ্ছা ছিল। কারণ, এর পর আমার এমবিএ করার ইচ্ছা ছিল। তাই মনে হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে আমার সুবিধা হবে। সেই সূত্রেই এই পড়াশোনা।

প্রশ্ন: আপনার অনুপ্রেরণা কে?

সৃজা: মানুষ হিসাবে সু্স্মিতা সেনকে আমার খুব ভাল লাগে। তবে মানুষী চিল্লরের যাত্রাটাও খুব অনু্প্রেরণা যোগায় আমায়। উনিও তো চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলেন। উনিও তো সব সামলে এগিয়েছেন। পড়াশোনা এবং অভিনয় দু’টোই ভাল করে করতে চাই।

প্রশ্ন: আপনার কথা শুনে মনে হয়, ব্যক্তিগত জীবনে বেশ লড়াই করতে হয়েছে...

সৃজা: :ছোট থেকেই মানসিক ভাবে আমায় অনেক বেশি লড়াই করতে হয়েছে। তাই ছোট থেকে আমি প্রস্তুত। কম বয়স থেকেই অনেক কিছু দেখে বড় হতে হয়েছে আমায়। পারিবারিক সমস্যা ছিল, যেটা আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের ছোটবেলায় থাকে না। তাই হয়তো আমি এতটা পরিণত। আমার আত্মবিশ্বাসের নেপথ্যে রয়েছে ছোটবেলার সেই লড়াই। তাই আমার মনে হয় স্ট্রাগলকে আনন্দ সহকারে মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়, সেটাই জীবন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement